শুরুতেই ষড়যন্ত্র ভুল প্রমাণ :
শুরুতে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই পরামর্শক নিয়োগসহ কয়েকটি বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। অবশ্য পরে কানাডার আদালত এ সংক্রান্ত একটি মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। যে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা ঋণ বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক, সেই দুর্নীতির মামলাকে ‘অনুমান ভিত্তিক’ বলে উল্লেখ করে রায় দিয়েছিল কানাডার একটি আদালত।
এতে প্রমাণিত হয় বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা।এই রায়ের ফলে আরও একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতু যেন তৈরি হতে না পারে তা নিয়ে হয়েছিল ষড়যন্ত্র। আর এমন ষড়যন্ত্র ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে লিখিত থাকবে। তবে যেকোনো ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে সামনে এগোতে পারে বাঙালি জাতি এটাও প্রমাণিত হয়েছে।
বহুমুখী সেতু:
পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ ছাড়াও আরও আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। এই দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহণ করেন এবং এর মাধ্যমে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ ঢাকা ও ভাঙ্গাকে সংযুক্ত করে, যা খুলে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেল সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প'র আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতুটি বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজের অর্থে তৈরি করেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত। দুই স্তর বিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা সেতু হওয়ার যত সুবিধা:
দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন থেকে শুরু করে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রবৃদ্ধির বিকাশে সহায়ক পদ্মা সেতু। গত এক যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনৈতিক তৎপরতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই বিবেচনায় এখন পদ্মা সেতুর তাৎপর্য অনেক বেশি।
পদ্মা সেতুর বড় দিক হলো মধ্যপশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ফেরি পারাপারের দীর্ঘ সময় অপচয় ও ভোগান্তির অবসান। এর অর্থনৈতিক উপযোগ হচ্ছে কর্মমুখী যাত্রী ও পণ্যবাহী যানের সময়, জ্বালানি খরচ, শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়। এ অঞ্চল কেন্দ্রিক কাঁচা ও পচনশীল কৃষি ফলন ও মৎস্য অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে পদ্মা সেতু। বিনিয়োগের দিক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের সময় ও দূরত্ব। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি হয়। এসব পণ্যবাহী ট্রাককে যমুনা সেতু ঘুরে কিংবা মাওয়া ফেরি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, আগে বেনাপোল থেকে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আসতে ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লাগত। এখন পদ্মা সেতুতে ৫-৬ ঘণ্টায় পণ্য পরিবহন করা যায়। এতে আমদানি-রপ্তানিতে খরচ ও সময় বাঁচছে।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে এই সেতু। যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। ২০০৫ সালে পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালু হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর টোল আদায়:
উদ্বোধনের পর গত ১৯ মাসে পদ্মা সেতুতে মোট টোল আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আর দৈনিক গড় আয় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তথ্য তুলে ধরেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট এক হাজার ২৭০ কোটি ৮১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। এক বছরেই আয় হয়েছে ৭৯৮ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং দৈনিক গড় আয় প্রায় দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা।
অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন:
পদ্মা সেতু অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এবং কৃষি বিপ্লব ও কর্মসংস্থানেও ব্যাপক অবদান রাখছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল, মংলা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। রাজধানী এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে যাতায়াতের সময় এক-চতুর্থাংশ কমে এসেছে। আগে যেখানে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যেতে, সেখানে এখন যেতে সময় লাগছে আড়াই ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন ঘণ্টা। পদ্মা সেতুর কল্যাণে পর্যটন খাতেরও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হওয়ায় পদ্মা সেতু আঞ্চলিক সংযোগকে সহজতর করবে। নির্মাণ খাতে ২৯ শতাংশ, কৃষি খাতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও পরিবহনে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর প্রভাবে এই অঞ্চলে দারিদ্র্য ১ শতাংশ কমেছে এবং জাতীয়ভাবে কমেছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
পর্যটন খাতে গতি ফিরেছে:
বাগেরহাটে বিশ্ব ইতিহাসে ষাটগম্বুজ ও সুন্দরবনে গত এক বছরে দ্বিগুণ পর্যটক বেড়েছে। ফলে রাজস্ব আয় হয়েছে দ্বিগুণ। পদ্মা সেতু চালু হবার পর যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এখানে ক্রমশ দেশী-বিদেশী পর্যটদের আগমন বাড়ছে। ২০২৩ সালে এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৮ দেশী এবং ১ হাজার ৬শ’ ৭৫ বিদেশী পর্যটক সুন্দরবনে এসেছেন। এ সময়ে এক কোটি ২৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ’
অনুরূপ ষাটগম্বুজে আগের বছর ৩ লাখ ১৫ হাজার পর্যটক এলেও এ বছর ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবে রাজস্ব আয় বেড়েছে। ’
