অসহনীয় হচ্ছে রাজধানীর শব্দ দূষণের মাত্রা

সংগৃহীত ছবি

অসহনীয় হচ্ছে রাজধানীর শব্দ দূষণের মাত্রা

অনলাইন ডেস্ক

তিলোত্তমা ঢাকা রাজধানী হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে এ শহরে। রাজধানীর বিশাল জনসংখ্যাকে সামাল দিতে প্রতিনিয়ত কর্মব্যস্ত থাকে যানবাহন। তাইতো স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হয় এই শহরে। রাজধানীর সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে 'নীরব এলাকা' ঘোষণা দেয়া হলেও শুধুমাত্র দিনের বেলায় নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে এখানে।

অন্যান্য বেশ কিছু নীরব এলাকায় রাত এবং দিন মিলিয়ে আড়াই গুণের বেশি শব্দ হচ্ছে। তাহলে যদি সরকার ঘোষিত এলাকাতেই শব্দদূষণের পরিমাণ হয় এতো বেশি, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে ব্যস্ততম এলাকার অবস্থা কিরকম।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সাম্প্রতিক এক জরিপে রাজধানীর শব্দদূষণের ওপরের চিত্র উঠে এসেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।

গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

পরিজার এক জরিপে দেখা গেছে, নীরব এলাকায় দিনে শব্দের মাত্রা সাধারণ মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণের বেশি এবং রাতে তা আড়াই গুণের বেশি থাকছে।
আবাসিক ও মিশ্র এলাকায় দিনে দেড় গুণ এবং রাতে দুই গুণের বেশি শব্দ হয়। যদি বাণিজ্যিক এলাকার কথা ধরা হয় তাহলে দিন ও রাতে নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি শব্দ হচ্ছে। জরিপে উঠে এসেছে শব্দদূষণের প্রধান উৎস যানবাহন চলাচল ও হর্ন, নির্মাণকাজ, কলকারখানার যন্ত্রপাতি চলা, গান বাজানো, জেনারেটর চালু রাখা ইত্যাদি।

২০০৬ সালের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় বিভিন্ন এলাকাকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক ও শিল্প শ্রেণিতে ভাগ করে এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ওই বিধিমালার আওতায় হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এবং এর চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫০ ডেসিবল ও রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪০ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল এবং বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল গ্রহণযোগ্য মাত্রা। শিল্প এলাকায় শব্দের মানমাত্রা দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবল।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা যেমন মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদ গেট, বাংলামটর, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমণ্ডি, আগারগাঁও, সচিবালয় এলাকাসহ ঢাকা মহানগরীর ৪৪টি স্থানে এই জরিপ পরিচালনা করে পরিজা।

এর ফলাফলে বলা হয়েছে, নীরব হিসেবে নির্ধারিত এলাকাগুলোর মধ্যে দিনে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয় সচিবালয় এলাকায়। সেখানে দিনের বেলা ১০১.৭ ডেসিবল শব্দ রেকর্ড করা হয়, যা নির্ধারিত মানমাত্রার দ্বিগুণ। অন্যদিকে রাতে সবচেয়ে বেশি ১০১.৫ ডেসিবল শব্দ পাওয়া গেছে ধানমণ্ডি ল্যাবএইড হাসপাতাল এলাকায়, যা নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি।

নীরব এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিনের শব্দের মাত্রা ছিল ৮৪.৫ থেকে ১০১.৭ ডেসিবল। রাতে তা ৯৬.৪ থেকে ১০১.৫ ডেসিবলের মধ্যে। আবাসিক এলাকায় দিনে ৮২ থেকে ৯১ ডেসিবল ও রাতে ৮৩ থেকে ৯১ ডেসিবল পাওয়া গেছে। বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা ছিল দিনে ৯২ থেকে ৯৭ ডেসিবল ও রাতে ৯১ থেকে ৯৯ ডেসিবল।

শব্দদূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কর্মকর্তা নিয়োগ ও আইনের বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সভাপতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোশতাক হোসেন বলেছেন, শব্দদূষণের ফলে যে শুধু মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয় তা নয়, বরং এটি বিভিন্ন জটিল রোগ বহন করে নিয়ে আসে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ৬০ ডেসিবল শব্দে মানুষের শ্রবণশক্তি সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেখানে ১০০ ডেসিবল শব্দে মানুষ তার শ্রবণশক্তি চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারে। এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরীর ৫০ শতাংশ মানুষ ৩০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ শোনার ক্ষমতা হারাতে পারে।

জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থার (ইউএনইপি) গত বছরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল ৬১টি দেশের মধ্যে শব্দদূষণের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।

news24bd.tv/SC