নবীজির নির্দেশনা লিখে রাখতেন যারা

নবীজির নির্দেশনা লিখে রাখতেন যারা

 মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

জাহেলি যুগের মানুষ লেখালেখি অপমানজনক মনে করত। এ রীতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেও অব্যাহত ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বপ্রথম এই চিরাচরিত মনোভাব দূর করার উদ্যোগ নেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু সাঈদ ইবনুল আস (রা.)-কে মদিনাবাসীদের লিখনবিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।

(ইবনুল আসির, উসদুল গাবাহ ফি মারিফাতিস সাহাবাহ, ৩/২৬৩)

বদরের যুদ্ধের বন্দিদের মুক্তির একটি শর্ত এটাও ছিল যে তাদের প্রত্যেকে (যারা লিখতে জানে) ১০ জন করে নিরক্ষর মুসলমানকে লেখনীবিদ্যা শিক্ষা দেবে। (ইবনু সাদ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ২/১৬)

ফলে মহানবী (সা.)-এর উৎসাহে মদিনায় একদল লেখকের সৃষ্টি হয়েছিল, যাঁদের সংখ্যা ছিল ৫০-এর বেশি। তাঁদের মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন আলী ইবনু আবি তালিব (রা.), ওসমান ইবনু আফফান (রা.), জায়েদ ইবনু সাবিত (রা.), উবাই ইবনু কাব (রা.), মুআবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান (রা.) প্রমুখ। এঁরা বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখির জন্য দায়িত্বশীল ছিলেন।

এ ক্ষেত্রে কয়েক শ্রেণির লেখক দেখা যায়। যেমন—

(ক) কোরআন সংকলনকারী লেখক।

(খ) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ সংকলনকারী লেখক।

(গ) শাসক ও রাজন্যবর্গের কাছে পত্র-প্রেরণের জন্য লেখক।

(ঘ) সন্ধিচুক্তি ও দাপ্তরিক চিঠির লেখক।

(ঙ) আরবের বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে চিঠি আদান-প্রদানকারী লেখক প্রভৃতি।

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-থেকে যা কিছু শুনতাম, তা লিখে রাখতাম। এর দ্বারা আমি তা সংরক্ষণ করতে চাইতাম। কিন্তু কুরাইশরা আমাকে এটা করতে নিষেধ করল এবং বলল, তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে যা-ই শোন তা-ই লেখ, অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন মানুষ।

তিনি কখনো রাগ অবস্থায় কিংবা কখনো প্রশান্ত অবস্থায় কথা বলেন। তখন আমি লেখা থেকে বিরত হলাম এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিষয়টি অবহিত করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি লেখ। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমার মুখ থেকে সত্য ছাড়া কিছুই বের হয় না। (তাকয়িদুল ইলম, পৃষ্ঠা ৮০)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উক্ত নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রা.) হাদিসের একটি সংকলন তৈরি করেছিলেন, যা ‘সহিফা সাদিকাহ’ নামে পরিচিত।

ওয়াইল বিন হাজর (রা.) ইয়েমেন থেকে নবীজি (সা.)-এর খিদমতে আসেন এবং দেশে ফেরার আগে তিনি মহানবী (সা.)-কে অনুরোধ করেন—‘উকতুব লি ইলা কওমি কিতাবান’ আমার জন্য একটি কিতাব লিখে দিন, যাতে আমার গোত্রকে সম্বোধন করা হয়েছে। নবীজি (সা.) মুআবিয়া (রা.)-কে দিয়ে তিনটি খসড়া লিখিয়েছিলেন। তন্মধ্যে একটি ছিল ওয়াইল বিন হাজর (রা.)-এর ব্যক্তিগত সমস্যা সম্পর্কে, অন্য দুটি খসড়া ছিল নামাজ, জাকাত, মদ নিষিদ্ধকরণ, উশর ও অন্যান্য বিষয়ে শরয়ি বিধানসংবলিত। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা ২৮)

মুস্তফা আল-আজাফি মোট ৪৮ জন লেখকের নাম ও পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন। [ড. মুসতফা আল-আজামি, কুত্তাবুন নাবী (সা.)]

এখান থেকে প্রতীয়মান হয়, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই তাঁর বাণী অনানুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর লেখকরাই ছিলেন এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালনকারী।

এই রকম আরও টপিক