১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু জন্মদিনে কি করেছিলেন ?

বঙ্গবন্ধু , বিবিসি ফাইল ছবি

 বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু জন্মদিনে কি করেছিলেন ?

নুরুজ্জামান মানিক 

সকালে বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন এবং সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি পুনর্ব্যক্ত করলেন। ইয়াহিয়া আবারও আইনগত সমস্যার কথা বললেন এবং জানালেন বিষয়টি বিবেচনার জন্যে তার আইন বিষয়ক উপদেষ্টা বিচারপতি কর্নেলিয়াসকে তলব করেছেন। ইয়াহিয়ার উপদেষ্টাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দলের (Team) একটি বৈঠকের প্রস্তাব করা হলো।

বৈঠকে কোনও সমঝোতাই হলো না।

বঙ্গবন্ধু আলোচনা শেষে বিমর্ষ চেহারা নিয়ে ফিরে গেলেন। আর ইয়াহিয়া এই আলোচনার বিবরণ দিতে গিয়ে টিক্কা খানকে জানালেন, ‘হারামজাদাটা (অর্থাৎ শেখ মুজিব) ভালো ব্যবহার করল না। তুমি তৈরি হয়ে যাও। ’ সে অনুযায়ী রাত ১০টায় টিক্কা খান জিওসিকে জানালেন, ‘খাদিম, তুমি এগিয়ে যেতে পারো।
’ সামরিক বুটের নিচে গণনির্বাচনের রায়কে দাবিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়ে গেল। দিনটি ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবনে গিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানায়। বঙ্গবন্ধু তার বাসভবনে পৌঁছালে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের অনুরোধে তিনি তাদের সাথে এক ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হন। ৫২তম জন্মদিনে তার কী কামনা বিদেশি সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি। আমি জনগণের একজন। আমার জন্মদিনই কী, আর মৃত্যুদিনই কী! আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের সকলের মৃত্যু হতে পারে’।

জন্মদিবস সম্পর্কে বিদেশি সাংবাদিকদের নিকট এইরূপ মনোভাব প্রকাশের পাশাপাশি ভক্ত-অনুরক্তদের বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার জন্মদিবসের একমাত্র বক্তব্য লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলিতে থাকিবে। সত্য ও ন্যায় আমাদের পক্ষে। জয় আমাদের অনিবার্য। ’ সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, পূর্ব বাংলা এখন স্বাধীন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এখন স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, আমার ৮৯ বছরের অতীতের সব কটি আন্দোলনের সাথে আমি জড়িত ছিলাম। কিন্তু একটি সর্বজনীন দাবিতে জনগণের মধ্যে বর্তমান সময়ের মতো একাগ্রতা ও সহযোগিতা আমি এর আগে আর কখনো দেখিনি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পিপিপি নেতা ভুট্টো ও প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান । অসহযোগ আন্দোলনের ষোড়শ দিবসে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানসহ বিভিন্ন এলাকায় কুচকাওয়াজ ও রাইফেল চালনার প্রশিক্ষণ শুরু করেন।

 [রেফারেন্সঃ ডঃ কামাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল ; সিদ্দিক সালিক, নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল; নুরুজ্জামান মানিক,মুক্তিযুদ্ধের প্রতিদিন মার্চ-ডিসেম্বর ১৯৭১; রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে; রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী, ৭১ এর দশমাস; নাজিমুদ্দীন মানিক,একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলো; আজাদ ১৮ মার্চ, ১৯৭১]

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ গবেষক

news24bd.tv/ডিডি