ডিসি পদে আসছে বড় রদবদল

সংগৃহীত ছবি

ডিসি পদে আসছে বড় রদবদল

অনলাইন ডেস্ক

ডিসি পদে বড় রদবদল আসতে যাচ্ছে। নির্বাচনের পর এবার মাঠ প্রশাসনে নতুন মুখ হিসেবে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দেবে সরকার। এর মধ্যে কয়েকজনের জেলা বদল হতে পারে বলে জানা গেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শুধুমাত্র বদলই নয়, কমপক্ষে ১০ জন নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে বিভিন্ন জেলায়।

পাশাপাশি একই সময়ে শুরু হচ্ছে বিসিএস ২৮ ব্যাচের ডিসি হওয়ার ফিট লিস্টের কার্যক্রম। নিয়মিত বদলির কার্যক্রম হিসেবেই এসব করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, মাঠ প্রশাসনের ডিসি পদে বর্তমানে তিনটি ব্যাচের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ৬৪ জেলার মধ্যে ২৪ ব্যাচের ২৩ জন, ২৫ ব্যাচের ১৯ জন এবং ২৭ ব্যাচের ২২ জন কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে কর্মরত।

সাধারণত ডিসি পদে দুই বছর মাঠে রাখা হয়। মেয়াদ পূর্ণ করে ফেলায় তাদের সরিয়ে আনার স্বাভাবিক সময় হয়েছে অনেকের। এ ছাড়া মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ার পরও অদক্ষতাসহ জেলার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত করতে না পারলে দু-একজনকে মাঠপর্যায় থেকে ফেরানো হতে পারে।

জানা গেছে, ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করে সার্বিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দুই বছর বা কাছাকাছি সময় হয়েছে ২৪ ব্যাচের। ২৪ ব্যাচের বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে এনে সেখানে নতুন কর্মকর্তা দেওয়া হবে। ভেতরে ভিতরে সেই তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ২৭ ব্যাচ থেকে বেশি ডিসি করা হবে। পাশাপাশি ২৫ ব্যাচের দু-একজন থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইসির বিধি লঙ্ঘন হবে বলে যাদের মাঠে নিয়োগ দেওয়া যায়নি বা নানা কারণে মাঠ থেকে ভালো কর্মকর্তাদের উঠিয়ে আনতে হয়েছে তাদের আবার নতুন করে জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

গণমাধ্যমে ২৪ ব্যাচের এক জেলার ডিসি নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমাদের ব্যাচের অনেকের সময় হয়েছে। সবাইকে হয়তো একসঙ্গে ওঠাবে না। মাত্র ডিসি সম্মেলন শেষ হলো, হয়তো আরও এক বা দুই মাস রাখবে জেলায়।

এদিকে, বিসিএস ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ফিট লিস্টের কার্যক্রমও একই সময়ে শুরু করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যাতে করে পরবর্তীতে এই ব্যাচ থেকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া যায়। ফিট লিস্ট কার্যক্রম শুরু হলে প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রমে সময় লাগে বলে আগেই এ কার্যক্রম শুরু করে এগিয়ে রাখা হবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন নিজ দপ্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নীতিমালার আলোকে দুই বছর হয়ে গেলে ডিসি পদে আমরা পরিবর্তন আনি, সিনিয়রদের পর্যায়ক্রমে ওঠানো হয়। আরেকটি হলো- যদি দেখি সেখানে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বা কোনো অভিযোগ থাকলে সেটিও আমলে নেওয়া হয়। আমরা একটা শৃঙ্খলা নিয়ে এসেছি প্রশাসনে। সময় একটা বিষয়, আবার প্রমোশনের কারণেও পরিবর্তন করি।

তিনি জানান, এখন মাঠে যারা আছেন তাদের মধ্যে ২৪ ব্যাচের এক বছরের মধ্যে প্রমোশন হবে। মাঠে অনেকের দুই বছর হয়ে গেছে। এখানে যারা খুবই ভালো পারফর্ম করছেন তাদের রেখে অন্যদের উঠিয়ে আনবো। আবার ভালো অফিসার কিন্তু আমাদের মন্ত্রণালয়েও প্রয়োজন সেটাও বিবেচনায় রাখতে হয়।

কবে থেকে এই পরিবর্তন আসতে পারে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মাত্রই ডিসি সম্মেলন শেষ করে তারা কাজে ফিরেছে। এখন রোজা, সামনে ঈদ। ঈদের পর রদবদল কার্যক্রম শুরু করব।

২৮ ব্যাচের ফিট লিস্ট নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখনো মাঠে অল্প কিছু ২৭ ব্যাচের জয়েন্ট করেছে, এরপর ২৮ ব্যাচ আসবে। সামনে যখন আমরা ডিসি রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু করব তখনই ২৮ ব্যাচের এই ফিট লিস্ট কার্যক্রম শুরু হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেখভাল করে থাকে। মাসে ডিসি কমিশনারদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠকে নানা দিকনির্দেশনা দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সামনে ডিসি রদবদলের সময় ২৫ এবং ২৭ ব্যাচের দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের কিছু জেলাও অদল-বদল করা হতে পারে। জনপ্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেকেই কম গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ভালো কর্তব্য নিষ্ঠা দেখিয়েছেন, তাকে ভালো জেলায় দিলে তিনি আরও ভালো করবেন। এতে কর্মকর্তারাও উৎসাহিত হন।

জানা গেছে, ২৪ ব্যাচের অনেকেই গত বছর ডিসি হিসেবে যোগ দিয়েছেন; যাদের এখনো দুই বছর হয়নি। তবে যাদের কাজ সন্তোষজনক নয়, তাদের নিয়ে ভিন্ন চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার কারণে অনেকের কপাল পুড়তে পারে। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যাদের মাঠে পদায়ন করা যায়নি বা নানা কারণে মাঠ থেকে ভালো কর্মকর্তাদের উঠিয়ে আনতে হয়েছে তাদের আবার নতুন করে দেওয়া হতে পারে। প্রশাসনের কোন ব্যাচ থেকে কতজন ডিসি হচ্ছেন বা হয়েছেন সেটির ওপরও গুরুত্ব বহন করে। যে ব্যাচের ডিসি বেশি, সেই ব্যাচ তত শক্তিশালী হিসেবে বিশেষভাবে বিবেচিত হয়। ডিসি হতে আগ্রহী এমন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এটা সরকারের নিজস্ব বিষয়। একটা ব্যাচের সবাই ডিসি হবে না। এতে হতাশার কিছু নেই, তবে আশা ছাড়ছি না। মাঠ প্রশাসনে ডিসিরাই সরকারের মুখপাত্র। সরকার যাদের যোগ্য মনে করবে, তাদেরই নিয়োগ দেবে। ২৭ ব্যাচের এক কর্মকর্তা বলেন, এটা কপাল বলতে পারেন।

news24bd.tv/FA