জুয়েলারি শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ড. আতিউর রহমান

জুয়েলারি শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ড. আতিউর রহমান

সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার বিচারে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে এক যুগসন্ধিক্ষণে রয়েছে। আমাদের সামনে একদিকে রয়েছে বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় অচিরেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হিসেবে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশাজাগানিয়া সম্ভাবনা।
অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আর তার জেরে আমাদের নিজেদের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতাগুলো আরও প্রকট হয়ে সামনে আসার ফলে সৃষ্ট নানাবিধ আর্থসামাজিক চ্যালেঞ্জ। এমনি সব বাস্তবতায় রপ্তানি বৈচিত্র্যময় করার কোনো বিকল্প নেই।

আর তাই জুয়েলারি খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ে নীতি মনোযোগের প্রয়োজন অপরিহার্য। প্রথমত, জুয়েলারি খাতের বৈশ্বিক বাজার এবং এ খাতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের কারণেই এ খাতের বিকাশ নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবা দরকার। বিশ্বে যত রকম বাণিজ্যিক পণ্য লেনদেন হয় তার মধ্যে স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারের অবস্থান ষষ্ঠ। ২০১৯ সালে বিশ্বে স্বর্ণালংকারের বাজারের আকার ছিল ২২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
২০২৫ সাল নাগাদ এই বাজারের আকার আরও ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো বাড়বে বলে প্রক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও স্বর্ণালংকার শিল্প উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বর্ধিষ্ণু থাকবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ স্বর্ণ আমদানিতে সামনের সারিতে নেই। স্বর্ণালংকার রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তবুও নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য হলেও স্বর্ণালংকার তৈরি করা ও তা বাজারজাত করার দীর্ঘ ঐতিহ্য আমাদের রয়েছে। স্বর্ণালংকার আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হওয়ায় পরিমাণে অন্য অনেক দেশের চেয়ে কম স্বর্ণালংকার এখানে তৈরি ও কেনাবেচা হলেও আমাদের স্বর্ণকারদের কাজের মান ও শিল্পবোধের সুনাম রয়েছে। কাজেই এ খাতে আমাদের শিল্পীদের দক্ষতা এবং নিজস্ব ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে স্বর্ণালংকারের ক্রমবর্ধমান বিশ্ববাজার ধরতে পারলে তা প্রকৃতপক্ষেই আমাদের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।

আমার মতে দ্বিতীয় যে কারণে স্বর্ণালংকার খাতের দিকে বাড়তি নীতি-মনোযোগ দরকার তা হলো এক্ষেত্রে আমাদের যে আপেক্ষিক সুবিধা আছে তা কাজে লাগানো। আমাদের স্বর্ণকারদের দক্ষতা ছাড়াও আমাদের তুলনামূলক তরুণ শ্রমশক্তিও এক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ আপেক্ষিক সুবিধা হতে পারে। আমাদের শ্রমশক্তির মধ্যম বয়স ২৭ বছরেরও কম (অন্যদিকে ভারতের ২৮ বছরের বেশি, চীনের ৩৭ বছরের বেশি)। কাজেই উদ্যোক্তা ও কর্মী- উভয়ই সেক্ষেত্রে তারুণ্যের শক্তি আমাদের জন্য সুবিধাজনক। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ১৯৮০-এর দশকে তুলনামূলক তরুণ এবং কম মজুরি প্রত্যাশা করা শ্রমিকদের ওপর ভর করেই আমরা আরএমজি রপ্তানিতে দ্রুত উন্নতি করেছি। কাজেই যথাযথ নীতি-সমর্থন দিতে পারলে স্বর্ণালংকার রপ্তানির ক্ষেত্রেও এই জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে চমক দেখানো সম্ভব হবে।
তরুণ শ্রমশক্তিকে স্বর্ণালংকার খাতে যথাযথভাবে নিয়োজিত করতে পারলে তা আমাদের কর্মসংস্থানের সামষ্টিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেও বিশেষ সহায়ক হবে। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, প্রতি বছর আমাদের শ্রমবাজারে নতুন মুখ ঢুকছে ২০ লাখ। অথচ বছরে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে মাত্র ২ লাখ। উল্লেখ্য, যে স্বর্ণালংকার খাত এ মুহূর্তে অতটা বিকশিত না হওয়ার পরও দেশজুড়ে ৪০ হাজারের বেশি স্বর্ণালংকারের দোকান/কারখানায় প্রায় এক লাখ মানুষের কাজ করে চলেছেন। এর সঙ্গে যারা পরোক্ষভাবে এ খাত থেকে উপার্জন করছেন তাদের যুক্ত করলে সংখ্যাটি প্রায় সাড়ে ৪০ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়। কাজেই কর্মসংস্থানের জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রেও রপ্তানিমুখী স্বর্ণালংকার খাতের বিকাশ সহায়ক হবে।

