সিরাজগঞ্জ বেলকুচি উপজেলায় হুড়াসাগর নদীর উপর ৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজের পিলারের চারপাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গভীর রাতে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে মোবাইল লাইটের আলোয় ওই ফাটল সিমেন্ট ও বালু দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টাকালে স্থানীয় জনতা চোর ভেবে দুই মিস্ত্রিকে আটক করেছে।
এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজ করায় ব্রিজের পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী অবিলম্বে ব্রিজটি ঝুঁকিমুক্তভাবে সম্পন্নসহ নির্বাহী প্রকৌলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর কুমার পোদ্দার ও আব্দুর রহমান জানান, আশেপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে কয়েক লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বেলকুচি উপজেলার চরজোকনালা এলাকায় হুড়া সাগর নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ করছে এলজিইডি। প্রায় ৩-৪ বছর যাবত ব্রিজটির কাজ চলমান রয়েছে। কাজ খুবই ধীর গতিতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী বলছে, পানি কমে যাওয়ার কারণে চারটি পিলারের মধ্যে একটি পিলারের নিচে ফাটল দেখা যায়। নিম্নমানের কাজের কারণে পিলারের নিচের অংশ থেকে চারপাশে ঢালাই প্লাস্টার খুঁলে গেছে এবং রডগুলো বাকা হয়ে গেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রাতের আধাঁরে মিস্ত্রি দিয়ে সেটা কোনো মতে ঢেকে দিতে চেয়েছিল। মিস্ত্রিরা দায়সারাভাবে যদি পিলারের অংশ ঢেকে দিয়ে চলে যেত, তবে পরবর্তীতে নির্মাণ কাজ শেষে হলে ব্রিজের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করলে ব্রিজ ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।
রাতের আধাঁরে কাজ করতে আসা মিস্ত্রি শফিকুল ও স্বাধীন জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন আমাদের ২০ হাজার টাকা বিনিময়ে রাতে গিয়ে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ফাটলের স্থান ভরাট করে দিতে বলেছিলেন। তাই বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে মোবাইলের আলো জ্বেলে কাজ করছিলাম। কাজ শুরুর পরই স্থানীয় লোকজন আমাদের আটক করে।
ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম তুহিন জানান, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় নির্মাণের আগেই পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। সঠিকভাবে মেরামত করা না হলে ভবিষ্যতে চলাচলরত মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে মধ্যে পড়বে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার রোকনুজ্জামান জানান, ব্রিজের কাজ ২০২১ সালের প্রথম দিকে কাজ শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে আমি দেখভাল করছি। আগে যখন কাজ করেছে তখন পানি ছিল, পানির মধ্যে তো আর দেখা যায় না। কাজের সুবিধার্থে দুদিন হলো সেচের মাধ্যমে পানি কমালে ফাঁটল চোখে পড়েছে।
এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাগর জানান, বর্ষা মৌসুমে স্টীলের ফর্মা দিয়ে কাজ করার সময় হানিকম্ব হওয়ার কারণে সমস্যাটি হয়েছে। পরে উপজেলা প্রকৌশলীসহ কর্তৃপক্ষের পরামর্শে সেটা বন্ধ করতে গেলে এলাকাবাসী চাঁদা দাবি করে। যার কারণে দিনে কাজ না করে রাতে মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করাতে চেয়েছিলাম।
সিরাজগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম জানান, ব্রিজের পিলারে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। পানির কারণে প্লাস্টার কংক্রিটগুলো খুঁলে গেছে। ব্রিজ নির্মাণে অভিজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে পিলারটি মেরামত করা হবে।
এছাড়া ঠিকাদার কেন রাতের আধারে ইট-বালু সিমেন্টের প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করছিল এমন বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
news24bd.tv/SHS