নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর যত উদ্যোগ

ক্ষমতায়নের কিছু চিত্র

নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর যত উদ্যোগ

মরিয়ম রিমু

বেগম রোকেয়া যিনি নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বেগম রোকেয়া নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছেন। দুস্থ নারীদের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন করার চেষ্টা করেছেন। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে নারীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মূল জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। নারীদের উন্নয়নের বাইরে রেখে কখনো প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল তিনি। আগে দেশের নারীরা ঘরে আবদ্ধ থাকতো।

বঙ্গবন্ধু নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশের নারীরা নানা ক্ষেত্রে ছেলেদের থেকেও এগিয়ে চলেছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার নারীদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীশিক্ষার বিস্তার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

নারীর সার্বিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু:
নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭২ সালেই সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু নারী উন্নয়নে ১০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের বঙ্গবন্ধু বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত করেছেন। জাতির পিতার নির্দেশনায় ১৯৭২ সালে সরকার বীরাঙ্গনাদের জন্য পুনর্বাসনকেন্দ্র স্থাপন করে। নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করে তাদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি মহিলা সংস্থার এক ভাষণে বীরাঙ্গনাদের বাবার নাম ও ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে বলেন, ''আজ থেকে ধর্ষিতা মেয়ের বাবার নামের জায়গায় লিখে দাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর ঠিকানা লেখ ধানমন্ডি ৩২। ''

নারীর ক্ষমতায়নে বঙ্গমাতা: 
নারীর ক্ষমতায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান অপরিসীম। স্বাধীন বাংলার ইতিহাস রচনায় চিরস্মরণীয় মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অপরিমেয় দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও সাহস নিয়ে নিরলসভাবে পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা দিয়েছেন। নারীদের ক্ষমতায়ন ও সম্মানে প্রতিনিয়তই পাশে থেকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীর যত উদ্যোগ :
সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, শিক্ষা, কর্ম, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি বা এ সকল ক্ষেত্রে নারীদের শক্ত অবস্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য অবদান আমরা দেখতে পাই।
নারীদের ক্ষমতায়ন বাস্তবয়নে কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ২০১১ প্রণয়ন করেন। প্রথম তিনিই জাতীয় সংসদের স্পিকার পদে একজন নারীকে নির্বাচিত করেন। শেখ হাসিনাই প্রথম তার মন্ত্রিসভায় প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নারীকে দায়িত্ব প্রদান করেন। সংসদ উপনেতাও হন একজন নারী। উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি ও ইউনিয়ন পরিষদে তিনজন নারী সদস্য নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার বিধান নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের নারীরা এখন শুধু বিচারক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার নন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন দক্ষতার সঙ্গে। সবই কিন্তু সম্ভব হয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।

এছাড়া শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক দক্ষতা, খেলাধুলা, পর্বতারোহণ, নাসায় কর্মরতসহ সব চ্যালেজ্ঞিং পেশায় সাফল্যের চিহ্ন রাখছেন বাংলাদেশের নারীরা। বাংলাদেশে এখন অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সচিব বা সমমর্যাদার পদে নারী কর্মকর্তা কর্মরত আছেন যা ইতিপূর্বে ছিল না। শেখ হাসিনা সরকারই উচ্চ আদালতের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য, প্রথম নারী সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে পদায়িতও করেছেন।

নারীদের নিয়ে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ:
১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে এ মধ্যাহ্নভোজে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম প্রস্তাবে বলেন, ''আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান খাদ্য, শক্তি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে। ''

দ্বিতীয়ত, তিনি দেশের মেয়েদের স্কুলে রাখতে, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ও তাদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। অনেক মেয়েই এই সমস্যার সম্মুখীন হয়।

শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রস্তাবে নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজ, মজুরি সমতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

তার চতুর্থ ও পঞ্চম প্রস্তাবে, প্রধানমন্ত্রী একটি সক্রিয় ও টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নারীদের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরির পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও টিকে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর গভীরভাবে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আরও যত উদ্যাগ:
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগ। এই দশ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের দশটি দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৪ সালে গঠনের পর দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্তি, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে মোট দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগ নামে পরিচিত। এই বিশেষ ১০টি উদ্যোগকে বলা হয় নারীকে পরোক্ষভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ করে দেওয়া হয়েছে।  

উদ্যোগগুলো হলো- ১। একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক) ২। আশ্রয়ণ প্রকল্প ৩। ডিজিটাল বাংলাদেশ ৪। শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি ৫। নারীর ক্ষমতায়ন ৬। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ৭। কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ৮। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ৯। বিনিয়োগ বিকাশ ১০। পরিবেশ সুরক্ষা।
  
১, একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক): আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের শুরুতে গড়ে উঠা প্রত্যেক গ্রাম উন্নয়ন সমিতিতে ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম ৪০ জন নারী সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে যারা এই সমিতির মাধ্যমে সাবলম্বী হয়েছেন তাদের ৬০ শতাংশই নারী। আর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে এখন যদি ৬০ লাখ সদস্য হয়ে থাকে তাহলে তার মধ্যে ৪০ লাখই নারী সদস্য। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ গৃহিনী নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার এক নিভৃত লক্ষ্য বিদ্যমান। যা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কারণে।

