‘আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

 বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

‘আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি’

দেবদুলাল মুন্না

বঙ্গবন্ধু দেশ ফিরেছেন। মাসখানেক পর বিবিসির সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট এলেন। তিনি আগেই তার সহকর্মী মার্ক টালির কাছে বঙ্গবন্ধু ও এদেশের জনগণ সম্পর্কে জেনেছেন। একটি সাক্ষাৎকার নিলেন বঙ্গবন্ধুর গণভবনে।

অনেক প্রশ্নের মধ্যে দুটি প্রশ্ন উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধুকে  জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি কী? হোয়াট ইজ ইয়োর স্ট্রেংথ?’ বঙ্গবন্ধু জবাব দিয়েছিলেন, ‘মাই পিপল। আমার জনগণ। ’ পরের প্রশ্ন, ‘হোয়াট ইজ ইয়োর উইকনেস? আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কী?’ বঙ্গবন্ধু উত্তর দেন ‘আমার জনগণের জন্য ভালোবাসা।
আমি তাদের ওপর বিশ্বাস রাখি। মাই লাভ ফর মাই পিপল। আই ট্রাস্ট দেম। ’ ( সূত্র: অন লিডারস এন্ড আইকনস: ফ্রম জিন্নাহ টু মোদি : কুলদীপ নায়ার) On Leaders And Icons: From Jinnah To Modi

এই হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাত্র ২১ বছর বয়সী এক কারাবন্দী নির্বাচিত হয়েছিলেন নতুন রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক। ২৬ বছর ধরে সেই দলে ছিলেন। দলের রূপান্তরও হয়েছে তাঁর হাতে। ক্রমান্বয়ে তিনি হয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, হয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তবে নিজেকে জেনেছেন জনগণের সেবকরূপে।

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভের পর পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে বেশি সময় পাননি বঙ্গবন্ধু।  কিন্তু তিনি নিজে কখনো দুর্নীতির আশ্রয় নেননি। মানুষের জন্য যেন তার হৃদয় কাঁদত। একটা উদাহরণ দিচ্ছেন রাশিয়ার সাইবেরিয়ান ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির ভিজিটিং প্রফেসর ও সাউথ এশিয়া জার্নালের এডিটর ড. এন এন তরুণ তার লেখায় `প্রান্তিক ও নিম্নবর্গের দুঃখী মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা’ (Bangabandhu's love for marginalized and poor people)

ইচ্ছে মতো খরচ নয় :
১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসের ঘটনা। তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সামসুল হুদা দেখা করতে যান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। এর মাত্র দুদিন আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সামসুল হুদা। ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পান সামসু। বঙ্গবন্ধু তখন দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপর রাখা মুড়ি খাচ্ছেন। সামসুকে দেখে বললেন, ‘কেমন আছিস, আয়, মুড়ি নে। ’ মুড়ি নিতে গেলে সামসুর হাতের আংটি দেখে বঙ্গবন্ধু অবাক হয়ে জানতে চান, ‘তোর হাতে রিং কেন রে?’ সামসু বলেন, মা-বাবা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কিছুটা অনুযোগের সুরে বললেন, ‘এখনই বিয়ে করে ফেললি? এখনো কত কাজ বাকি। ’ দু-এক কথার পর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বউমা কোথায়? বউয়ের জন্য কী কিনেছিস?’ সামসু নিচু স্বরে জবাব দিলেন, ‘কিছুই কিনিনি, আমি বেকার। হঠাৎ করে বিয়ে। এর আগে আমি মেয়েকে দেখিওনি। ’ একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর কোমরে ১০ হাজার টাকা গুঁজে দেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই টাকা শুধুমাত্র বউমার জন্য, এক টাকাও তুই নিবি না। ’ এরপর বঙ্গবন্ধু আরও দেড় হাজার টাকা দেন সামসুকে। বঙ্গবন্ধু তোফায়েল আহমদকে ডেকে পাঠান। তোফায়েল আহমদ এলে তাঁকে বলেন, ‘খবর শুনেছিস; সামসু বিয়ে করেছে। শোন, সামসু এখন বেকার। আমার কাছে কোনো টাকা নেই। আমাকে ১০ হাজার টাকা ধার দে। ’ তোফায়েল বলেন, ‘৫ হাজারের বেশি দিতে পারব না। ’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তা-ই দে। ’ শেষে তোফায়েলের কাছ থেকে আরও ৫ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসেন সামসুল হুদা।

