আল্লাহর ঘোষণা, বিপদের পরই সুদিন আসে। এটি আল্লাহর বড় নেয়ামত। এর মাধ্যমে পৃথিবীতে বিপদগ্রস্ত মানুষকে প্রশান্তি দান করেন, মানসিক স্বস্তি ও শান্তি দান করেন। ইসলাম নানাভাবে মুমিনের মনোবল ধরে রাখার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
মুমিনের চোখে বিপদ-আপদ
মুমিনের জীবনে বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবেই আসে। তাই সে ধৈর্যের সঙ্গে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করে। আর বিনিময়ে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান আশা করে।
সুদিন আসতে পারে হতাশার পরও
পার্থিব উপায়-উপকরণ যখন শেষ হয়ে যায় এবং বাহ্যিক কোনো আশা থাকে না, তখনো সুদিনের সূচনা হতে পারে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা এমনটিই শিক্ষা দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলল, ভয় কোরো না, আমরা তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। সে বলল, তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ আমি বার্ধক্যে উপনীত হওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কী বিষয়ে সুসংবাদ দিচ্ছ? তারা বলল, আমরা সত্য সংবাদ দিচ্ছি, সুতরাং তুমি হতাশ হয়ো না।
সে বলল, যারা পথভ্রষ্ট তারা ছাড়া আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৫৩-৫৬)
নিরাশা পাপ
আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া পাপ। কেননা বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ১৯৭০১)
এছাড়া তা আল্লাহর নির্দেশপরিপন্থী। কেননা তিনি বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিয়ই জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো অবিশ্বাসীরা ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮৭)
সুদিনের আশা ইবাদত
পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহ তাঁর রহমত ও দয়া থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। ’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৫৩)
উল্লিখিত আয়াত ও তার সমার্থক আয়াত ও হাদিসের আলোকে প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, সুদিনের আশা করা ইবাদত। কেননা আল্লাহ নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ সুদিনের আশা করতে বলেছেন। আল্লাহর যেকোনো নির্দেশ পালন করা ইবাদত।
আশা যেভাবে বেঁচে থাকে
নিম্নোক্ত কাজের মাধ্যমে মুমিন তাঁর আশা বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
১. আল্লাহর প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখা: মুমিন মহান আল্লাহর প্রতি নিজের বিশ্বাস অটুট রাখে যে আল্লাহ অবশ্যই আমাকে বিপদমুক্ত করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘বরং তিনি, যিনি অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদাপদ দূর করে দেন আর পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো মাবুদ আছে? তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো। ’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬২)
২. চেষ্টা অব্যাহত রাখা: মুমিন দুর্দিন কাটিয়ে তুলতে নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। কখনোই নিরাশ হয়ে চেষ্টা ছেড়ে দেয় না। যেমন দুই সন্তান হারানো বৃদ্ধ নবী ইয়াকুব (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহর রহমত থেকে তো অবিশ্বাসী ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮৭)
আয়াতে ইয়াকুব (আ.) দুই ভাইয়ের সন্ধানে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।
৩. ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করা: মুমিন সুদিন ও দুর্দিন উভয় অবস্থায় ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করে। সে সুদিনে অহংকার না করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় এবং দুর্দিনে হতাশ না হয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। সে সেসব অবিশ্বাসীদের মতো করে না, যাদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে যখন কোনো নিয়ামত দিই, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে!’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮৩)
৪. সুদিনের অপেক্ষা করে: মুমিন দুর্দিনে সুদিনের আশা করার মাধ্যমে নিজের হতাশা দূর করে এবং আশা ধরে রাখে। কেননা আল্লাহই বলেছেন, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। ’ (সুরা : আলাম নাশরাহ, আয়াত : ৫-৬)
৫. সুদিন বেশি দূরে নয়: জীবনের কঠিন সময়গুলো রাতের মতো। কিন্তু রাত দীর্ঘস্থায়ী নয়, বরং তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গত হয়। পবিত্র কোরআনে লুত (আ.)-কে তাঁর অত্যাচারী ও পাপী সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত কাল। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়?’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৮১)
ভালো মানুষেরও বিপদ হয় কেন
অনেকেই বলেন, ভালো মানুষের এত বিপদ হয় কেন? নিম্নোক্ত হাদিসে এর উত্তর রয়েছে, মুসআব ইবনে সাআদ (রহ.) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাআদ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন, নবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৮)
লেখক: মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
news24bd.tv/DHL