আসলেই কি বাইডেন-নেতানিয়াহু সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে?

(ছবি: সিএনএন)

আসলেই কি বাইডেন-নেতানিয়াহু সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে?

অনলাইন ডেস্ক

যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করে জাতিসংঘ। গত সোমবার এই প্রস্তাব পাস হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চুপ হয়ে থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কিছুদিন ধরে গাজার রাফায় হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছিলো ইসরায়েল।

তবে বরাবরের মতোই এতে আপত্তি জানিয়ে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করার কথা ছিল ইসরায়েলের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র বিরত থাকার পর এ সফর বাতিল করেছেন নেতানিয়াহু। নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।

একই সঙ্গে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে এতে।

এদিকে টানা পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় এখন পর্যন্ত ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেখানে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার মুখে গাজার অর্ধেকের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন রাফায়। সেখানে ইসরায়েল হামলা চালালে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে চাচ্ছে নেতানিয়াহু যাতে রাফায় স্থলাভিযান না চালিয়ে বিকল্প কিছু ভাবেন। এ নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন। কিন্তু ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিলের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের এ চেষ্টা বড় বাঁধার মুখে পড়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের মিত্রদেশ। কিন্তু ওয়াশিংটনের আপত্তি সত্ত্বেও বারবার রাফায় স্থলাভিযান চালানোর হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন কিছুদিন ধরে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছে, নেতানিয়াহু যদি বাইডেন প্রশাসনের আহ্বান উপেক্ষা করে রাফায় হামলা চালানোর বিষয়ে অবিচল থাকেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কি আসলেই ইসরায়েলকে দেওয়া সামরিক সাহায্যের লাগাম টেনে ধরবে কি না।

অন্যদিকে আগামী নভেম্বরের শুরুতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন জো বাইডেন। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধে তার ওপর চাপ বাড়ছে। এ নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো নয়, বাইডেনের নিজ দলের অনেক নেতাও তাকে নিয়মিত চাপ দিচ্ছেন।

এদিকে নেতানিয়াহুও নিজ দেশের মধ্যে এ বিষয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। যাদের সঙ্গে তিনি জোট করে তিনি সরকার গঠন করেছেন, সেই শরিকেরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছেন। অন্যদিকে হামাসের কাছে থাকা জিম্মি ইসরায়েলিদের পরিবারগুলোর অভিযোগ, জিম্মিদের মুক্ত করে আনার জন্য যা করার প্রয়োজন, নেতানিয়াহুর সরকার তা করছে না।

এর আগে সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পবিত্র মাস রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করে। পবিত্র এই মাসটি মধ্যপ্রাচ্যে গত ১১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হতে পারে।

এদিকে কাউন্সিলের ১০ জন নির্বাচিত সদস্যের উপস্থাপিত এই রেজোলিউশনের পক্ষে ১৪টি দেশ ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল। এছাড়া প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন বা ভেটো ক্ষমতার প্রয়োগ করেনি পরাশক্তি এই দেশটি।

ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের সফর বাতিল করেন। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজুলেশন পাসের অনুমতি দেওয়ার মার্কিন এই সিদ্ধান্ত ‘যুদ্ধের শুরু থেকে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবস্থান থেকে স্পষ্ট পশ্চাদপসরণ। ’

অবশ্য ওয়াশিংটন জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভেটো দিতে ব্যর্থ হলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এর আগেই প্রতিনিধিদলের সফর বাতিল করার হুমকি দিয়েছিলেন। গাজায় সম্প্রসারিত মানবিক সহায়তার জন্য মার্কিন প্রস্তাবের পাশাপাশি দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে ইসরায়েলের পরিকল্পিত স্থল হামলার বিষয়ে বিকল্পগুলো শুনতে ইসরায়েলি এই প্রতিনিধিদলের ওয়াশিংটন সফর করার কথা ছিল।

এদিকে জাতিসংঘের ভোটের পর প্রতিনিধিদলের সফর বাতিলে ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হতাশ বলে জানিয়েছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের কো-অর্ডিনেটর জন কিরবি এ ঘটনা জানান।

news24bd.tv/SC