নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব পঞ্চগড়

নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব পঞ্চগড়

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

উত্তরের পর্যটনসমৃদ্ধ জেলা পঞ্চগড়ে বেড়েছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। শহর গ্রাম-গঞ্জের হাট বাজারে হাতে হাতে পলিথিনে বাজার করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। অভিযোগ উঠেছে গুটি কয়েক অসাধু পলিথিন ব্যবসায়ী সারা জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে পলিথিন। এতে পরিবেশের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

হাট ও বাজারমুখী প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের হাতেই দেখা যাচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। সবধরণের বাজার বহন করছে প্লাস্টিকের তৈরি ছোট বড় ব্যাগে। দোকানদাররাও সবধরণের পণ্য বিক্রি করছেন পলিথিনে।  

সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, একবার ব্যবহারের পর যেখানে সেখানেই ফেলে দেয়া হচ্ছে পলিথিন।

পরিত্যক্ত এসব পলিথিন ভেঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হচ্ছে। ওই মাইক্রোপ্লাস্টিক মাটি ও পানিতে মিশে বিভিন্ন সবজি, ফল ও প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করছে। তারপর প্লাস্টিকের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান খাবার এবং বাতাসের মাধ্যমে ঢুকে পড়ছে মানবশরীরে।

পলিথিনের কারণে কৃষি জমি হারিয়ে ফেলছে উর্বরতা। বিষাক্ত হয়ে উঠছে পরিবেশ। ক্যানসারসহ নানা ধরনের ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। বেড়েছে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মহার। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের এনেস্থিসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. মনসুর আলম জানান, পলিথিন ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে পঞ্চগড়ের কয়েক লাখ মানুষ। যেখানে সেখানে পলিথিন ফেলে দেয়া হচ্ছে। পৌরসভার ড্রেনগুলোতে পলিথিন ফেলার কারণে সেগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষাকালে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দূষিত পানির মাধ্যমে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে জেলা শহরে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পলিথিনের ব্যবহার হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। হাতে গোনা অসাধু কয়েকজন ব্যবসায়ী সারা জেলায় পলিথিন ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তারা পৌর এলাকাসহ গ্রামের হাটবাজারে দোকানে দোকানে গিয়ে পলিথিন বিক্রি করেন। প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনেই তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে এই দুই সংস্থার কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়। নিষিদ্ধ ওই পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে পঞ্চগড়ের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন মাধ্যমে পঞ্চগড় শহরের ৫ জন পলিথিন ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া গেছে। তারা নিষিদ্ধ এই ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা শিকারও করেছেন। পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে তারা বলেন, এই ব্যবসা সারা দেশে চলছে। ঢাকারগুলো আগে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেন। তাহলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবসায় জড়িত মুরাদ মশলাঘরের স্বত্বাধিকারী জনাব আলী অভিযোগ করে জানান আমরা ২-৩ কেজি পলিথিন বিক্রি করি। বড় ব্যবসায়ী হচ্ছেন হুক্কু মিঞা। সে সারা জেলায় পলিথিন সরবরাহ করেন।

জনাব আলীর অভিযোগ অস্বীকার করে আলমগীর স্টোরের স্বত্বাধিকারী হুক্কু মিঞা বলেন, সোনালী ব্যাংকের সামনে জনাব আলী নিজে এবং নাসিরুল, ছবি, আনোয়ার, রাব্বি হোসেন, আশরাফুল ট্রাকে করে পলিথিন আনেন। আমার ব্যাপারে ওরা মিথ্যা বলেছে। আমি কম বিক্রি করি।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছেন তারা। ইতোমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে।

পঞ্চগড় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ইউসুফ আলী জানান, আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেছি। সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ চলছে।

news24bd.tv/SC