বঙ্গবন্ধু বললেন 'পেয়েছি আমার মিতাকে পেয়েছি'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (ফাইল ছবি)।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস

বঙ্গবন্ধু বললেন 'পেয়েছি আমার মিতাকে পেয়েছি'

মু. জোবায়ের হোসেন

বাঙালী জাতির হাজার বছরের প্রতিক্ষার আলো হয়ে আজকের এই দিনে ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মধুমতি বিধৌত পাটগাতি সংলগ্ন টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফুর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুন দম্পতির কোলে এসেছিলেন সেই ছোট্ট খোকা। রোববার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এর ১০৪ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস।

আজীবন নিপীড়িত, বঞ্চিত, অসহায় মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত ছিলেন সেই ছোট্ট খোকা।

অধিকার হারা জাতির আহবানে সাড়া দিয়ে ছোট্ট খোকা জাতির স্বাতন্ত্র্য্বোধ, স্বাধিকার, সংস্কৃতিকে রক্ষা করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের উত্তপ্ত দিনগুলোতে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি থাকার পরও গোপনে গোপনে ছাত্র নেতৃবৃন্দকে আন্দোলনের পরামর্শ দিতেন এবং মুসলিম লীগের নিপীড়িত মহিউদ্দিনসহ ১৩ দিন অনশন করেছিলেন।

পাকিস্তানি ইস্পাত-কঠিন শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বারবার স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে বারংবার জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে।

৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা, ৬৯'র গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আপসহীন, অকুতোভয়, অবিসংবাদিত নেতা বারবার জেলের মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকার পরও কোন আপস করেননি; নীতি আদর্শের প্রতি অবিচল ও অটল ছিলেন ।

১৯৯৩ সালে জাতির পিতার জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস পালনের প্রস্তাব করেন প্রয়াত অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিম। ১৯৯৪ সালের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বেসরকারিভাবে প্রথমবার দেশে জাতীয় শিশু কিশোর দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৬ সালের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়।

জাতির পিতা শিশুদের উন্নয়নে চারটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন- শিশুদের কল্যাণের জন্য মায়েদের সম্পৃক্ত করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর গঠন; শিশুদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য গড়েছিলেন শিশু একাডেমি। এখানে উল্লেখ্য যে, এ দুটি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধুর সবসময়ই করতেন; শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের সে সময়ের আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সাহসী ও যুগান্তকারী; শিশু অধিকার রক্ষাকবচ হিসেবে ১৯৭৪ সালের ২২শে জুন শিশু আইন জারি করেন।

১৯৭৪ সালে গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে তৎকালীন শিশুপার্কে আয়োজিত শিশুমেলা শেষে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শিশুরা দেখা করতে আসে। শিশুরা চাইলেই বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে পারত। তিনি তাদের মিষ্টি উপহার দেন এবং প্রত্যেকের নাম জিজ্ঞেস করেন। একটি শিশু তাঁর নাম মুজিবুর রহমান বলায় বঙ্গবন্ধু আদর করে কোলে তুলে নিয়ে উচ্ছ্বাসের সাথে বললেন, 'পেয়েছি, আমার মিতাকে পেয়েছি'।

জাতির পিতার এ রকম হাজারো ঘটনাবহুল স্মৃতি রয়েছে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে। নিষ্পাপ শিশুদের মতো সরল-সাবলীল জীবনাচরণ ছিল জাতির পিতার। কিন্তু সেই উদ্যত কালো হাত জাতির পিতার স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করার জন্য শিশুসুলভ, সহজ-সরল শিশু অন্তঃপ্রাণ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।  

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন মন্ত্রিসভা ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে "জাতীয় শিশু দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ থেকে দিনটি সরকারিভাবে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

লেখক: সহকারি শিক্ষক, অধ্যাপক মাও. মুহাম্মদ উল্লাহ মডেল মাদরাসা ও শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

news24bd.tv/TR