দেখা যাচ্ছে বিশেষ টাকা দেওয়ার অনুরোধ করেননি। অথচ তিনি চাইলে সেটা করতে পারতেন।  বঙ্গবন্ধু তাকে কেউ মেরে ফেলতে পারে এটা বিশ্বাস করতেন না। আস্থা ছিল এদেশের সবার প্রতি। তাই  বঙ্গবন্ধু যখন ৩২ নম্বর থেকে গণভবনে যেতেন, ঢাকার রাস্তা বন্ধ থাকত না। সামনে খোলা জিপে থাকতেন হয় এসপি মাহবুব অথবা সার্জেন্ট নবী চৌধুরী। ঢাকার রাস্তার দেয়ালে তখন একটি স্লোগান চোখে পড়ল, ‘বঙ্গবন্ধু কঠোর হও। ’ তিনি বলতেন, ‘কার প্রতি কঠোর হব, কীভাবে হব, কেনই-বা হব?’

ঢাকায় এল ভুসি, বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে নিয়ে গেলাম। বঙ্গবন্ধু তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন, ‘ওরে আমার ভুসি আসছে’ বলে হইচই করে উঠলেন। ভুসি মাখনের মতো একেবারে গলে গেল। বঙ্গবন্ধু যতই বলেন, ‘কেমন আছিস, কোনো অসুবিধা নেই তো?’ ভুসি ততই খালি তোতলায় আর বলে, ‘ভা-ভা ভালোই আছি। ক-ক কোনো অসুবিধা নেই। ’ বঙ্গবন্ধু তার পরিবার, এলাকার, দেশের অবস্থার খোঁজখবর নিলেন। আধা ঘণ্টা পর ভুসিকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। রেগে বললাম, ‘কী হলো, এত প্যানপ্যানানি গেল কই, কিছুই তো বললে না, চাইতে পারলে না!’ ভুসি আমতা আমতা করে বলল, ‘কী করব, নেতাকে দেখে যে সবই ভুলে গেলাম। ’
বুঝলাম, এরই নাম ক্যারিশমা। ইনিই হচ্ছেন একমেবাদ্বিতীয়ম শেখ মুজিব (কেমন ছিল শেখ মুজিবের হৃদয় : এ বি এম মুসা)  

দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি ঘটনা :
খলিল ভাই আমাদের সাথেই দুই দিন থাকবেন। আমাদের দিল্লির সকল কিছু ঘুরে ঘুরে দেখাবেন। এই সময় আর একটা ঘটনা ঘটল। বরিশালের নূরুদ্দিন আহমেদের সাথে আনোয়ার সাহেবের ঝগড়া হয়েছে। নূরুদ্দিন রাগ করে আমাদের কাছে চলে এসেছে। তার টাকা পয়সাও আনোয়ার সাহেবের কাছে। তাকে কিছুই দেয় নাই, একদম খালি হাতে আমার ও মাখনের কাছে এসে হাজির। বলল, “না খেয়ে মরে যাব, দরকার হয় হেঁটে কলকাতা যাব, তবু ওর কাছে আর যাব না। ” এই নূরুদ্দিন সাহেবকেই মাখন ইসলামিয়া কলেজ ইউনিয়নের ইলেকশনে জেনারেল সেক্রেটারি পদে পরাজিত করেছিল। নূরুদ্দিনকে ছাত্ররা ভালবাসত কিন্ত সে আনোয়ার সাহেবের দলে ছিল বলে তাকে পরাজিত হতে হয়েছিল। আইএ পড়লেও দলের নেতা আমিই ছিলাম। আমরা একই হোস্টেলে থাকতাম। বললাম, “ঠিক আছে তোমার ওর কাছে যাওয়া লাগবে না, যেভাবে হয় চলে যাবে। ” যদিও ওর জন্য টিকিট করার টাকা আমাদের কাছে নাই। তিন দিন থাকব ঠিক হল। খাবার খরচ বেশি, হোটেলে খেতে হয়। দুই দিনের মধ্যেই খলিল ভাইকে নিয়ে দিল্লির লালকেল্লা, দেওয়ানি আম, দেওয়ানি খাস, কুতুব মিনার, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ, নতুন দিল্লি দেখে ফেললাম। কিছু টাকা খরচ হয়ে গেল। হিসাব করে দেখলাম, তিনজনের টিকিট করার টাকা আমাদের নাই। দুইখানা টিকিট করা যায়, কিন্তু না খেয়ে থাকতে হবে। খলিল ভাই একমাত্র বন্ধু, তবে তিনি তখনও ছাত্র তার কাছেও টাকা পয়সা নাই। যাহোক, আর দেরি না করে স্টেশনে এসে হাজির হলাম। তিনজনে পরামর্শ করে ঠিক করলাম, একখানা টিকিট করব এবং কোনো “সার্ভেন্ট" ক্লাসে উঠে পড়ব। ধরা যদি পড়ি, হাওড়ায় একটা বন্দোবস্ত করা যাবে।
প্রথম শ্রেণীর প্যাসেঞ্জারদের গাড়ির সাথেই চাকরদের জন্য একটা করে ছোট্ট গাড়ি থাকে। সাহেবদের কাজকর্ম করে এখানেই এসে থাকে চাকররা। দিল্লি যাওয়ার সময় আমরা ইন্টারক্লাসে যাই। এখন টাকা ফুরিয়ে গেছে, কি করি? একখানা তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট কিনলাম হাওড়া পর্যন্ত। আর দুইখানা প্লাটফর্ম টিকিট কিনে স্টেশনের ভিতরে আসলাম। মাখনের চেহারা খুব সুন্দর। দেখলে কেউই বিশ্বাস করবে না ‘চাকর' হতে পারে।