এ ছাড়াও আরও যে কারণে স্বর্ণালংকার খাতের বিকাশকে আমি বিশেষ করে জরুরি মনে করি তা হলো বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ তথা এফডিআই প্রবাহ বাড়ানো। সাম্প্রতিক ১০-১৫ বছরে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেকখানি বলশালী হলেও এফডিআই প্রবাহের ক্ষেত্রে আসলেই এখনো অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়ে গেছে। আমাদের নিট এফডিআই প্রবাহ এখনো জিডিপির ১ শতাংশেরও কম (২০২২ সালের হিসাব অনুসারে ০.৩ শতাংশ, ভারতের জন্য এ অনুপাত ১.৫ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৪.৪ শতাংশ)। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নিট এফডিআই প্রবাহ জিডিপির ৩ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। স্বর্ণালংকারের ক্ষেত্রে আমাদের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য, স্বর্ণকারদের দক্ষতা ও শিল্পবোধ ইত্যাদির বিচারে আমাদের স্বর্ণালংকার খাতে বিনিয়োগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ আগ্রহ থাকার কথা। এ খাতের অংশীজনরা এমন তথ্যই দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক জুয়েলারি ব্র্যান্ড ‘মালাবার’ বাংলাদেশে তাদের একটি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি স্থাপনের ফলে এমন ধারণা আরও জোরদার হয়েছে। এর পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপের জুয়েলারি রিফাইনারি নির্মাণ সম্পন্ন হলে এই শিল্পের বিকাশের সুযোগ আরও বাড়বে।

এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার যে, রপ্তানির পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব বাজারে স্বর্ণালংকারের চাহিদাও আগামী দশকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়বে বলে মনে হয়। কেননা ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা বিশ্বের নবম বৃহত্তম কনজুমার ইকোনমি হব। তখন এ দেশের পরিবারগুলোর এক-তৃতীয়াংশই থাকবে মধ্য ও উচ্চ আয়ের ভোক্তা। কাজেই তাদের মধ্যেও স্বর্ণালংকারের মতো শৌখিন দামি পণ্যের চাহিদা বাড়বে। এই বাজার ধরার জন্যও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানকার স্বর্ণালংকার খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। দেশজ বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বর্ণালংকার শিল্প বিকশিত না করতে পারলে তখন এখানকার ক্রেতারাও বিদেশি স্বর্ণালংকারের দিকে ঝুঁকবেন।

স্বর্ণালংকার খাতের এই সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে প্রথমেই নজর দিতে হবে এ খাতের ওপর প্রযোজ্য কর-কাঠামোর দিকে। এখন স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে যে কর-কাঠামো রয়েছে তা এমনভাবে সাজানো যাতে করে রপ্তানিকারকরা নিরুৎসাহিত হন। দেশের আর সব ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের মতো স্বর্ণালংকার শিল্পও কাঁচামাল (স্বর্ণ, হীরা, অন্য দামি রত্ন ইত্যাদি)-এর জন্য মূলত নির্ভর করে আমদানির ওপর। কিন্তু কর কাঠামোর কারণে স্বর্ণ আমদানি বাবদ আমাদের আমদানিকারকদের সম্ভাব্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। যেমন : কাঁচা স্বর্ণ ও আংশিক রিফাইনড স্বর্ণ আমদানিতে এখন যথাক্রমে ৫ ও ১০ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি দিতে হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারের দাম বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ৫-১০ শতাংশ বেশি হচ্ছে।

স্বর্ণালংকার তৈরির অন্যান্য উপাদানের ওপর যে ট্যারিফ আরোপ করা আছে তা বিবেচনায় নিলে গড় নিট প্রটেকশন রেট দাঁড়ায় ১৪ শতাংশের মতো। স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারে ব্যবহৃত অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে এমন বাড়তি কর থাকলেও স্বর্ণালংকার রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। এতে স্বর্ণালংকার তৈরি করে দেশে বিক্রি করাটা যতটা লাভজনক, বিদেশে রপ্তানি করাটা ততটা লাভজনক থাকে না।

এদ্দিন ব্যাগেজ রুলের সুযোগ নিয়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনা হতো। হালে এই সুযোগ কমেছে। অবশ্য ব্যাগেজে করে স্বর্ণ নিয়ে আসার ওপর নির্ভরশীল থাকাটিও মোটেও সন্তোষজনক অবস্থা নয়। এতে পুরো খাতের মধ্যে এক ধরনের অনানুষ্ঠানিকতা বিরাজ করে। সত্যি বলতে আমাদের দেশে মোট যত স্বর্ণ আসে তার মধ্যে ৮০-৯০ ভাগ এমন অনানুষ্ঠানিকভাবেই আসে। তার মধ্যেও একটি বড় অংশ আসে চোরাচালানের মাধ্যমে। অবৈধ পথে স্বর্ণ দেশে ঢোকার ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে এ খাতকে আনুষ্ঠানিক কাঠামো দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রেও বড় প্রতিবন্ধকতা থেকে যাচ্ছে।

