যেকোনো কিছুতেই সত্যিকারে প্রয়োজনে পাশে আছে ভারত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

আসাদুজ্জামান খান কামাল

যেকোনো কিছুতেই সত্যিকারে প্রয়োজনে পাশে আছে ভারত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের নিঃশর্ত বন্ধুত্ব এখনো আছে। এখনো যেকোনো সময় যেকোনো কিছুতেই ভারত আমাদের সত্যিকারে প্রয়োজনে পাশে আছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সবসময়‌ই এই কথা বলি যে, আমরা সবসময় ভারতকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি, ভবিষ্যতেও পাব। এবং সেজন্য‌ই হয়তো মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতীয় সৈন্যরা খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে গিয়েছিল।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ৫২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মন্ত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশেই অন্য দেশের সৈন্যরা যুদ্ধজয়ের পর যে খুব তাড়াতাড়ি চোখের ইশারায় চলে গেছে তা কিন্তু হয়নি। একমাত্র উদাহরণ আমার মনে হয় বাংলাদেশ।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন বাঁচাতে ভাতৃপ্রতীম দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে আমাদের কোটি মানুষ। ভারত সরকার তো বটেই, ভারতের জনগণ যদি সেদিন আমাদের আশ্রয় না দিত, তাহলে বোধহয় ইতিহাসটা অন্যরকমভাবেই লেখা হত। ভারত সরকারকে সেজন্য আমরা কখনোই ভুলব না। ’

ভারতীয় সেনাদের আমরা স্যালুট জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এক হাজার ৬৬৮ জন ভারতীয় সৈন্যদের যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে।

সেজন্য ভারতের বন্ধুত্ব আজীবন থাকবে বাংলাদেশের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু বলার সঙ্গে সঙ্গে তখনকার ভারতের রাষ্ট্রনায়ক ভারতীয় সেনাদের ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাদের আমরা স্যালুট জানাই। ’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, ‘৫২ বছর আগে আজকের এই দিনে ঢাকা স্টেডিয়ামে ভারতীয় সেনাদের গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁদের সহায়তার জন্য প্রশংসা করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক চিরস্থায়ী হবে। ’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেকগুলো ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ছিল সেরকমই একটি মুহূর্ত যখন ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই। আরেকটি ঐতিহাসিক দিন হলো ১৯৭২ সালের ১২ই মার্চ যখন ভারতের সৈন্যরা বাংলাদেশের মানুষের বাহবা ও ধন্যবাদ নিয়ে দেশে ফিরে গেল। ’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘তখন আমাদের চারপাশের প্রায় ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটার সীমান্ত ছিল ভারতের। ভারতের সহযোগিতা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন অতো সহজ হত না। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশে আসে এবং সম্মুখ যুদ্ধে অবত্তীর্ণ হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তার আগে সমস্ত ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। বন্ধু হিসেবে ভারত আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ যখন ভারতীয় সৈন্য ফিরে যায় পরের দিন জাতীয় পত্রিকায় লেখা হয়েছে বাংলাদেশ ভারতের ফ্রেন্ডশিপ (বন্ধুত্ব) এভারলাস্টিং ফ্রেন্ডশিপ (চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব)। সেই বন্ধুত্ব অব্যাহত আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। ’ 

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক বীর প্রতীক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এত নিবিড় ছিল যে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো কূটনীতি করতে হয়নি। জানুয়ারির ৬ তারিখে বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, আপনার সৈন্যদের কখন আমার দেশ থেকে ফেরত নিবেন? ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, আপনি যখন চান। আর কোনো কথা হয়নি। অফিসে আসার পর (ইন্দিরা গান্ধী) স্যাম মানেকশকে (মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর প্রধান) বলেছিলেন, স্যাম তোমার সৈন্যদের দেশে নিয়ে আসো। এটা শেখ মুজিবের জন্মদিনের উপহার। ’

এ সময় সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সহ–উপচার্য অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমান।

news24bd.tv/আইএএম