মানুষের পাশে তারা কারা?  

বামে রুম্মান ডানে অপরাজিতা

দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

মানুষের পাশে তারা কারা?  

দেবদুলাল মুন্না

বদলে যাচ্ছে সময় 
মানুষের কাজ করে দিচ্ছে তারা। মানুষই তৈরি করছে। কিন্তু মানুষের চাইতে যেন তারা আরও গতিশীল। নির্ভুল।

তারা কারা ? কখনো দেখা যায় না। কখনো মানুষের অবয়বে মানুষের পাশেই বসে থাকছে। চেনারই উপায় নেই কে আসল কে নকল? 

ফুটবলপ্রেমীদের মনে পড়ার কথা। গত কাতার বিশ্ব কাপে অফসাইড ধরতে এআই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিল ফিফা।

মনে পড়ে একটি এআই চেজ প্রোগ্রাম আশির দশকে চেস মাস্টার ডেভিড লেভিকে খেলায় হারিয়ে দিয়েছিল? আমাদের দেশেও একটি বেসরকারি টিভিতে অপরাজিতা নামের এক এআই সংবাদ পাঠিকা খবর পড়েছিল?

আর ইউটিউবে সার্চ করলেই পাওয়া যায় কতো কতো নকল কন্ঠস্বর, এমনকি চেহারাও। ডিপফেক। এসবই হচ্ছে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যাবহারে। একটা সময় এ রকম হবে এটা অনেকের কল্পনারও অতীত ছিল।  

২০১১ সাল। অ্যাপল নিয়ে আসে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি। এরপর গুগল নিয়ে আসে আলেক্সা। যা এখন প্রায় সবাই ব্যবহার করে। বর্তমান প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে চ্যাট জিটিপি। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এটি তৈরি। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের মতো লেখা বা টেক্সট তৈরি করার ক্ষমতা।  

একটা এনড্রয়েড ফোনকে সামনে নিয়ে কথা বলবেন সেই কথা টাইপ হয়ে যাবে অটো। টেক্সট লেখছেন অনেকে।  

বিশ্বে একজন রুম্মান
২০২৩ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশ্বসেরা ১০০ জনের নাম ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন টাইম। এই তালিকায় স্থান পান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. রুম্মান চৌধুরী। তিনি ডেটা সায়েন্স ও সোশ্যাল সায়েন্সের সমন্বয়ে ‘অ্যাপ্লাইড অ্যালগরিদমিক এথিকস’ নিয়ে কাজ করেন। রুম্মান মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা ও মেশিন লার্নিং বিষয়ে গবেষণার কাজ করেন।  

রুম্মান চৌধুরী এর আগে টুইটারের মেটা (মেশিন লার্নিং এথিকস, ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকউন্টেবিলিটি) দলের প্রধান ছিলেন। যে দলের কাজ ছিল প্ল্যাটফর্মে অ্যালগরিদমিক হুমকি চিহ্নিত করা এবং ঝুঁকি কমানো । নিজের লিঙ্কডইন বায়োতে তিনি লেখেন, ‘গত ছয় বছর ধরে আমি নৈতিক, ব্যাখ্যাযোগ্য এবং স্বচ্ছ এআই-এর জন্য অত্যাধুনিক সামাজিক-প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরি করছি। ’ ২০০৬ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস এবং ২০১৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন রুম্মান চৌধুরী। তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে এই খাতে কাজ করছেন। রুম্মান চৌধুরী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সের প্রতিষ্ঠাতা।

