পবিত্র কোরআনের ৭৪ নম্বর সুরা মুদ্দাসসির। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৫৬টি। প্রথম আয়াতের মুদ্দাসসির শব্দ থেকে সুরাটির নামকরণ হয়েছে।
এ সুরায় রাসুল (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির প্রথম কর্মসূচি, কিয়ামতের বর্ণনা ও মক্কার কাফিরদের ঈমান না আনার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে অবতীর্ণ হওয়া সুরার মধ্যে এটি অন্যতম। এ সুরার মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর কাছে ওহি অবতীর্ণ না হওয়ার কষ্ট লাঘব করা হয়েছে।
সর্বপ্রথম অবতীর্ণ আয়াত
রাসুল (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুয়তপ্রাপ্ত হয়েছেন।
রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি হেরা গুহায় ইতিকাফ করেছিলাম। ইতিকাফ শেষ হলে আমি সেখান থেকে অবতরণ করে উপত্যকার মধ্যে পৌঁছলে আমাকে আওয়াজ দেওয়া হলো। আমি তখন সামনে, পেছনে, ডানে ও বাঁয়ে তাকালাম।
দেখলাম, সে ফেরেশতা আসমান ও জমিনের মধ্যস্থলে রক্ষিত একটি আসনে বসে আছে। এরপর আমি খাদিজা (রা.)-এর কাছে এসে বললাম, আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করো এবং আমার শরীরে ঠাণ্ডা পানি ঢালো। তখন আমার প্রতি অবতীর্ণ করা হলো—হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! ওঠো, সতর্কবাণী প্রচার করো। তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৬৩)
ওহির বিরতিকাল সমাপ্ত
সুরা আলাকের প্রথম আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পর দীর্ঘদিন কোরআন অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকে। এর পেছনে বিশেষ হিকমত ও রহস্য লুকিয়ে আছে। ওহি বন্ধ থাকায় রাসুল (সা.) ভীষণ অস্থিরতা ও হতাশার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এরপর হঠাৎ একদিন জিবরাইল (আ.) সুরা মুদ্দাসসির নিয়ে আসেন। ওহির বিরতিকাল সমাপ্ত হয়ে পরপর ওহি নাজিল হওয়া শুরু হয়।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.) থেকে শুনেছি। তিনি ওহি বন্ধ থাকা সময়কাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তিনি তাঁর আলোচনার মধ্যে বলেন, একদা আমি পথ চলছিলাম, এমতাবস্থায় আকাশ থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা উত্তোলন করতেই আমি দেখলাম যে ফেরেশতা হেরা গুহায় আমার কাছে এসেছিল, সে আসমান ও জমিনের মধ্যস্থিত একটি কুরসিতে বসে আছে। আমি তার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেলাম। এরপর আমি বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে বললাম, আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করো। তারা আমাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করল। এরপর মহান আল্লাহ নাজিল করলেন, ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠো...অপবিত্রতা হতে দূরে থাকো। ’ এই আয়াতগুলো নামাজ ফরজ হওয়ার আগে নাজিল হয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৬৪; তিরমিজি, হাদিস : ৩৩২৫)
সুরা মুদ্দাসসির থেকে শিক্ষা
আলোচ্য সুরায় আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘আপনি তাওহিদের পতাকা নিয়ে এগিয়ে চলুন। আমার প্রভুত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও আধিপত্যের কথা ঘোষণা করতে থাকুন এবং তাওহিদের বিপরীতে থাকা মানুষকে সতর্ক করুন। ভয়াবহ পরিণতির কথা জানিয়ে দিন। নীতি-নৈতিকতা ও সামাজিক পরিবেশ—সব ক্ষেত্রে আপনার চরিত্রকে পবিত্র রাখুন। আকস্মিক আপনার ওপর নেমে আসা বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করুন। ’ রাসুল (সা.) আল্লাহর হুকুমে সব কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এই নীতিমালা ধর্ম প্রচারক এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্যও প্রযোজ্য। নবীজীবন থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।