রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল

 মাইমুনা আক্তার

অফুরন্ত কল্যাণের মাস পবিত্র মাহে রমজান। কোনো মুমিন এই মাসকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে, তার জীবনের সব গুনাহ মাফের ঘোষণা আছে। তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। নিম্নে পবিত্র মাহে রমজানের আমলগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো—

১. গুরুত্বসহ রোজা রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রমজানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮)

২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া : আমর ইবনু সাঈদ ইবনুল আস (রা.) বলেন, আমি উসমান (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তিনি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিমের যখন কোনো ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হয় আর সে উত্তমরূপে নামাজের অজু করে, নামাজের নিয়ম ও রুকুকে উত্তমরূপে আদায় করে, তাহলে যতক্ষণ না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হবে তার এই নামাজ তার পেছনের সব গুনাহর জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আর এ অবস্থা সর্বযুগেই বিদ্যমান।

(মুসলিম, হাদিস : ৪৩১)

৩. রাত জেগে ইবাদত করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭)

কারো কারো মতে এখানে রাত জেগে ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য তারাবির নামাজ।

৪. বেশি পরিমাণে সদকা করা : ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সর্বাপেক্ষা বেশি দানশীল ছিলেন। তাঁর দানশীলতা বহুগুণ বর্ধিত হতো রমজানের পবিত্র দিনে যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন।

জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে দেখা করে কোরআনের সবক দিতেন। রাসুল (সা.) কল্যাণ বণ্টনে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৪)

৫. রোজাদারকে ইফতার করানো : জায়েদ ইবনে খালিদ আল জুহানি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পায়। কিন্তু এর ফলে রোজাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

৬. কোরআন তিলাওয়াত করা : আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য শাফাআত করবে।

সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মেটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফাআত কবুল করুন। কোরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে। ’ (শুআবুল ঈমান : ১৮৩৯)

৭. ইবাদতে জোর দেওয়া : আয়েশা (রা.) বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন রাসুল (সা.) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

৮. লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করা : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। ’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

৯. সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ করা : কারণ পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ পালনে হজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজান মাসের ওমরাহ (সওয়াবের ক্ষেত্রে) হজের সমতুল্য। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৯১)

১০. শেষ দশদিন ইতিকাফ করা : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। (বুখারি, হাদিস : ২০২৬)

১১. দোয়া, জিকির ও ইস্তিগফারে মগ্ন থাকা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদার যখন ইফতার করে, ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, ৩. মজলুমের দোয়া...। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো জিনিস নেই। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৯)

তাই রমজানে আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হতে বেশি বেশি দোয়া-জিকিরে সময় কাটানো আবশ্যক।

মহান আল্লাহ সবাইকে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে রমজানের সৌভাগ্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন।

এই রকম আরও টপিক