টাইম ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,  ‘আমি চাই, সবাই বুঝুক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসলে জাদু না। এটা গণিত, কোডে বসানো গণিত। এখানে প্রথম কথা হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক যেসব ইস্যু বা বিষয় উঠে এসেছে, তার প্রায় সব অতীতে অন্য কোনো না কোনোভাবে ঠিকই করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ মনে করে প্রোগ্রামার বা এআই ডেভেলপাররা যেন জাদু জানেন। যেন তাঁদের হাতে অনন্য ধরনের ক্ষমতা আছে, যেন তাঁরা আর সবার চেয়ে স্মার্ট। এই বিষয়টা একদমই সত্যি নয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রের মানুষেরা এ কথাটা বারবার বলেন, ছড়িয়ে দিতে চান। এই মানুষগুলো নিজেদের বানানো প্রযুক্তিকে ঘিরে একধরনের রহস্য বজায় রাখতে চান। উদ্দেশ্য একটাই, অন্যদের সরিয়ে রাখা ও ব্যবহার করা। তৃতীয় বিষয়টি হলো, মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমালোচনা করতে, একে প্রশ্ন করতে বা এটা আসলেই ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা জিজ্ঞাসা করতে কেমন যেন ভয় পায়। এমনকি অনেকে তো মনে করেন, কোনো বিষয়ের বিশেষজ্ঞের চেয়েও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে । ”

গার্ডিয়ানে এআইয়ের লেখায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট জিটিপি থ্রি।
বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার৷ এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন তরুণ উদ্যোক্তারা৷ বেসরকারি খাতে এর ব্যবহার বেশি হলেও সরকারি খাতও আধুনিক এ প্রযুক্তি থেকে দূরে নেই৷ বাংলাদেশও একদিন এআইয়ে একদিন অনেকদুর এগিয়ে যাবে তার প্রমাণ রুম্মান চৌধুরী।  

দরকার ডেটা ব্যাংক
রুম্মান চৌধুরী টাইমকে দেওয়া ইন্টারভিউতে বলেছেন, গুগল, ফেসবুকের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের দক্ষতার পেছনের কারণ হলো ফেস ডিটেকশনে ভালো ফেসবুক, স্প্যাম ইমেজ ডিটেকশনে ভালো গুগল। এই ডিটেকশন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এই ডিটেকশনের জন্য যোগ্য করতে প্রয়োজন হাজার হাজার ছবি, অর্থাৎ হাজার হাজার ডেটা। যেহেতু গুগল এবং ফেসবুকের ব্যবহারকারী বিশ্বজুড়ে রয়েছে, তাই তাদের ডেটার সংখ্যা বেশি। সেজন্য তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সক্ষমতাও বেশি। ফলে বাংলাদেশেও দরকার বড়ো একটি ডেটাব্যাংক।

খানমিগো আজ সারা বিশ্বে পরিচিত
শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারে অন্যতম অবদান রেখে চলেছেন খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্প্রতি 'খানমিগো' নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত শিক্ষা সহায়ক চালু করেছে। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, এটি শিক্ষকদের পাঠ পরিকল্পনা পর্যন্ত তৈরি করে দিতে সহায়ক এবং শুধু তাই নয়  যে কোনো বিষয়ের ওপর পড়তে চাইলে নেটে পড়ানো হয়। বিশ্বজুড়ে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী প্রায় সাত কোটি।  

কৃষি ও শিল্প খাত
কৃষি খাতেও এআই'র ব্যবহার শুরু হয়েছে।  বিএডিসি ব্যবহার করছে।  হিমাগারে ব্যবহার করা হচ্ছে, বিভিন্ন শিল্প কারখানায়ও ব্যবহার শুরু হয়েছে৷

তরুণ উদ্যোক্তা পরাগ ওবায়েদের নেতৃত্বে একাধিক এআই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে৷ তাদের পুরো কাজটিই মেশিন লার্নিং৷ তারা টেলকো এবং কৃষি খাতে কাজ করছেন৷ তারা সফওয়ার এবং হার্ডওয়্যার- দুইটি নিয়েই মেশিন লার্নিয়ের কাজ করেন।   পরাগ ওবায়েদ ‘‘আমরা পানি, মাটি,  কৃষি ও কৃষকের ব্যাপারে এআই ব্যবহার করে সঠিক উৎপাদন চাষ-পদ্ধতির ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত দিচ্ছি৷ বিএডিসির সোলার পাম্পে আমরা মেসিন লার্নিং ডিভাইস বসিয়ে ডাটা নিয়ে পাম্পের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করছি৷ সঠিক সময়ে কতটুকু জলসেচ দরকার এইসব সিদ্ধান্ত দিচ্ছে এআই৷’’

তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহায়তা নেয়ার বাইরেও যে প্রতিষ্ঠানের দরকার তারাও এখন নিজেরাই এআই ডেভেলপ করছে। –(ডয়েচে ভেলে ২০২৩ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি)

অপরাধ দমন
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেটাভার্স, ওয়েব-৩ প্রযুক্তি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করেছে ডিএমপি। উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ টিম ডিএমপি হবে ঢাকাবাসীর গৌরবময় সেবা প্রদানের ‘স্মার্ট ডিএমপি’।

ডিএমপিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত ডায়নামিক রেসপন্স ইন্টিলিজেন্ট মনিটরিং সিস্টেম (ডিআরআইএমএস) ও সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস), সাসপেক্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এসআইভিএস), ফেস ম্যাচিং, সিআইএ ল্যাব, আইপি ট্র্যাকার, সাইবার বুলিং অ্যান্ড ক্রাইম মনিটরিং সিস্টেম, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম, হ্যালো সিটি অ্যাপ, সিডিএমএস ও পিআইএমএস চালু করা হয়েছে। সূত্র ডিএমপি’র আস্থা ও নিজস্ব অফিসিয়েল ওয়েবসাইট।

সংবাদ পাঠিকা
২০২৩ সালের ১৯ জুলাই। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল। সেদিন সন্ধ্যা সাতটার সংবাদ শুরু হলো। শুরুটা করলেন দুই সংবাদ। সাড়ে ১১ মিনিটের দিকে এক উপস্থাপক তৃতীয় সংবাদ উপস্থাপককে আহ্বান করেন। এই উপস্থাপকের নাম ‘অপরাজিতা’। একনজরে সুশ্রী তরুণী এক সংবাদ উপস্থাপিকা। নেভিব্লু শার্টের ওপর ঘি রঙের ব্লেজার পরা। টানা কালো চোখ, বাঁকানো ভুরু, ঠোঁটে গাঢ় গোলাপী লিপস্টিক আর পরিপাটি করে আঁচড়ানো কালো চুল। দুই কানে ছোট দুটি দুল—গয়না বলতে এই। সব মিলিয়ে ছিমছাম, সুন্দর। কে এই অপরাজিতা? অপরাজিতা শুরু করলেন এভাবে  ‘আপনাদের মতো করে আমিও চেষ্টা করব নিউজ পড়ার জন্য। কতটুকু সম্ভব হবে জানি না। দর্শক, স্বাগত জানাচ্ছি আমি অপরাজিতা...। ’

সফটওয়্যারে তৈরি এক নারীর অবয়ব, যে বাংলায় খবর পড়তে পারে। এরপর সেই বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপস্থাপক অপরাজিতার পরিচয় দিলেন,‘এআই প্রেজেন্টার’।

সাংবাদিকতা
নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার অধ্যাপক ফ্রান্সিস্কো মারকোনি সম্প্রতি তার নিউজমেকারস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড ফিউচার অব জার্নালিজম বইয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ এবং এর টিকে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করছে। বাংলাদেশেও অনলাইনে ফ্যাক্টচেক নামের বেশ কয়েকটি নিউজ পোর্টাল চালু হয়েছে যাদের কাজই হলো, অন্য মিডিয়ার ভুল সংবাদগুলো তুলে ধরা।  

মানুষের অবস্থান শনাক্তের প্রযুক্তি
বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব সূত্র জানিয়েছে, যে জিও লোকেশন-ব্যবস্থা চালুর জন্য বলা হয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করতে অপারেটরদের নতুন সফটওয়্যার ও সরঞ্জাম প্রয়োজন। তা কিনতে বড় অঙ্কের অর্থ দরকার। অ্যামটব এই অর্থ চেয়েছিল বিটিআরসির সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ) থেকে। তারা যে প্রকল্প দাখিল করেছিল, সেটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১০ কোটি টাকার সমান। ২২ সালে সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেছিলেন, প্রযুক্তির সময়ে আমাদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। এআই ব্যবহার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।  

