বিদেশি সংস্থা ও মিডিয়ায় বাংলাদেশের জয়গান

বিদেশি মিডিয়া সংস্থা--ফাইল ছবি।

বিদেশি সংস্থা ও মিডিয়ায় বাংলাদেশের জয়গান

দেবদুলাল মুন্না

বাংলাদেশের বয়সে মাত্র ৫৩ । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছে। আজ বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল।

বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অবাক বিস্ময় প্রকাশ করেছে পুরো বিশ্ব। বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন সংস্থার লেখায় ও কথায় বাংলাদেশ নিয়ে তাদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসাও করেছেন অনেকে বিভিন্ন ফোরামে।  তেমনই কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য নিয়েই স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এই আয়োজন।
 

বিশ্বব্যাংক
জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের দেয়া জ্ঞান ও অর্থ বাংলাদেশকে আজকের অবস্থায় আসতে প্রচুর সাহায্য করেছে। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার অভাবনীয় গল্প’ শিরোনামে একটি এন্ট্রি রয়েছে, যাতে স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি ধারাবাহিক বর্ণনা দেয়া হয়েছে। লেখাটিতে বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয় তখন এটি বিশ্বের দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ ছিল। তখন থেকে দেশটির দারিদ্র্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। শুধু তাই নয় বরং শিক্ষার হারের দিক দিয়েও বাংলাদেশ দারুণ উন্নতি সাধন করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত করেছে দেশটি, এবং এসকল বিদ্যালয় থেকে শিক্ষিত হয়ে হাজার হাজার নারী দক্ষ কর্মী হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে চলেছে। নারী এবং শিশু মৃত্যুহার অনেকটাই কমে এসেছে, এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধেও দেশটি সহনশীলতা অর্জন করেছে। “ 

উন্নত দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করে লেখাটিতে বলা হয়, “জন্মলগ্ন থেকে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে দেশটিকে, কিন্তু দিনশেষে বাংলাদেশের জনগণের অধ্যবসায় এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সাথে অংশীদারিত্বের সুফল পেয়েছে দেশটি। উন্নয়নের যাত্রায় বাংলাদেশ এখন আর একা নয়, বিশ্বব্যাংকও এই যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক। “ 

বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে থাকা একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ। ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে একটি লেখা প্রকাশ করে, যেখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়। লেখাটিতে বলা হয়, “২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৯ শতাংশের চাইতে অনেক বেশি। এই দূর্দান্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনের মতো এশিয়ার অনেক প্রতিযোগী দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার, যা ভারতের চেয়েও বেশি। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। “ 
বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে লেখাটির সমাপ্তিতে বলা হয়, “বিশ্বব্যাপী অস্থির সময়ের মধ্যেও বেশ ভালোভাবেই অর্থনৈতিক সংকটকে মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। আমাদের পূর্বাভাস হচ্ছে বাংলাদেশের সামনের দিনগুলো খুবই সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় পাশে থাকবে বিসিজি। “ 

সিএনএন
‘টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণ’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন একটি লেখা প্রকাশ করেছিল, যেখানে বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের গল্প তুলে ধরা হয়েছিল। লেখাটিতে বলা হয়, “স্বাধীনতার পরে সংঘটিত দূর্ভিক্ষ থেকে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী কৃষিখাতে নিযুক্ত, এবং দেশটির জিডিপির ১৪ শতাংশের যোগান দেয় এই খাতটি। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়া বাংলাদেশে এখন চাল, মাছ, মাংস এবং শাক-সবজি উদ্বৃত্ত থাকে, এবং নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর দেশটি বেশকিছু খাদ্যপণ্য বিদেশে রপ্তানিও করে থাকে। এভাবেই বাংলাদেশ জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ‘জিরো হাঙ্গার’ অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। “ 

বিবিসি
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি ‘মোবিলাইজিং বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ নামে একটি লেখা প্রকাশ করেছিল, যেখানে তরুণ জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে কিভাবে বাংলাদেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে সেই বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়। লেখাটিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর পরিমাণ মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ। এদের মধ্যে চার কোটি হচ্ছে শিক্ষার্থী, এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তির হার যথাক্রমে ৯৭ শতাংশ ও ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশ যদি তরুণ প্রজন্মের এই বিপুল সংখ্যক সদস্যকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান দিয়ে যোগ্য ও স্মার্ট নাগরিকে পরিণত করতে পারেই তবেই দেশটির পক্ষে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে। “

আল জাজিরা
অধিকাংশ সময় বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করা কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর এক লেখায় তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে আল জাজিরা বলেছিল, “অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে শেখ হাসিনা একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার ভাষ্যমতে, একটি অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা বিনির্মানে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি অর্জন করেছে এবং এই ধারা সামনের দিনগুলোতেও বজায় থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। “ 
২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজ অব্দি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এমন কোনো খাত নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক পরিসরেও বিভিন্ন সময়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।  

ফোর্বস
মার্কিন প্রভাবশালী সাময়িকী ‘ফোর্বস’-এর চলতি বছর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছরের মতো এবারও তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৬তম স্থানে রয়েছেন। ২০২৩ সালের তালিকায় ছয়টি শ্রেণির মধ্যে রাজনীতি ও নীতি শ্রেণিতে নাম রয়েছে শেখ হাসিনার। ‘ফোর্বস’-এর এবারের তালিকায় রাজনীতি ও নীতি শ্রেণিতে ১৮ ক্ষমতাধর নারী স্থান পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নবম স্থানে রয়েছেন ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা।

 ব্লুমবার্গ
ব্লুমবার্গের টেকসই তালিকায় জায়গা করে নিল ৭ বাংলাদেশি কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো হচ্ছে— ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, ব্র্যাক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও গ্রামীণফোন। সারা বিশ্বের ১৬ হাজারের বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্থান পেয়েছে এই তালিকায়। আন্তর্জাতিক ইকুইটি বাজার মূলধনের ৯৩ শতাংশের বেশি এই কোম্পানিগুলোর দখলে।

টাইম ম্যাগাজিন
২০২৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনের কাভারে স্থান পেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ম্যাগাজিন টাইম ম্যাগাজিনের কভার ছবিতেই দেখা গেল শেখ হাসিনাকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বিস্ময়কর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি বিগত এক দশকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ’ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাপক উত্থান ঘটিয়েছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার পর পুনরায় ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় অবধি ক্ষমতায় থাকা বিশ্বের দীর্ঘতম নারী পরিচালিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ইসলামপন্থী ও  সামরিক বাহিনী-উভয়কেই দমন করার কৃতিত্ব রয়েছে হাসিনার। মার্গারেট থ্যাচার বা ইন্দিরা গান্ধীর থেকেও বেশি সংখ্যক নির্বাচনে জয়লাভের পর শেখ হাসিনা আগামী জানুয়ারিতেই ফের ব্যালট বাক্সের যুদ্ধে নামবেন। ফের একবার ক্ষমতায় ফিরতে বদ্ধপরিকর হাসিনা। টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী যে জনগণ আমার সঙ্গে রয়েছে। তারাই আমার মূল শক্তি”।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 
বিশ্ব স্বাস্থ্য প্রধান টেডরস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের সফলতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এ মহামারির ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘গ্লোবাল কোভিড অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে নিজ দেশের আগ্রহের কথা জানান ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।  সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত আরও তথ্য রয়েছে।  

news24bd.tv/ab/ ডিডি