২, আশ্রয়ণ প্রকল্প: নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের আরেক সফল ধাপ হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্থ ও ছিন্নমূল পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ভূমি ও গৃহের মালিকানা স্বত্ব প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা, তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া), বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পুনর্বাসিত পরিবার যেন ভবিষ্যতে মালিকানা সংক্রান্ত কোন জটিলতায় না পড়েন সেজন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক জমির মালিকানা স্বত্বের রেজিস্টার্ড দলিল/কবুলিয়ত, নামজারি খতিয়ান ও দাখিলাসহ সরেজমিনে দখল হস্তান্তর করা হয়।  

৩, ডিজিটাল বাংলাদেশ: নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়)। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র  সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের হাত ধরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায় ) হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় মহিলা সংস্থা ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবাপ্রদানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নই এ প্রকল্পের লক্ষ্য। এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে একটি করে তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি তথ্য কেন্দ্রে ১ জন তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও ২ জন তথ্যসেবা সহকারী তথ্যসেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত আছেন। এরাই প্রকল্প এলাকায় 'তথ্যআপা' হিসেবে পরিচিত।

৪, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি: শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম। অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচির অধীনে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যন্ত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার রোধ, বাল্যবিবাহ রোধ এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর ফলে গত এক দশকে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে এবং ঝরে পড়ার হার কমেছে।

৫, নারীর ক্ষমতায়ন: সর্বত্র নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা। সব জায়গায় নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে ''জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১'' প্রণয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে ''নারী পুনর্বাসন বোর্ড'' ও ''জাতীয় মহিলা সংস্থা'' প্রতিষ্ঠা করা হয়। নারীর টেকসই অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ২০১১ সালে ''জয়িতা ফাউন্ডেশন'' প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাগণ কোন ঝুঁকি ছাড়াই তাদের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারেন। কর্মজীবী নারী ও নারী উদ্যোক্তাদের আবাসন সমস্যা সমধানের জন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে মহিলা হোস্টেল নির্মাণ, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণসহ আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি দূরদর্শী উন্নয়ন ভাবনারই প্রতিফলন। ''নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন ২০১৫'' প্রণয়ন, পাসপোর্টে মায়ের নাম অন্তর্ভূক্ত করার মধ্যে দিয়েও সমাজে নারীর অবস্থানকে সুসংহত হয়েছে।  

৬, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ: ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি বিদ্যুৎ। যখন আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই সমাজে নারীর আর্থিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। তাই, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ কার্যক্রমে সরাসরি নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র দৃষ্টিগোচর না হলেও পরোক্ষভাবে এই উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সারাদেশে প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীর জীবনযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা থাকায় নারীর নিরাপত্তা বেড়েছে। ফলে, তারা বেশি সময় বাইরে ব্যয় করতে পারছেন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছেন। এছাড়াও অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য কেনা বেচার এক বিস্তৃত বাজার সৃষ্টি হয়েছে।

৭, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক মননে নারীর স্বাস্থ্য চিরকাল এক অবহেলিত বিষয় ছিল। বঙ্গবন্ধুর পর তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা নারীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করেছেন। পরিবারের সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে নারী প্রাণান্তকর চেষ্টা চালান, সেই নারীর ছোটখাট স্বাস্থ্য সমস্যা দূরে থাক, অসুস্থ হয়ে ঘরে পরে থাকলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার চিন্তা ছিলো প্রায় অসম্ভব। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গৃহিত কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্যোগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইভাবেই নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবদান রাখছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের হার যেমন বেড়েছে, গ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিও সহজ হয়েছে। যার ফলে নারীর গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করেছে।

৮, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: সমাজের অবহেলিত, অক্ষম, নিঃস্ব জনগোষ্ঠীর জন্য শেখ হাসিনা সরকার ১২৩টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিধবা নারীদের জন্য ভাতা প্রদান, স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের ভাতা প্রদান ইত্যাদি। এছাড়াও মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আওতায় প্রতি অর্থবছরে ১৫০০ জন দুস্থ, অসহায়, মহিলাদের ১.৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে।

৯, বিনিয়োগ বিকাশ: ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ একসময় স্বপ্ন হলেও এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে। বিনিয়োগ বিকাশের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিদ্যুৎ। আর সেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মহাসড়কের উন্নয়ন, আধুনিক সমুদ্র বন্দর স্থাপন ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। নারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ব্যবস্থা গৃহিত হওয়ায় বৃহৎ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন নারীরা। সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ায় নারীরা এখন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পাশাপাশি বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগ করছেন। একদিকে যখন কিছু নারী রান্না, সেলাই, সাজসজ্জার বিষয়ে বিনিয়োগ করছেন। অন্যদিকে নারীরা প্রশিক্ষণ, প্রকাশনা ইত্যাদি ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। এতকিছু সম্ভব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য।  

১০, পরিবেশ সুরক্ষা: পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, গবেষণা, উদ্ভিজ্জ জরিপ এবং বনজ সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ ও বন নিশ্চিতকরণ এ উদ্যোগের লক্ষ্য। পরিবেশগত বিপর্যয় সমগ্র মানবগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষত নারী, গর্ভবর্তী মা, গর্ভস্থ শিশু ও শিশু-কিশোররা শারীরিক ও মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। দেশের সার্বিক পরিবেশ সুরক্ষিত হলে এই নারী ও শিশুরা এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। নারীর ক্ষমতায়নে এ ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে আরও বিশেষ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। নারীর ক্ষমতায়নের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে আইসিটিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করেছে।  
 
news24bd.tv/TR