স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

অনলাইন ডেস্ক

২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার দেওয়া বাণীতে তাঁরা মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে এবং প্রবাসে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশি নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে।

নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। ’

স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থক, বিদেশি বন্ধু এবং সর্বস্তরের জনগণকে, যাঁরা আমাদের অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন। ’

বাণীতে ‘দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে জাতি এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধুর ‘‘সোনার বাংলা’’ গড়ার পথে-মহান স্বাধীনতা দিবসে এ আমার প্রত্যাশা। ’ উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দেওয়া বাণীতে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দর্শনে বিশ্বাসী। সাধারণ মানুষের জীবনমান এবং দেশের উন্নয়নে আমরা আশু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। ’

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ’ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে তিনি স্মরণ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সকল বন্ধুরাষ্ট্র, সংগঠন, সংস্থা, ব্যক্তি এবং বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাক-সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা শুরু করে। শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন। ২৩ মার্চ সারাদেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘‘অপারেশন সার্চ লাইট’’–এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাক সামরিক জান্তা শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বেই তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। বাঙালির জননেতাকে পাকিস্তানের মিয়াওয়ালী কারাগারে বন্দী করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। জাতির পিতার ডাকে বাংলার মুক্তিপাগল জনতা ‘‘জয় বাংলা’’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।  ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর মিত্র শক্তির সহায়তায় ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালি জাতির পিতা, রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বাধীন মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। শূন্য হাতে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিয়ে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করেন, অবকাঠামো পুনঃস্থাপন ও উন্নয়ন করেন এবং উৎপাদন খাত ও অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। স্বাধীনতা অর্জনের ৯ মাসের মধ্যেই একটি সংবিধান উপহার দেন। তাঁর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১২৩টি দেশের স্বীকৃতি এবং ২৭টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর আমলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ অতিক্রম করে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭১-এর পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালাতে থাকে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ শাহাদতবরণ করেন। খুনি মোস্তাক-জিয়া ও তাদের উত্তরসূরিরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশে স্বৈরশাসন কায়েম করে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা দায়িত্ব নিয়েই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রবর্তনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে দ্রুত কাজে নেমে পড়ি। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রান্তিক মানুষের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তুহারা মানুষের জন্য বাসস্থান নির্মাণসহ মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করি। ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষর, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন এবং ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমরা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং নারী উন্নয়ন নীতিমালা ঘোষণা করি। ব্যক্তি মালিকানায় টেলিভিশন চ্যানেল চালুর অনুমোদন দেই। ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে জাতির পিতা হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাস বিকৃতি রোধ করে দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকাল ছিল সকল পশ্চাৎপদতা, অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে অন্ধকার থেকে আলোকিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলার এক সোনালী অধ্যায়। ’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সবক’টি জাতীয় নির্বাচনে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে সরকার পরিচালনা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন বাস্তবতা। আমরা ইতোমধ্যেই ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে সুনীল অর্থনীতির দ্বার উন্মুক্ত করেছি। ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটিয়েছি। এক দিনে ১০০ সেতু এবং ১০০ সড়ক উদ্বোধন করা হয়, যা ইতিহাসে এই প্রথম। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় নিয়ে এসেছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দৃষ্টিনন্দন তৃতীয় টার্মিনাল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মত মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন আমাদের সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসের উপযোগী করে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমানে ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অর্থাৎ ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়ন করতে চলছে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক স্মার্ট ‘‘সোনার বাংলা’’ বিনির্মাণের শপথ গ্রহণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাই। ’

news24bd.tv/aa