আরও যে বড় চ্যালেঞ্জ এক্ষেত্রে রয়েছে তা হলো- দক্ষতা তৈরি ও ধরে রাখা এবং স্বর্ণালংকার খাতে যুক্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের অভাব। আমাদের জনশক্তি তুলনামূলক তরুণ হলেও তরুণদের এ খাতে যুক্ত করা এবং দক্ষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় বাধা আছে। স্বর্ণকার হিসেবে আগে বংশানুক্রমে অনেক পরিবারের সদস্যরা কাজ করলেও, এ খাতে যুক্ত থাকার অর্থনৈতিক সুফল ক্রমান্বয়ে কমছে (কারণ খাতটি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত হচ্ছে না)। ফলে তরুণ কর্মীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। প্রবীণ স্বর্ণকারদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ শিখে তারপর মোটামুটি ভালো আয়-রোজগার শুরু করতে যে দীর্ঘ সময় দরকার অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে তা অধিকাংশ তরুণ কর্মীদের নেই। আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের সুযোগ তাই ভীষণ দরকার। শুধু তাই নয় রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে বিকশিত করতে চাইলে বিশ্ব বাজারের চাহিদার সঙ্গেও তাল মেলানো চাই। সে জন্যও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দরকার। ব্যবসাবান্ধব কর-কাঠামো হোক কিংবা শিল্পী/কর্মীদের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের দাবিতে হোক অথবা এ খাতের বিকাশের জন্য দরকারি অন্য ইস্যুতেই হোক- যে কোনো কিছু নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যৌথ দরকষাকষির জন্য এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনদের আকর্ষণের জন্য এ খাতে যুক্ত উদ্যোক্তাদের একটি সাধারণ মঞ্চ থাকা দরকার (আরএমজি খাতের জন্য যেমন আছে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ)। বাজুস তথা বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন এক্ষেত্রে কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। তারা এ খাতে যুক্ত উদ্যোক্তাদের মোটামুটি অর্ধেককে এক ছাতার নিচে আনতে পেরেছেন। তাদের সাধুবাদ জানাতে হবে। তবে সমবেত এই মঞ্চে অবশিষ্ট অংশীজনদেরও যত দ্রুত সম্ভব যুক্ত করা চাই। একই সঙ্গে আড়াই হাজারে জাপানি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট অংশে স্বর্ণ উদ্যোক্তাদের জায়গা দিলে তারা দেশে বিদেশে স্বর্ণালংকার রপ্তানির ব্যবস্থা করতে পারবেন।

স্বর্ণালংকার খাতের প্রত্যাশিত বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ যে রয়েছে তা তো দেখাই যাচ্ছে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই এই চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে মনোনিবেশ করবেন এবং এ খাতের অংশীজন (যেমন : বাজুস)-এর সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন। জনস্বার্থের প্রতি সদাসংবেদনশীল নীতিনির্ধারকদের স্বর্ণালংকার খাতের বিকাশে মনোযোগী করতে তাদের সামনে সম্ভাবনাগুলো বেশি বেশি করে তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে তুলে ধরতে হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশ, বিশেষত ভারতের বিনিয়োগকারী/ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যুগপৎ কাজ করার সুযোগের বিষয়টি। ইতোমধ্যে ভারতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের স্বর্ণালংকার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্বর্ণালংকার রপ্তানিকারক দেশ। তাদের বিনিয়োগকারী/উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পারলে আমরাও নিশ্চয়ই দ্রুত স্বর্ণালংকারের বৈশ্বিক বাজারে বড় স্টেকহোল্ডার হয়ে উঠতে পারব। দক্ষতা বিনিময়ের এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পারি। তাতেও সুফল মিলবে। তবে স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারে কাঁচামাল আমদানির কর কাঠামো আর সহজ না করলে এই শিল্পের বিকাশ সত্যিই কষ্টকর থেকেই যাবে। তবে অনেক সময় কর-কাঠামো সহজ করলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার এক ধরনের আশঙ্কা অনেককে করতে দেখি। এই আশঙ্কাটি সঠিক নয়। কর-কাঠামো সহজ করলে বিনিয়োগ তো বাড়েই তার সঙ্গে সরকারের রাজস্বও আসলে বাড়ে। কেননা অল্পসংখ্যক বিনিয়োগকারীর ওপর উচ্চ হারে করারোপ করে যত রাজস্ব পাওয়া যায়, বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারীর ওপর সহনীয় হারে করারোপ করে তার চেয়ে বেশি রাজস্ব পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ফিকি) তাদের সাম্প্রতিক একটি প্রকাশনায় দেখিয়েছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ওপর কর ৩৩ শতাংশ কমানো হলে ২০৪১ সালের মধ্যে মোট এফডিআই তিন বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫১ বিলিয়ন ডলার হবে।  আর তাতে সরকারের রাজস্ব আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২২৭ বিলিয়ন ডলার হবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে স্বর্ণ শিল্পের কাক্সিক্ষত বিকাশের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা ও রাজস্ব সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য, রাষ্ট্র ছাড়াও সব অংশীজনকে একযোগে এই শিল্পের বিকাশে মনোযোগী হতে হবে। সে জন্য পর্যাপ্ত তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলার কাজটিও বিবিএসকে করতে হবে।

 লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

news24bd.tv/ডিডি