নতুন যন্ত্র ব্যবহারের ভালো ও খারাপ দুই দিক
 গত নির্বাচনের আগে ব্যাপক ভিত্তিক নজরদারি বা আড়িপাতায়’ অপব্যবহার হতে পারে বলে বিরোধীদল অভিযোগ করেছিল। ২০২২ সালের ১৭ মার্চ ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ইন্টেলিজেন্স অনলাইন এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে আড়ি পাতার প্রযুক্তি কিনেছে। এর আগে ২০১৫ সালে মুঠোফোনে আড়ি পাতা ও নজরদারির জন্য বাংলাদেশের কেনা সরঞ্জাম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আটকে দিয়েছিল সুইজারল্যান্ড। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শীর্ষ নেতানেত্রী, অভিনেতা, অভিনেত্রীদের কন্ঠস্বর, ছবি নকল করা থেমে নেই।  

নতুন প্রযুক্তি আসলে কী
নতুন এই প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম। মূলত আড়িপাতা বা নজরদারির জন্য এটি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা, যাতে ব্যক্তির অবস্থান চিহ্নিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে জড়িত থাকবে টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন, সরকার একটি ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম বা সমন্বিত আইনসম্মত আড়িপাতা পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে।

ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দেশ ও সরকার বিরোধী কার্যক্রম বন্ধে এনটিএমসিতে (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজির (ওএসআইএনটি) মতো আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। একই সঙ্গে একটি ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোবাইল অপারেটরদের সফটওয়্যার ও বিভিন্ন উপকরণ কিনতে ব্যয় করতে হচ্ছে আরও প্রায় দুশ’ কোটি টাকা।

কীভাবে কাজ করবে নতুন নজরদারি প্রযুক্তি
সরকারি একটি চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে নজরদারির এ ব্যবস্থায় মোবাইল অপারেটররা ছাড়াও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান এবং ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (এনআইএক্স) এর মতো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবশ্য টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকেই তাদের গ্রাহকদের জিও লোকেশন বা সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য পাবে। আবার সরকারি সংস্থা চাইলে সরাসরি অপারেটরদের ডাটাবেজে ঢুকেও কোন ব্যক্তির বিষয়ে নজরদারি করতে সক্ষম হবে।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির অবশ্য বলছেন, নজরদারির এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে নতুন হলেও বিশ্বে অনেক পুরনো। তার মতে একজন গ্রাহকের মোবাইল ফোনটি একই সাথে ২-৩ বা আরও বেশি কাছাকাছি টাওয়ার থেকে সিগন্যাল পায় এবং এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে শক্তিশালী তার মাধ্যমেই সে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। এখানে ‘একটি ট্রায়াংগুলেশন মেথড’ ব্যবহার করে বিভিন্ন উপকরণের সহায়তায় ওই মোবাইল ফোনটির সুনির্দিষ্ট অবস্থান চিহ্নিত করা হবে।

তিনি বলেন, সফটওয়্যার মোবাইল অপারেটরের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমে থাকবে। সেখানে তারা জানবে ঠিক কোথায় আছে মোবাইল ফোনটি। সংশ্লিষ্ট ফোন অপারেটর সেই তথ্য সরকারি সংস্থাকে জানাবে।  

শেষকথা 
ভারতীয় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দ্র সিং জাদুন চলচ্চিত্র জগতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তৈরির কাজ করেন। কিছুদিন আগে তিনি ভারতীয় রাজনীতিবিদদের হয়ে কাজ করার অফার পান। তাকে যে ধরনের কাজ করতে বলা হয়েছিল, তার মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে এআই ভিডিও ও ডিপফেক অডিও-ভিডিও তৈরি উল্লেখযোগ্য।  

জাদুন বলেন, ডিপফেক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কোনো আইনি নির্দেশনা নেই। একারণে বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। ডিপফেক এমন প্রযুক্তি এবং এটিকে এমনভাবে ম্যানিপুলেট করা যায় যার মাধ্যমে ব্যক্তির ভোট দেয়া প্রভাবিত করা যাবে। আবার ভালো কাজে ব্যবহার করার জন্য এআই( কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর বিকল্প নেই ।  

news24bd.tv/ডিডি