একের পর এক অগ্নিকাণ্ড কেন হচ্ছে?

সংগৃহীত ছবি

একের পর এক অগ্নিকাণ্ড কেন হচ্ছে?

অনলাইন ডেস্ক

মার্কেট হতে শুরু করে কারখানা। সেখান থেকে রেস্টুরেন্ট। এই তালিকায় রয়েছে বহু বসতিও। কেনো এতো ঘনঘন আগুন লাগছে? এর সঠিক এবং নির্দিষ্ট উত্তর হয়তো কারও কাছে নেই।

গত বছর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার মার্কেটগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ওই সময় তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এই ঘটনা তদন্তের নির্দেশও দেন।

বিগত বছরগুলোর মত এ বছরেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে অহরহ। তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্টুরেন্ট বিল্ডিংয়ে।

এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রাণ হারান ৪৬ জন। এ ঘটনায় ওই বিল্ডিংয়ে 'ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট' না থাকা সহ গ্যাস সিলিন্ডারগুলোর তত্ত্বাবধানের অভাবকে দোষ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন জানান, কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের কথা বলেন। তিনি বলেন, 'এটা বদ্ধ ঘর থেকে বের হতে পারে না, তখন ওই ধোঁয়া শ্বাসনালীতে চলে যায়। '

গত বছর বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার কারণ হিসেবে নাশকতাকে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিলো। গত বছর ১২ এপ্রিল টঙ্গী বাজারে একটি পাইকারি মার্কেটে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতকারী চক্র। এ সময় পাশের দোকানদার টের পেয়ে দ্রুত আগুন নেভায়। ঘটনার পর সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় এক বোতল অকটেন, ভাঙা ব্যাটারি ও টিস্যু পেপার। এ ঘটনার পর অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার বিষয়টি আরও দানা বাঁধে।

বিভিন্ন ভবনকে ফায়ার সার্ভিস এবং রাজউক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও প্রশ্ন থেকেই যায় কেনো দুর্ঘটনার আগে এগুলো মনিটরিং করা হয়নি?

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে যেকোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। ঢাকার শহরে ইলেকট্রিক, গ্যাস বা মাটির চুলা থেকে আগুন লাগার ঘটনাও নতুন নয়।

যদিও রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনাকে নাশকতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এছাড়াও দেখা যায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটি ঘটলে তার কয়েক দিনের মধ্যে বেশ কিছু অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। এসব অগ্নিকাণ্ডের জন্য কিন্তু পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ভবনগুলোকে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। মূলত অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এসব ভবনগুলোতে থাকেনা পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। ফলে সেখানের পরিবেশ গুমোট হয়ে ওঠে।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদরা জানান, ঢাকার এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর অবশ্যই রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও পানিদূষণ বেড়েছে। তারা জানান এগুলো একটি অপরের সাথে সম্পৃক্ত। মে থেকে শুরু করে জুন-জুলাই পর্যন্ত ঢাকার আবহাওয়া থাকে অত্যধিক গরম। ঢাকার ঘনবসতির সমস্যাও ঢাকার পরিবেশকে জরাজীর্ণ করে তুলেছে।

এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আলী আহমেদ খান বলেন, আমাদের দেশে সরকারিভাবে ফায়ার সার্ভিসকে তেমন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অগ্নিনিরাপত্তা বাস্তবায়ন করা, জরিমানা করা বা আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। সেই সুযোগটা অনেকে নিয়ে থাকে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার সার্টিফিকেট নেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে আর সেটা বাস্তবায়ন করা হয় না। আধুনিক ভবনগুলোয় কিছুটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও নব্বই দশকের আগের ভবনগুলোয় অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি দুর্বলতা রয়েছে। সেসব ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয় না।

ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গ নিয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকা শহরে ৯২ শতাংশ ভবন অবৈধ বা কোনো না কোনোভাবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স শুধু নোটিশ দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কোনো অ্যাকশন নিতে পারে না। যারা অ্যাকশন নিতে পারে তারা কোনো দায়িত্ব নেয় না। সিটি কর্পোরেশন একমাত্র ভাঙার অধিকার রাখে, কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ববোধই মনে করে না। বরং তাদের নির্মিত ভবনগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এমন অবস্থা করেছি, আমাদের স্বাভাবিক যে শ্বাস-প্রশ্বাস সেটা আর নিতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় অবহেলার কারণে আজ এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন প্রতিরোধের জন্য আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরী। জ্বলন্ত সিগারেট বা ম্যাচের কাঠি যেখানে সেখানে না ফেলা, আবাসিক ভবন, অফিস-আদালত ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক তার ও সব ধরনের ইলেকট্রিক সরঞ্জাম নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। ত্রুটি পেলে সঙ্গে সঙ্গে মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

পাশাপাশি প্রতিটি বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বা ফায়ার এক্সিট রাখার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।  

news24bd.tv/SC