ইবাদতের যে পন্থাকে নবীজি উত্তম বলেছেন

ইবাদতের যে পন্থাকে নবীজি উত্তম বলেছেন

 আতাউর রহমান খসরু

আল্লাহর নির্দেশ পালন ও ইবাদতের ক্ষেত্রে মুমিন বান্দার তিন অবস্থা। নিম্নে এই তিন ধরনের ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—

মধ্যপন্থীরাই উত্তম : যারা কোনো কমানো-বাড়ানো ছাড়াই যথাযথভাবে ইবাদত আদায় করে। এটাই মধ্যপন্থা ও ভারসাম্যপূর্ণ উপায়। কেননা সে কমায়নি যে নিন্দিত হবে এবং বাড়ায়ও যে অপারগ হয়ে যাবে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তোমরা যথারীতি আমল করে নৈকট্য লাভ কোরো। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদত কোরো। মধ্যপন্থা অবলম্বন কোরো। মধ্যপন্থা তোমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবে।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩)

আত্মপ্রবঞ্চনা থেকেই শিথিলতা : যারা ইবাদত পালনে শিথিলতা করে তারা মূলত ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের প্রবঞ্চনা থেকেই তা করে থাকে। তাদের প্রবৃত্তি তাদের প্রতারিত করে এবং অজ্ঞতার কারণে তারা ধোঁকায় হাবুডুবু খায়। ধারণাই তাদের পুঁজি এবং মিথ্যা আশা তাদের সম্বল। ঠিক যেমন কোনো ব্যক্তি কোনো প্রকার সম্বল ছাড়া দীর্ঘ পথ সফর করার উদ্দেশ্যে বের হলো এই ধারণা থেকে যে পথে সে সম্বল সংগ্রহ করার সুযোগ পাবে।

কিন্তু তার ধারণা তাকে ধ্বংসের দিকে ঢেলে দিল। কেন সে সতর্কতা অবলম্বন করল না। অথচ আল্লাহ সতর্ককারীর প্রশংসা করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর আমি আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর চিঠির আর কোনো কিছু দ্বারা এতটা উপকৃত হতে পারিনি এবং উপদেশ গ্রহণ করতে পারিনি। তিনি আমাকে লেখেন—‘মানুষ সে জিনিস আঁকড়ে ধরে আনন্দিত হয়, যা কখনো তার থেকে ছুটে যাবে না এবং এমন জিনিস ছুটে গেলে কষ্ট পায়, যা কখনো সে অর্জন করতে পারবে না।

সুতরাং পৃথিবীর কোনো অর্জনের কারণে তুমি আনন্দিত হয়ো না এবং তা থেকে কোনো কিছু হারিয়ে গেলে ব্যথিত হয়ো না। তাদের মতো হয়ো না, যারা কোনো আমল না করেই পরকালে মুক্তির আশা করে এবং দীর্ঘ আশার কারণে তাওবা করতে বিলম্ব করে। তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ’(তারিখে দামেস্ক : ৪২/৫০৩)

লোক-দেখানো বেশি আমল নিষিদ্ধ

যারা নির্দেশিত ইবাদত পালনে বৃদ্ধি করে তারা হয়তো এমনটি করে লোক-দেখানোর জন্য। যেন মানুষ তাদের সৎ ও আল্লাহভীরু মনে করে। অথচ তারা মোটেই এমন নয়। এমন লোকদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোষণা হলো, যা তোমাকে দেওয়া হয়নি তা দেওয়া হয়েছে বলা এমন প্রতারকের কাজ যে প্রতারণার জন্য দুই প্রস্থ মিথ্যার পোশাক পরিধান করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২১৯)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করে সে যেন নেক কাজ করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১১০)

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, সে যেন লোক-দেখানোর জন্য আমল না করে।

সওয়াবের আশায় বেশি আমল

কেউ যদি সওয়াবের আশায় বেশি আমল করে, তবে তা নিন্দনীয় নয়। কেননা পরিশুদ্ধ হৃদয়ে বেশি আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করে। তবে এ ক্ষেত্রেও ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক। যেমনটি নবী করিম (সা.) বলেন, হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল করতে থাকো। কেননা আল্লাহ ক্লান্ত হন না, বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর কাছে ওই আমলই সবচেয়ে প্রিয় যা সর্বদা করা হয়, তা কম হলেও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৬১)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

 

এই রকম আরও টপিক