দুর্ঘটনায় নিহত মুমিনের জন্য বিশেষ পুরস্কার

দুর্ঘটনায় নিহত মুমিনের জন্য বিশেষ পুরস্কার

 মাইমুনা আক্তার

সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নি দুর্ঘটনায় বহু হতাহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। এই দুঃখজনক ঘটনায় কোনো পরিবারের একাধিক সদস্য নিহত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। শোকাহত করেছে। তাদের স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারো জানা নেই। তবে প্রিয় নবীজি (সা.)-এর ভাষায়, অগ্নিকাণ্ডে নিহত মুমিন ব্যক্তির জন্য বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা তাদের কষ্টকে কিছুটা লাঘব করবে বলে আশা করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পিতা জাবের (রা.)-কে তাঁর রোগশয্যায় দেখতে গেলেন।

তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে কোরো না, এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃতও শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তিও শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তিও শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিও শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তিও শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সে-ও শহীদ...। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১)

সুবহানাল্লাহ, মহান আল্লাহ কত দয়ালু। মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যখন সময় আসবে তখন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। সময়ের এক মুহূর্তে আগেও কেউ তাকে মারতে পারবে না। তবে কারো মৃত্যু যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বা কঠিন রোগে হয়, মহান আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে শাহাদাতের মতো অতি সম্মানের মর্যাদা দিয়ে দেন।
উল্লিখিত হাদিসটি ইবনে মাজাহ শরিফে এসেছে এভাবে, জাবের বিন আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সা.) তাকে দেখতে আসেন।

জাবের (রা.)-এর পরিবারের কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। ’ (ইবনে মাজাহ : ২৮০৩)

তাই এই দুর্ঘটনায় যারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন, তাঁদের উচিত, নবীজি (সা.)-এর এই সুসংবাদ জানার পর ধৈর্য ধারণ করা, মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর রাজি থাকা। আল্লাহর কাছে নিহত স্বজনদের মাগফিরাতে দোয়া করা। গোটা দেশবাসীর দায়িত্ব দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য দোয়া করা। এমন ঘটনা থেকে আল্লাহ যেন সবাইকে রক্ষা করেন, সে জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া। মহান আল্লাহ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত মুমিনদের শহীদী মর্যাদা দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনদের ধৈর্য ধারণের তাওফিক দান করুন এবং তাদের উত্তম প্রতিদান দিন।