আমরা শুনলাম, খান বাহাদুর আবদুল মোমেন সাহেব এই বগিতে যাবেন। নূরুদ্দিন খোঁজ এনেছে। ভাবলাম, বিপদে পড়লে একটা কিছু করা যাবে। নূরুদ্দিনকে খান বাহাদুর সাহেব চিনতেন। তিনি রেলওয়ে বোর্ডের মেম্বারও ছিলেন। আমরা তার গাড়ির পাশের সার্ভেন্ট ক্লাসে উঠে পড়লাম। মাখনকে বললাম, তুমি উপরে উঠে শুয়ে থাক। তোমাকে দেখলে ধরা পড়ব। এই সকল গাড়িতে বোধহয় কোনো রেলওয়ে কর্মচারী আসবে না। নূরুদ্দিনকে সামনে দিব যদি কেউ আসে। একবার এক চেকার সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কোন সাহেবের লোক?” নুরুদ্দিন ঝট করে উত্তর দিল, “মোমেন সাহেব কা। ” ভদ্রলোক চলে গেলেন। কিছু কিছু ফলফলাদি নূরুদ্দিন কিনত, আমরা তিনজন খেতাম। ভাত বা রুটি খাবার পয়সা নাই। তিনজনে ভাত খেতে হলে তো এক পয়সাও থাকবে না। কোনোমতে হাওড়া পৌঁছালাম, এখন উপায় কি? পরামর্শ করে ঠিক হল, মাখন টিকিট নিয়ে সকলের মালপত্র নিয়ে বের হয়ে যাবে। মালপত্র কোথাও রেখে তিনখানা প্লাটফর্ম টিকিট নিয়ে আবার ঢুকবে। আমরা একসাথে বের হয়ে যাব।

গাড়ি থামার সাথে সাথে মাখন নেমে গেল, আমরা দুইজন ময়লা জামা কাপড় পরে আছি। দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না যে আমরা দিল্লি থেকে আসতে পারি। চশমা খুলে লুকিয়ে রেখেছি। মাখন তিনখানা প্লাটফর্ম টিকিট নিয়ে ফিরে এসেছে। তখন প্যাসেঞ্জার প্রায়ই চলে গেছে। দুই চারজন আছে যাদের মালপত্র বেশি। তাদের পাশ দিয়ে আমরা দুইজন ঘুরছি৷ মাখন আমাদের প্লাটফর্ম টিকিট দিল, তিনজন একসঙ্গে বেরিয়ে গেলাম। তখন হিসাব করে দেখি, আমাদের কাছে এক টাকার মত আছে। আমরা বাসে উঠে হাওড়া থেকে বেকার হোস্টেলে ফিরে এলাম। না খেয়ে আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে।

(দিল্লিতে অনুষ্ঠিত 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ সম্মেলন' শেষ হওয়ার পর দিল্লি থেকে কলকাতা ফেরার বর্ণনা, সূত্র, বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী)

শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ:
ভাসানীর সঙ্গে এক জেলে থাকার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘মওলানা সাহেবের সঙ্গে আমরা তিনজনই নামাজ পড়তাম। মওলানা সাহেব মাগরিবের নামাজের পরে কুরআন মজিদের অর্থ করে আমাদের বোঝাতেন। রোজই এটা আমাদের জন্য বাঁধা নিয়ম ছিল’। জেল জীবনের সময়-পার সম্পর্কে বলেন, ‘আমি তখন নামাজ পড়তাম এবং কুরআন তেলাওয়াত করতাম রোজ। কুরআন শরিফের বাংলা তর্জমাও কয়েক খণ্ড ছিল আমার কাছে’। (অসমাপ্ত আত্মজীবনী) কিন্তু তিনিই ৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ব্যবহার করেন। ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাননি।  

রাজনীতির শুরুর কথা :

