নবীজি (সা.) রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তিদের ব্যাপারে যা বলেছেন

নবীজি (সা.) রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তিদের ব্যাপারে যা বলেছেন

 মাইমুনা আক্তার

মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

তাই যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামের দৃষ্টিতে গণ্য যৌক্তিক কোনো কারণ না পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত রোজা ভাঙার অবকাশ নেই। তবে একান্ত অপারগতা দেখা দিলে মহান আল্লাহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তিদের এই বিধানে শিথিলতা দিয়েছেন, যেমন—অসুস্থ, মুসাফির ইত্যাদি।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না।

আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদের যে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
এর দ্বারা বোঝা যায়, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য রোজা ভাঙার অবকাশ রয়েছে। তবে তাদের অবশ্যই পরবর্তীতে এই রোজা কাজা করে নিতে হবে।

পরিবারে অনেক সময় এ রকম অনেক রোগী থাকে, যারা অপারগতার কারণে রোজা রাখার সামর্থ্য রাখে না।

কারো অপারগতা যদি এই পর্যায়ের হয়, যে ইসলামের দৃষ্টিতে তার জন্য রোজা ভাঙা জায়েজ, তাহলে সে রোজা ভাঙলে তাকে কোনোভাবেই তিরস্কার করা যাবে না। তার সঙ্গে অপমানজনক কোনো আচরণ করা যাবে না।
নবীজি (সা.)-এর যুগেও তাঁর সাহাবিরা বিশেষ কারণে রোজা ভেঙেছেন। তাঁদের রোজাদার সাহাবিরা কখনো তিরস্কার করেননি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রমজান মাসে আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম।

এ সময় আমাদের কেউ সাওম পালন করেছেন, আবার কেউ সাওম ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু সাওম পালনকারী সাওম ভঙ্গকারীকে খারাপ মনে করতেন না এবং সাওম ভঙ্গকারীও সাওম পালনকারীকে খারাপ মনে করতেন না। তারা মনে করতেন যার সামর্থ্য আছে সে-ই সাওম পালন করছে, এটা তার জন্য উত্তম। আর যে দুর্বল সে সাওম ছেড়ে দিয়েছে, এটা তার জন্য উত্তম। (মুসলিম, হাদিস : ২৫০৮)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) বলেন, আমরা এক সফরে আল্লাহর নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তারা কোনো কাজই করতে পারছিল না। যারা সিয়ামরত ছিল না, তারা উটের দেখাশোনা করছিল, খিদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী (সা.) বলেন, ‘যারা সাওম পালন করেনি তারাই আজ সওয়াব নিয়ে গেল। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৯০)

অতএব ঘরে যদি অসুস্থ কোনো মানুষ থাকে, যারা অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম, বা নারীরা যদি বিশেষ কারণে রোজা রাখতে না পারে, কেউ সফরে থাকার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হয়, তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা উচিত নয় যে তারা লজ্জায় বা কষ্টে পড়ে যায়।

মহান আল্লাহ সবাইকে রমজানের রোজা গুরুত্বসহ রাখার তাওফিক দান করুন। কেউ অসুস্থতা ইত্যাদির কারণে অক্ষম হয়ে পড়লে তাদের রোজার ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন।