উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন যায় যে গ্রামের মানুষের

ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি (প্রতিনিধির পাঠানো ছবি)

উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন যায় যে গ্রামের মানুষের

নড়াইল প্রতিনিধি

সন্ত্রাসের কবলে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার তেলকাড়া গ্রাম আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করতে সন্ত্রাসীরা বাড়ি বাড়ি হামলা-হুমকি, ভাংচুর-লুটপাটের মধ্য দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করায় মানুষ চরম আতঙ্কে দিন যাপন করছে। বন্ধ হয়ে গেছে শিশু কিশোরদের লেখাপড়া। এলাকার টিউবওয়েলগুলো লুট করে নিয়ে যাওয়ায় রমজানে রোজা রাখতে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে এলাকার মানুষ বেশ কষ্টে আছে।

তবে পুলিশের দাবি পরিস্থিতি ততোটা খারাপ নয়। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গ্রামের বিবদমান দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন ঘরবাড়ির টিনের চালা, বেড়া, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছে। হামলায় ভাংচুরের চিহ্ন বিরাজ করছে।

বসতঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, কোন কিছুই বাদ পড়েনি এই হামলা থেকে। নান্টু সিকদার, ফুলমিয়া, পান্নু সিকদার, কদম মিয়া, রবিউল সিকদার, শিমুল সিকদার, হাফিজুর সিকদার, এরশাদ, মন্নু, মাফিকুল সিকদারের বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুরের আলামত রয়েছে।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে তেলকাড়া গ্রামের লিয়াকত শেখ, কামাল শেখ, আস্রোফ মোল্যা, মিলন, লিংকন, রাজিব, সবুজের নেতৃত্বে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একই গ্রামের ইউপি সদস্য নান্টু সিকদারের নেতৃত্বে এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলে লিয়াকত শেখ, কামাল, আস্রোফ মোল্যার সন্ত্রাসী বাহিনী শান্তিপ্রিয় মানুষের উপর হামলা করে।

নিজেদের পৈতৃক ভিটায় বসবাস করতে মোটা অঙ্কের চাঁদা ধার্য করা হচ্ছে গ্রামবাসীর উপর। আতঙ্ক ছড়াতে ঘটছে আগুন দেয়ার ঘটনাও। গ্রামের মহিলারা সম্ভ্রম রক্ষায় পাশের গ্রামে গিয়ে তাবু টানিয়ে দল বেঁধে রাত যাপন করছে। টিউবওয়েলগুলো লুট করে নেয়ায় মাহে রমজানে রোজা রেখে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছে। ৩০টির অধিক ঘরবাড়ি বসতির ক্ষতি সাধনসহ নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, ফসলাদি, বাড়ির ব্যবহার্য নানা মালামাল লুটে নিয়ে অনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীরা অরাজক পরিস্থিতি উত্তরণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিচার চেয়েছেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের। তেলকাড়া গ্রামের মওলানা সামসুল হকের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা অভিযোগ করেন, তার স্বামী মসজিদের ইমামতির পেশার সুবাদে কর্মস্থল গোপালগঞ্জে অবস্থান করেন। শিশু সন্তানদের নিয়ে বাড়ি থাকেন তিনি। গ্রামে থাকতে হলে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে মিশকাত শেখের ছেলে সবুজ তার ঘাড়ে রামদা ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে গেছে। এ অবস্থায় তিনি যে কোন সময় হামলার শঙ্কায় আছেন। তেলকাড়া জামে মসজিদের মোয়াজ্জিম হেকমত শেখ বলেন, টিউবওয়েল খুলে নিয়ে যাওয়ায় রমজানে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

তেলকাড়া-করগাতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হক জানান, বিগত দেড় মাস যাবত এলাকাজুড়ে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে, আতঙ্কে ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। কোন সভ্য সমাজে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না। তিনি এলাকায় শান্তি ফেরাতে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

সংশ্লিষ্ট কোটাকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান আল মামুদ বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার-কে কেন্দ্র করে তেলকাড়া গ্রামের লিয়াকত শেখ পক্ষ ও ইউপি সদস্য নান্টু সিকদার পক্ষের দীর্ঘ দিনের বিরোধের জেরে শান্তি নেই এলাকায়। বিভিন্ন সময় থানা, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যস্থতায় বিরোধের মীমাংসা করা হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। এ বিরোধের জেরে কয়েক বছর আগে লিয়াকতের পক্ষে নিজাম শেখ খুন হয়। সম্প্রতি একই পক্ষের তামিম হামলার শিকার হলে আবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এলাকায় শান্তি ফেরাতে উভয় পক্ষের সংযত হওয়া জরুরি বলে তিনি অভিমত দেন।

লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গ্রামের বিবদমান পক্ষে বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর জেরে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষ থানায় একাধিক মামলা দিয়েছে। গ্রামের সংকীর্ণ সড়কে গাড়ি ঢুকতে না পারায় যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

news24bd.tv/এসসি