১৯৩৮ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গোপালগঞ্জ সফরে এলে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় শেখ মুজিবের নেতৃত্বে। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আলাপ ওই সময়ই। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘হক সাহেব পাবলিক হল দেখতে গেলেন। আর শহীদ সাহেব গেলেন মিশন স্কুল দেখতে। আমি মিশন স্কুলের ছাত্র। তাই তাকে সংবর্ধনা দিলাম। তিনি স্কুল পরিদর্শন করে হাঁটতে হাঁটতে লঞ্চের দিকে চললেন, আমিও সঙ্গে সঙ্গে চললাম। তিনি ভাঙা ভাঙা বাংলায় আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন, আর আমি উত্তর দিচ্ছিলাম। ’ ওই আলাপের পর শেখ মুজিবের নাম-ঠিকানা লিখে নেন সোহরাওয়ার্দী। পরে কিশোর মুজিবুর রহমানকে চিঠিও লেখেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। চলে পত্র যোগাযোগ। ’

আরেক জায়গায় লেখা  ‘১৯৩৯ সালে কলকাতা যাই বেড়াতে। শহীদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। আবদুল ওয়াসেক সাহেব আমাদের ছাত্রদের নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে আলাপ করে তাকে গোপালগঞ্জে আসতে অনুরোধ করি। শহীদ সাহেবকে বললাম, গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করব এবং মুসলিম লীগও গঠন করব। খন্দকার শামসুদ্দীন সাহেব এমএলএ তখন মুসলিম লীগে যোগ দেন। তিনি সভাপতি হলেন ছাত্রলীগের। আমি হলাম সম্পাদক। ’ ( সূত্র , অসমাপ্ত আত্মজীবনী)

“কারাগারের রোজনামচা':
পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগার । মিয়ানওয়ালি কারাগারের প্রিজন গভর্নর (জেল সুপার) হাবীব আলীর কাছ থেকে বলেছেন , কারাকক্ষের সামনে কবর খুঁড়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী অথবা কবর বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কবরকেই বেছে নিয়ে বলেছিলেন, 'যে বাংলার আলো-বাতাসে আমি বড় হয়েছি, মৃত্যুর পর এই কবরে না, আমার লাশ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও। ' ( লাহোর টাইমস, ইন্টারভিউ, হাবীব আলী)

‘আমি তোমাদেরই লোক' :

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ লেখেছেন, '৭১-এর রক্তঝরা মার্চের ১৭ তারিখের কথা। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ৫২-তম জন্মদিন ছিল। দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে তখনকার প্রেসিডেন্ট ভবন অর্থাৎ পুরাতন গণভবন সুগন্ধা থেকে দুপুরে যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে ফিরে এলেন তখন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় একজন সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, '৫২-তম জন্মদিনে আপনার সবচাইতে বড় ও পবিত্র কামনা কী?' উত্তরে স্বভাবসুলভ কণ্ঠে বলেছিলেন, 'জনগণের সার্বিক মুক্তি। '

এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে বেদনার্ত স্বরে বলেছিলেন, 'আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোন মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি। ' জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে আসা জনসাধারণকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা থেকে আবৃত্তি করে বলতেন, 'মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক। ' ( সূত্র, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক: তোফায়েল আহমেদ)

শেখসাব :
আমেরিকান মিশনারি জেনিন লকারবি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামে ছিলেন লকারবি। তার ‘অনডিউটি ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে লকারবি লিখেছেন ‘এমন একজন মানুষের আবির্ভাব ঘটছে, যে অনগ্রসর বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বাদ দেবে, তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান, আদর করে ডাকা হয় ‘মুজিব’ বা ‘শেখসাব’।
আমার দেশ বাংলাদেশকে প্রতমে সমর্থন দেয়নি। কিন্তু আমি শেখসাবকে সমর্থন দিয়েছি। তার কথা প্রথম শুনি এ্যালিসা নামের আমাদের এক নারী সহকর্মীর কাছে। এ্যালিসা জানান, তিনি( শেখসাব) বিবাহিত। সন্তানের বাবা। কিন্তু দেশের ভালোর জন্য মৃত্যুভয় নেই। তিনি নিজে ও তার দেশের মানুষকে পরাধীন রাখতে চান না।  এ্যালিসা তাকে প্রথম দেখেছিল ঢাকার দিলখুশা এলাকায়। একটা বীমা কোম্পনির অফিসে। এ্যালিসার সঙ্গে সেদিন অল্পক্ষণের আলাপে বলেছিলেন,‘আমি জীবনবীমাই শুধু করাই না। স্বাধীনতারও বীমা দিতে চাই। ‘ উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু অল্পকাল একটি বীমাকোম্পানিতেও কাজ করেছেন।  

তাই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অর্থে সমার্থকই।  

news24bd.tv/ডিডি