রমজানের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে মুসলমানগণ অবহিত আছে। অবহিত আছে এই মাসের বিশেষ করণীয় সম্পর্কে। রসুলুল্লাহ (সা.) এই মাসটি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। এই মাসে ইবাদত-বন্দেগিতে তিনি সময় বেশি দিতেন। কোরআন তিলাওয়াত ও দান-সদকা সবই অধিক পরিমাণে পালন করতেন।
রোজা ফারসি শব্দ, অর্থ উপবাস থাকা। কোরআন-হাদিসে এটিকে সিয়াম বলে। রোজা শব্দটিই প্রচলিত।
তবে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকলেই রোজার হক আদায় হয়ে যাবে না। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং অন্যান্য আমল ও ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতে হবে, তবেই রোজার পূর্ণ হক আদায় হবে।
কিন্তু আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ দেখতে পাই, যারা রোজা রেখেও আরেকটি ফরজ ইবাদত নামাজ ছেড়ে দেয়। রোজা রাখা সত্ত্বেও অন্যের ওপর জুলুম থেকে বিরত হয় না। সুদ, ঘুষ ও হারাম ভক্ষণের মতো ভয়াবহ পাপ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে পারে না। রোজা রেখেও কিছু মানুষ মাপে কম দেয়। রোজার মতো মহান আমলটি করা সত্ত্বেও গিবত ও পরনিন্দা, চোগলখুরি, অপর ভাইয়ের সম্মানহানি ইত্যাদিতে কিছু মানুষ ব্যস্ত সময় কাটায়।
সত্যি কথা হলো, এ ধরনের রোজাদারদের রোজার কোনো মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। বরং এটি নিছকই কিছু সময় ক্ষুধার্ত থাকা। আর কিছু নয়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অশ্লীল কাজ ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করার কোনো মূল্য নেই। ’ (বুখারি, হাদিস, ৬০৫৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৬৮৯)
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রোজা হলো বান্দার জন্য ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না এটাকে সে ভেঙে না ফেলে। ’ বলা হলো, ‘এটা কীভাবে ভাঙা হয়?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘মিথ্যা অথবা গিবত তথা পরনিন্দার মাধ্যমে। ’ (আল মুজামুল আওসাত: ৪৫৩৬)
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) আরেক বর্ণনায় বলেন, নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, রোজা থেকে তার প্রাপ্য কেবলই ক্ষুধার্ত থাকা ও পিপাসার্ত থাকা। এবং অনেক রাতের নামাজ আদায়কারী এমন আছে, যাদের এ নামাজের অংশ শুধুই দাঁড়িয়ে থাকা। ’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৪৮১)
অর্থাৎ রোজার শিষ্টাচার বজায় না রাখার কারণে এবং রোজার সম্মান বিনষ্ট করার কারণে আল্লাহর কাছে সেটা আর গৃহীত হয় না। ফলে সেটা একেবারেই মূল্যহীন হয়ে যায়।
রোজা তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যম :
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) অবলম্বন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৩)
যেহেতু রোজা আল্লাহর বিধান এবং আমাদের জন্য তা ফরজ করা হয়েছে, তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রোজা পালন ও রোজার অন্যান্য হক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। (মুসলিম, হাদিস, ২৭৬০)
রমজান পেয়েও যে হতভাগা :
জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। তার কথার সাথে একমত পোষণ করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমিন বলেছেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রমজানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমের অভিশাপ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।
news24bd.tv/aa