বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন ইহসানুল করিম

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম

বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন ইহসানুল করিম

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। রোববার রাত ৮টার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কাল তিন দফা জানাজা শেষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।  

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমেরর প্রথম নামাজে জানাজা সোমবার (১১ মার্চ) সকাল ৮টায় এলেন বাড়ি জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।

দ্বিতীয় জানাজা সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এবং তৃতীয় জানাজা বনানী কবরস্থানে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

এর আগে রাজধানীর আরও বেশ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও। কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলেছেন, ইহসানুল করিম ভালো মানুষ ছিলেন। হৃদয়বান মানুষ ছিলেন। কারও ক্ষতি করেননি। তার মৃত্যুতে একজন বন্ধু হারালাম।  

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘সাংবাদিকতায় অনন্য ইতিহাস রেখে গেছেন ইহসানুল করিম। তার মৃত্যুতে গণমাধ্যমের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।  

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বলেন, তিনি শুধু আমাদের একজন সহকর্মী ছিলেন না, অভিভাবক ছিলেন। প্রতিটি বিষয় প্রতিটি সময় তিনি খোঁজ রাখতেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল। এক কথায় উনার মতো ভালো কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হারালো। সন্তানের মতো আগলে রাখতেন সবকিছু।  

দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ইহসানুল করিম আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার চিকিৎসা হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সারাজীবন তিনি সৎভাবে জীবন কাটিয়েছেন। তিনি যোগ্যতা ও বিশ্বাসের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।  

প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, তার মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি সবসময় স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে গেছেন। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

পিএমও অফিসের কর্মকর্তা জানান, তিনি আমাদের অভিভাবকের মতো ছিলেন। তাকে হারিয়ে তারা অভিভাবক হারালেন। তারা বলেন, আমরা একজন খাঁটি দেশপ্রেমিককে হারালাম।

ইহসানুল করিম ২০১৫ সালের জুন থেকে চুক্তি ভিত্তিতে সচিব পদমর্যাদা ও বেতনক্রমে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে তার চুক্তির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ছিলেন।

ইহসানুল করিম ১৯৫১ সালের ৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তি বাহিনীর হয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশ নেন।

ইহসানুল করিম ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ সময় তিনি সংবাদ সংস্থাটির বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের নয়া দিল্লিতে সংস্থাটির ব্যুরো প্রধান ছিলেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি, পিটিআই এবং ভারতের দ্য স্ট্যাটমেন্ট ও ইন্ডিয়া টুডেসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলাদেশি প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতা করেন। ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাসসের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালনের পর অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি বাসস থেকে অবসর গ্রহণের পর একই বছরের ২০ মে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রেস সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ২১ মে তিনি প্রেস সচিব হিসেবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৫ জুন তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব হিসেবে প্রথমে এক বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে তার চুক্তির মেয়াদ দুই বার- তিন বছর করে বৃদ্ধি করা হয়।

news24bd.tv/আইএএম