পৃথিবীটা কেবল জর্জ বুশদের নয়, এখানে রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষও আছেন

ফেসবুক-ছবি টেকডটনেট

পৃথিবীটা কেবল জর্জ বুশদের নয়, এখানে রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষও আছেন

শারফিন শাহ

বাঙালি জাতি রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতো প্রতিভাকে নিয়ে কম টানাটানি করেছে? কম অপমানের তীর ছুঁড়ে দিয়েছে?  আগে অপমানের জায়গা ছিল মৌখিক এবং লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ। এখন তা ছড়িয়ে গেছে ফেসবুকে। ঘটনা ঘটার পরপরই ভাইরাল। সত্য না মিথ্যা, আইনি না বেআইনি তা পরখন করে দেখার সময় বাঙালির কোথায়? ফেসবুক এমন জায়গা যেখানে আপনাকে কেউ মেরে ফেলতেও পারে, অথচ বাস্তবে আপনি কোনো অপরাধই করেননি।

যে আপনাকে জীবনেও দেখেনি, কোনো কথাও হয়নি, আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু দেখলে সেও আপনার মৃত্যু কামনা করে বসবে।
বুয়েটের প্রথম হওয়া ছেলেটা গান শুনেনি, বই পড়েনি তাতে কী হয়েছে, তাকে নিয়ে ট্রল করতে হবে? গান শোনা, বই পড়া লোকদেরও দেখেছি, তারা কী পরিমাণ ভণ্ড, প্রতারক, মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত তাও তো জানি। বই পড়লেই সবাই সহনশীল, পরোপকারী, জীবনবাদী হয় না। যে লেখক বুয়েটের প্রথম হওয়া ছেলেটিকে নিয়ে ট্রল করেছে, তিনি সরকারি কর্মচারী, আমার বন্ধু তালিকায় ছিলেন।
তার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি, কথাও হয়নি, অথচ আমার একটি ফেসবুকে শিক্ষা নিয়ে একটি পোস্ট তার পছন্দ হয়নি, বিধায় আমাকে আক্রমণ করে, ব্লক দিয়ে চলে গেছেন। তো, তিনি যে ভাবই পড়েন, গল্প লেখেন, সাহিত্য করেন, গান শোনেন, তার ফল কী হলো? এত অসহিষ্ণু কেন হবেন এসব করা মানুষ?
অথচ আমার এমন বহু বড় ভাই আছেন, সরকারি বড় কর্মকর্তা, যারা কখনো বই পড়েনি, গান করেনি, সাহিত্য করেনি, কিন্তু নামাজ পড়েছে, আর চাকরি-বাকরির পড়াশোনা করেছে, তারা আমাকে মাথায় তুলে রাখে। নাম উল্লেখ করব না এমন বড়ভাই জীবনে পেয়েছি, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পাশে দাঁড়িয়েছে। অথচ তাদের সাহিত্য, সংগীত করতে দেখিনি। তার মানে, সাহিত্য, সংগীত জরুরি নয়? যারা প্রথম হয়নি তারা জীবনে কিছুই করতে পারবে না? অবশ্যই পারবে। সাহিত্য, সংগীত অবশ্যই শুনব, তবে তা অবশ্যই যেন আত্মার শান্তির জন্য হয়, কোনো ব্যক্তিগত লাভালাভ বা সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য নয়। জীবনানন্দের কবিতা না পড়লে প্যাঁচা, শঙ্খচিল, সবুজ ঘাসের প্রতি মায়া কীভাবে জন্মাবে? 
হয়ত ছেলেটি লুকিয়ে গান শুনে, সিনেমা দেখে, কবিতা পড়ে। আমরা কী সবজান্তা যে, একজনের মনের খবর সবটুকু পেয়ে যাব একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে? বুয়েটের প্রচুর ছেলেমেয়ে আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে, যারা চমৎকার সব বই পড়ে, আমাকে অনেক সময় বই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আমি আশাবাদী এরা একদিন দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। মানুষের জীবন দুর্বিষহ নয়। হুমায়ূন ফরীদির একটা কথা আছে ‘পৃথিবীটা কেবল জর্জ বুশদের মতো মানুষের জন্য নয়, এখানে রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষও আছে’। তাই বেঁচে থাকতে হবে এবং কিছু একটা করে যেতে হবে। সবাই সবার জায়গা থেকে সেই কাজটাই করুক না। অসুবিধা কী? শুধু কারও অকল্যাণ, ক্ষতি না করলেই তো হয়। ভাইরাল সংস্কৃতি কতটা বিষাক্ত, অর্থহীন হয়েও অর্থবহ তার ফিরিস্তি আছে, আমার সংস্কৃতিচিন্তার কারখানা বইয়ের ‘জেন জেড ও ভাইরাল সংস্কৃতি’ শীর্ষক প্রবন্ধে। এ ধরনের বিষয়ে এমন লেখা এই প্রথম।
 news24bd.tv/ডিডি