রমজান পালনের আদর্শ

রমজান পালনের আদর্শ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

রমজানের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে মুসলমানগণ অবহিত আছে। অবহিত আছে এই মাসের বিশেষ করণীয় সম্পর্কে। রসুলুল্লাহ (সা.) এই মাসটি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। এই মাসে ইবাদত-বন্দেগিতে তিনি সময় বেশি দিতেন।

কোরআন তিলাওয়াত ও দান-সদকা সবই অধিক পরিমাণে পালন করতেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ভালো কাজে সব মানুষ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন। রমজানে তিনি আরও অধিক পরিমাণে উদারতা অবলম্বন করতেন। ’ (সহিহ বোখারি, হা. ১৯০২)।

রমজান মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, মাগফিরাত ও ক্ষমার অভাবনীয় অফার রয়েছে। মহানবী (সা.) এই অফার গ্রহণের জন্য সর্বপ্রকার শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করতেন। যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ তাঁর এই আদর্শ অনুসরণ করেছেন। রমজানের বরকত লাভের আশায় তারা সার্বাত্মক সাধনা করেছেন।

তাদের জীবনীর দিকে তাকালে আমরা রমজান পালনের নিয়ম পদ্ধতি খুঁজে পাই। পাই রমজানের কল্যাণ লাভে ত্যাগ সাধনার সফল উদাহরণ এবং উত্তম আদর্শ। অন্তরে জাগ্রত হয় অফুরন্ত আগ্রহ-অনুপ্রেরণা। রমজানে তারা ইবাদত-বন্দেগির প্রতিযোগিতায় উপনীত হতেন। এই মাসে তাদের আমলে বসন্ত বিরাজ করত।

কুতুবে আলম রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.)-এর জিকির, তিলাওয়াত ও ত্যাগ-সাধনা দেখে লোকজন বিস্মিত হতো। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে অতিবাহিত করতেন। এই মাসে তিনি প্রতিদিন মাগরিবের পর ২০ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। এই ২০ রাকাত নামাজে তিনি দুই পারার অধিক তিলাওয়াত করতেন। রুকু, সেজদা হতো অনেক দীর্ঘ। এশার পর তিনি ২০ রাকাত তারাবি আদায় করতেন দীর্ঘ সময়ে এবং অনেক যত্ন সহকারে। প্রথম ১০ রাকাত তিনি নিজেই পড়াতেন। শেষ ১০ রাকাত পড়াতেন সাহেবজাদা হাফেজ মাসউদ আহমদ।

অতঃপর অল্প সময় বিশ্রাম নিয়ে রাত ১টা বা ২টার সময় তাহজ্জুদের জন্য তিনি জাগ্রত হতেন। সাহরি পর্যন্ত তিনি নামাজ ও জিকিরে অতিবাহিত করতেন। ফজরের পরও তিনি ঘুমাতেন না। বরং ইশরাক আদায় করে মাত্র দুই ঘণ্টা তিনি বিশ্রাম নিতেন। চাশত নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতেন। জোহর নামাজ আদায় করে আসর পর্যন্ত কোরআনুল কারিম তিলাওয়াত করতেন।

হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.) সম্পর্কে থানবী (রহ.) বর্ণনা করেন, তিনি যুবক বয়স থেকেই রমজান মাসে রাতে বিছানায় পিঠ লাগাননি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নামাজ, জিকির ও তিলাওয়াত করা এবং শোনার মাধ্যমে রাত কাটাতেন। শাইখুল হাদিস আল্লামা যাকারিয়া (রহ.) জীবনের শেষ দুই বছর ব্যতীত গোটা জীবন নিজেই তারাবির ইমামতি করেছেন।

নিয়মিত তিনি মেহমান নিয়ে ইফতার করতেন। তারাবি নামাজে যে পারা পড়া হতো সেই পারাটি তিনি নিয়মিত ওই দিন মাগরিবের নামাজের পর আউয়াবিন নামাজে তিলাওয়াত করতেন। তারাবির পর কিছুক্ষণ তিনি বিশ্রাম নিয়ে গোটা রাত নামাজ, দোয়া, জিকির ও তিলাওয়াতে মগ্ন থাকতেন। হজরত থানবী (রহ.) সারা বছরই অর্ধরাতের পর তাহাজ্জুদের জন্য জেগে যেতেন।

মহান প্রভু রসুলুল্লাহ (সা.)-কে নির্দেশ করে বলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত! রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন, কিছু অংশ ব্যতীত, অর্ধরাত্রী অথবা তৎপেক্ষা কিছু কম।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা 

এই রকম আরও টপিক