কুয়াকাটায় দিনদিন বাড়ছে দেশ বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা। আবাসিক হোটেল-মোটেল,কটেজ এবং খাবার হোটেলসহ সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য্য দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত।
একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের জলরাশি, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, ফাতরার চর, চর বিজয়সহ ঘুরে বেড়ানোর মতো আকর্ষণীয় স্পটগুলো ভ্রমণবিলাসী মানুষকে কুয়াকাটায় টেনে আনে। এখানকার নিরাপত্তা, স্থানীয় লোকজনের আতিথেয়তাও পর্যটকরা বারবার ছুটে আসেন। গত দুই তিন বছর আগে হোটেল মোটেল খালি পড়ে থাকলেও বর্তমানে হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আগে যেমন ফেরি পারাপারের ভোগান্তি ছিল। এখন পদ্মা সেতুর পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ উন্নতি হয়েছে। আর একারণেই কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। একই সাথে বাণিজ্যিক ভাবে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এক কথায় কুয়াকাটা এখন প্রতিদিন পর্যটক আসছেন প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ভাবে চাঙ্গা হচ্ছে এমনটাই জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রা জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পরই কুয়াকাটার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণে নেয়া হচ্ছে নানা ধরনের উদ্যোগ। ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে পাঁচ তারকামানের আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট। এছাড়া রয়েছে উন্নতমানের খাবার হোটেল ও রেস্তোরা। এ থেকে প্রতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা আয় করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশন ভুক্ত হোটেল-মোটেল রয়েছে ৭৪টি। এর বাইরে ৫৬টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১৫টির মতো। এতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজারের মতো পর্যটক রাত যাপন করতে পারবেন। এখানকার ছোট বড় সকল আবাসিক হোটেলে গড়ে সকল সিট বুকিং হয়ে যায় প্রতিদিন।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে সৈকত জুড়ে যেন পর্যটকের ঢল নামে। এছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক চাপ থাকে। প্রায় দিনই হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটায় আসতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। তাই অনেকেই অনলাইন কিংবা মোবাইলে হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং দিয়ে রাখেন। এ হলো পদ্মা সেতুর সুফল। তবে এখানে আরও উন্নতমানের হোটেল-মোটেল ও বিনোদন ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন আগত পর্যটকরা।
পাল্টে গেছে মংলা বন্দর:
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পাল্টে গেছে মংলা বন্দরের চিত্র। অর্থনীতির পালে লেগেছে নতুন হাওয়া। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সেবা পাচ্ছেন এ বন্দরের ব্যবসায়ীরা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৮ লাখ টন। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২০ হাজার ৬৫১ টিইইউএস।
আর গাড়ি এসেছে ৩ হাজার ৩১৯টি। ধারাবাহিকভাবে প্রতি অর্থবছরে কার্গো, কনটেইনার ও গাড়ি আমদানি বাড়তে বাড়তে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১৩ দশমিক ৯২ লাখ টন কার্গো হ্যাল্ডলিং হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ হাজার ২৬৯ টিইইউএস। আর গাড়ি এসেছে সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৪৮৪টি।
সিঅ্যান্ডএফ ও শিপিং এজেন্ট সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে জাহাজের চাপের কারণে অনেক সময় পণ্য খালাস বা বোঝাইয়ে সময়ক্ষেপণ হয়। তবে মংলা বন্দরে সেই চাপ নেই। এই গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পর আরও অনেকে এই বন্দর দিয়ে রপ্তানিতে আগ্রহী হবেন।
মংলা বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল বলেন, আগে ঢাকা থেকে মংলা আসতে ফেরিঘাটের দীর্ঘ সময় নষ্ট হতো। স্বাভাবিকভাবেই রপ্তানিকারক মংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হতেন না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে ঢাকা থেকে এ বন্দরের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা বাণিজ্যিক স্বার্থে মংলা বন্দর ব্যবহার করছেন।
একুশ জেলার মানুষ খুশি:
দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের একুশটি জেলার মানুষ অল্প সময় ব্যয় করে সহজে রাজধানী শহর ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারছে। তাদের সময় বাঁচে , কষ্টের লাঘব হয়, জীবন সহজ হয়েছে। শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার লোকজন ইচ্ছা করলে প্রতিদিন ঢাকায় এসে অফিস বা অন্য কাজ করে বাড়িতে ফিরতে পারছে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে দেশের ২১টি জেলায় যাওয়া যায়। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে বরিশাল যাওয়া যায় সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টায়, খুলনা ৩ ঘণ্টায় আর ফরিদপুর যেতে সময় লাগছে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট। জাজিরা মাঝিরঘাট থেকে ফেরি ও জোয়ার-ভাটা ভেদে মাওয়া প্রান্তে যেতে কখনও একঘণ্টা, আবার কখনও দেড় ঘণ্টা লাগছে। তেমনি সরাসরি বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে (ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার) সময় লাগছে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা।
কারণ ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটেই পৌঁছে যাচ্ছে মাওয়া প্রান্তে। এরপর ৪০ মিনিটের মধ্যে গুলিস্তান কিংবা যাত্রাবাড়ী পৌঁছে যাওয়া যায়। তেমনি খুলনা, যশোর থেকেই চার, সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে। দক্ষিণাঞ্চলের এমন অনেক পরিবহন মালিক রয়েছেন, যারা শুধু মাওয়া ও দৌলতদিয়ার ফেরির কারণে বিলাসবহুল গাড়ি নামাতে পারে নাই। এখন তারা উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক গাড়ি নামাচ্ছেন।
news24bd.tv/ডিডি/কেআই