দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা দেবে যেসব খাবার

দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা দেবে যেসব খাবার

ইসরাত জাহান ইফাত

মুখ, দাঁত ও মাড়ির রোগ যেসব ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়, সেটি শুধু মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং খুব সহজে রক্তের সঙ্গে মিশে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন—হৃৎপিণ্ড, লিভার, অগ্ন্যাশয়, কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি হাড় ক্ষয় রোগও তৈরি করে, গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও প্রিম্যাচিওর নবজাতক প্রসবের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই দাঁত, মাড়ি ও মুখের সুস্থতা দেহের সার্বিক সুস্থতায় জরুরি।

খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে দাঁত ও মাড়ির রোগ অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। দাঁত ও মাড়ির সুস্থতায় সহায়ক কিছু খাবার হলো :

ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ‘ডি’
হাড়, দাঁত, মাড়ি ও দাঁতের এনামেল শক্ত ও মজবুত রাখতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মিলিগ্রাম এবং ফসফরাসের দৈনিক চাহিদা ৪০০ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারগুলো হলো—দুধ, দই, ছানা, পনির, চিয়া সিড, তিলবীজ, কাঠবাদাম, ব্রকলি, পালংশাক, ছোট মাছ, ছোলা, ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম ইত্যাদি।

আর ফসফরাসের উৎকৃষ্ট উৎস হলো—ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শিমের বিচি, সয়াবিন ইত্যাদি। আর ক্যালসিয়াম দেহে শোষিত হওয়ার জন্য দরকার ভিটামিন ‘ডি’-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ। ভিটামিন ‘ডি’র দৈনিক চাহিদা ৬০০ আইইউ। এর মূল উৎস সূর্যালোক। খাবারের উল্লেখযোগ্য উৎস হলো—ডিমের কুসুম, মাশরুম, কলিজা, তৈলাক্ত মাছ ইত্যাদি।

ম্যাগনেসিয়াম
রক্ত অতিমাত্রায় এসিডিক হলে দাঁত দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়। ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারগুলো এসিডের সমতা বজায় রাখে। ফলে দীর্ঘদিন দাঁত শক্ত ও মজবুত থাকে। ম্যাগনেসিয়ামের দৈনিক চাহিদা ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিগ্রাম। ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবারগুলো হলো—পালংশাক, কলা, গোটা দানাশস্য, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, তিসিবীজ, দুধ, দই, ছোলা, গুড়, মধু, গাঢ় সবুজ শাক ইত্যাদি।

ভিটামিন ‘সি’
মাড়ি থেকে রক্ত ঝরা ঠেকাতে নিয়মিত ভিটামিন ‘সি’-যুক্ত খাদ্য গ্রহণ জরুরি। মুখ, দাঁত ও মাড়ির প্রদাহ কমাতে এবং মাড়ির রক্তনালি উন্নত রাখতে সহায়তা করে ভিটামিন ‘সি’। ভিটামিন ‘সি’র দৈনিক চাহিদা ৭০ থেকে ৯০ মিলিগ্রাম। এ জন্য খাদ্যতালিকায় নিয়মিত আমলকী, পেয়ারা, আনারস, লেবু, কমলা, মাল্টা, পাকা পেঁপে, ক্যাপসিকাম, কিউই, পালংশাক, ধনেপাতা ইত্যাদি খাবার রাখা উচিত।

ভিটামিন ‘কে’
দাঁতের ক্যাভিটি বা গর্ত হওয়া প্রতিরোধ এবং মাড়ির রক্তক্ষরণ দূর করতে প্রতিদিন ভিটামিন ‘কে’-সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ জরুরি। রক্ত জমাটকরণের মাধ্যমে মাড়ির রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারে ভিটামিন ‘কে’। এর দৈনিক চাহিদা ৯০-১২০ মাইক্রোগ্রাম। তাই নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখুন ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, শসা, পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, কিউই, সবুজ আঙুর, মটরশুঁটি, বরবটি ইত্যাদি।

আঁশযুক্ত খাবার
শাক-সবজি, মৌসুমি রঙিন ফলমূল ও সবজিতে প্রচুর আঁশ ও জলীয় অংশ থাকায় এসব খাবার দাঁত ও মাড়ির পরিচ্ছন্নতাকারী হিসেবে কাজ করে। এই খাবারগুলো যখন খুব ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া হয়, তখন তা দাঁতের ক্যাভিটি প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ জন্য খাওয়া যেতে পারে আখ, শসা, আপেল, তরমুজ, বিট, গাজর, পেয়ারা, শাক-সবজি ইত্যাদি। এর দৈনিক চাহিদা ৩০ গ্রাম।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার
মুখ, দাঁত ও মাড়িকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষা দিতে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার, যেমন—বেরিজাতীয় ফল আমলকী, স্ট্রবেরি, আঙুর, জাম ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। এসব খাবারে থাকা পলিফেনোল নামের উচ্চমানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দাঁতের ক্যাভিটি প্রতিরোধে বেশ সহায়তা করে। অন্যদিকে পান করা যেতে পারে গ্রিন টি। এতে থাকা ফ্যাভোনয়েডস নামের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও স্বাস্থ্যকর কোষ বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং মুখের দুর্গন্ধ ও মাড়ির রক্তপাত দূর করে।

ভিটামিন বি২, রিবোফ্লাভিন
ভিটামিন বি২ এবং রিভোফ্লাভিন-সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে জিহ্বা ও মুখে ঘা হয়। এর সমাধানে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় গোটা দানাশস্য, দুধ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। এর দৈনিক চাহিদা ১-১.৫ মিলিগ্রাম।

ফ্লোরাইড
দাঁতের সুরক্ষায় ফ্লোরাইডযুক্ত খাদ্য, যেমন—পালংশাক, টমেটো, তৈলাক্ত মাছ ইত্যাদির জুড়ি নেই। এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন।

পানি
প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করা উচিত। এর মাধ্যমে মুখ, দাঁত ও মাড়িতে লেগে থাকা স্টিকি শর্করা বা সুগারজাতীয় খাবার, এসিড, সূক্ষ্ম খাদ্যকণা পরিষ্কার হয়।

লেখক : ক্লিনিক্যাল ডায়েট অ্যান্ড নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট, ইডাব্লিউ ভিলা মেডিকা বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক