হরিণাকুণ্ডুর সেতু যেন মরণফাঁদ

হরিণাকুণ্ডুর সেতু যেন মরণফাঁদ

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সেতুটির পাটাতন ভেঙে আছে। সেতুর খাদে পড়ে আহত হয়েছেন এখন পর্যন্ত অনেকেই। তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ও ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। কথা হচ্ছে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়াদহ ও ফলসী ইউনিয়নের বেলতলা-শড়াতালা গ্রামের মাঝামাঝি গঙ্গা-কপোতক্ষ সেচ খালের ওপরের সেতুটির।

জানা গেছে, বেলতলা-শড়াতলা প্রধান সড়কের মাঝামাঝি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আলমডাঙ্গা মেইন খালের উপর নির্মিত এ সেতুটি দীর্ঘদিন ভেঙে আছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ওপর দিয়ে অসংখ্য পথচারী পার হচ্ছেন। ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে।

কৃষকেরা বিভিন্ন ফসল যানবাহনে করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। সেতুর ভাঙা স্থানে যানবাহন ধরে পার করতে হচ্ছে। মোটরসাইকেলের চালকেরা সাবধানে সেতু পার হচ্ছেন।

সাতব্রিজ বাজারের পাশ দিয়ে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের একটি খাল চলে গেছে। এটি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে বেরিয়ে শৈলকূপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ হয়ে মাগুরার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে। এটি প্রকল্পের প্রধান সেচ খাল হিসেবে বহমান।

এদিকে, জোড়াদহ বাজার থেকে একটি সড়ক শড়াতলার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে। খালের অপরপ্রান্তে ফলসী ইউনিয়ন। যেখানকার মানুষও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। তিনটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫ গ্রামের মানুষ সড়কটি ব্যবহার করে। এর মধ্যে জোড়াদহ, হরিশপুর, পাখিমারা, শড়াতলা, কুলবাড়িয়া, রঘুনাথপুর, কালাপাহাড়িয়া,মান্দিয়া উল্লেখ যোগ্য। এই সড়কের বেলতলা ও শড়াতলা এলাকায় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করেন।

বেলতলা গ্রামের রিজন মন্ডল বলেন, ৬০ বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের উপর সেতুটি নির্মাণ করে। আগে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতো। ২০১০ সালের দিকে সেতুটির পাটাতন ভেঙে যায়। ১০ ফুট পাটাতনের প্রায় সবটুকু ভেঙে পড়ে। স্থানীয়ভাবে বাঁশ-চাটাই দিয়ে ভেঙে পড়া সেতুর কিছু অংশে পাটাতন তৈরি করে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। সেটাও মাঝে মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তখন আবার মেরামত করা হয়।

শুধু পাটাতন নয়, সেতুটির রেলিংও সিংহভাগ ভেঙে গেছে। যে কারণে ভাঙা পাটাতনের ওপর চলাচল করতে গিয়ে একটু অসাবধান হলেই সেতুর নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সেতুর পাশের দোকানদার শাহীন আলম বলেন, মাঝে মধ্যেই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। কেউ পড়ে গেলেই তিনি ছুটে গিয়ে উদ্ধার করেন। সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে খরচ বাড়ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া জানান, এটা আমার নিজ গ্রামের ব্রিজ। অসংখ্যবার পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসে ধরনা দিয়েছি। তারা বারবার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার হয়নি।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযোগের একটি মাত্র পথ এ সেতুটি। দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ফলে সেতুটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসময় সেখানে দ্রুত একটি নতুন সেতু স্থাপনের দাবিও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই সেতু ছাড়া তাদের আরও কয়েকটি সেতু মেরামত করা প্রয়োজন। তাদের রিহ্যাবিলিটেশনের একটি প্রোজেক্টে সবগুলো ব্রিজের তালিকা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাশ হওয়ার পর সবগুলো ভাঙা সেতুর কাজ শুরু করা হবে।

news24bd.tv/SHS

এই রকম আরও টপিক