কাকরাইলে জোড়া খুনে অস্ত্র কেনা হয় নিউমার্কেট থেকে

হত্যার অভিযোগে আটক জনি (বামে), ডানে হত্যার শিকার মা-ছেলে

'মূল হোতার' স্বীকারোক্তি

কাকরাইলে জোড়া খুনে অস্ত্র কেনা হয় নিউমার্কেট থেকে

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

রাজধানীর কাকরাইলে চাঞ্চল্যকর মা-ছেলে খুনের ঘটনায় মূলহোতা আল-আমিন জনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ব্যবসায়ী আব্দুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তার ভাই। বোনের পারিবারিক ঝামেলা দূর করতেই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

আজ  শনিবার (০৪ নভেম্বর) সকালে গোপালগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের কাছে প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে জনি এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। শনিবার বিকাল সাড়ে চারটায় কারওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য জানান।

জনি জানায়, নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসার পর নানামুখী সমস্যায় পড়েছিলেন তার বোন শারমিন মুক্তা। তিন-চার মাস আগে করিমের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ঘটনার তিন-চার দিন আগে মুক্তা আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। জনি মনে করে, বোনের এসব সমস্যার জন্য করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারই দায়ী। এরপরই সে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।  

তবে শাওনকে হত্যার কোন উদ্দেশ্য ছিল না। মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলেই শাওন প্রাণ হারায় বলে জানিয়েছেন জনি।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মুক্তা ব্যবসায়ী আব্দুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী। চার বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। মুক্তা তার মা ও ভাই জনিকে নিয়ে নরসিংদীতে থাকতেন। সম্প্রতি তিনি মা-ভাইকে নিয়ে ঢাকায় এসে একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। কাকরাইলের বাসাটি (ঘটনাস্থল) ছিল শামসুন্নাহারের নামে।

ঢাকায় আসার পর থেকে স্বামী করিমের সঙ্গে আর্থিক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় মুক্তার। ব্যবসায়ী করিমের অধিকাংশ সম্পত্তি প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের নামে। এ নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়।

র‌্যাবকে জনি জানায়, তিন-চার মাস আগে করিমের সঙ্গে মুক্তার বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর ঘটনার তিন-চার দিন আগে মুক্তা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে পরিবারের সদস্যরা বাসায় থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ওই সময় বাসায় করিম এবং জনিও ছিলেন।

মুফতি মাহমুদ জানান, বোনের এই পারিবারিক সংকটের জন্য করিমের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারকে দায়ী করে জনি। ওইদিনই সে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ৩১ অক্টোবর নিউমার্কেট থেকে সে একটি ধারালো অস্ত্র কেনে। সুযোগ বুঝে ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় সে ওই বাড়িতে যায়। কলিংবেল চাপলে গৃহকর্মী দরজা খুলে দেয়। পরে গৃহকর্মী রান্নাঘরে ঢুকলে জনি রান্নঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। ঘটনার সময় শামসুন্নাহার ও তার তৃতীয় সন্তান শাওন ছিলেন বাসায়।

মুফতি মাহমুদ বলেন, জনি তাদের ঘরে ঢুকে প্রথমে শাওনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে বলে, ‘এখানে বসে থাকো। আমি তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলব। ’ এরপর শামসুন্নাহারকে সে একের পর এক ছুরিকাঘাত করে। শাওন মাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তার গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে জনি। শাওন দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে সে সিঁড়িতে পড়ে যায়। এদিকে, বাসা থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে জনি দারোয়ানকে বলে– ওপরে ঝামেলা হচ্ছে, আপনি যান। বলে সে ভবন থেকে বেরিয়ে আসে।

শামসুন্নাহারের বাসায় ঢোকার আগেই পাশের পরিত্যক্ত একটি ভবনে নিজের এক সেট জামাকাপড় রেখে এসেছিল জনি। হত্যাকাণ্ডের পর ওই ভবনে গিয়ে সে কাপড় পাল্টায়। হত্যাকাণ্ডের সময় জনি নিজেও সামান্য আহত হয়েছিল। এজন্য পাশের ক্লিনিকে গেলেও সঙ্গে টাকা কম থাকায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়।

এরপর সে প্রথমে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেয়। পরে গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর চলে যায়। পথে পদ্মায় নিজের রক্তমাখা কাপড় ও অন্যান্য জিনিস ফেলে দেয়।

র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

সম্পর্কিত খবর