রাশিদা সুলতানার শূন্যমার্গে উপন্যাস নিয়ে দুটি পর্যবেক্ষণ

লেখক রাশিদা সুলতানা ও তার উপন্যাসের প্রচ্ছদ

বুক রিভিউ

রাশিদা সুলতানার শূন্যমার্গে উপন্যাস নিয়ে দুটি পর্যবেক্ষণ

অনলাইন ডেস্ক

সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ

একটা ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি, ঢাকায় সঙ্ঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ, যাতে বহুসঙ্খক সেনা-কর্মকর্তা-কর্মচারীর অকস্মাৎ অভাবিত মৃত্যু, আর তার প্রেক্ষাপটে একটা অদ্ভুত ত্রিভুজ-প্রেম, দু’টি নারী, শিউলি আর নাজিয়া, আর তাদের কম্পাসের কেন্দ্রে রামিম নামক একজন উদ্ভট যুবক। কাহিনিতে আসে শিউলির শয়তান ত্রাতা, মিজান। খানিকটা আরব্য উপন্যাসের মতো, নানা সুতো-উপসুতোতে গাঁথা একটা সম্পূর্ণ কথামালা।
যা সবচেয়ে উল্লেখ্য এ-উপন্যাসে, তা রাশিদার আপাত-নির্লিপ্তি।

ভীষণ সব ঘটনা ঘ’টে চলেছে, নানান সব জট লেগে চলেছে (যথা শিউলির খুন), কিন্তু লেখকের প্রায় কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তাতে, তিনি নিজে অংশগ্রহণ করছেন না তাঁর সৃষ্টিতে। এই গুণটা, এই শৈল্পিক দূরত্ব, আজকালকার লেখালিখিতে মোটের উপর দুর্লভ ব’লে মনে হয়।
রাশিদা সুলতানার জন্মবাসরে “শূন্যমার্গে” উপন্যাসটির বহুল প্রচার আশা করছি।

আকমল হোসেন:

রাশিদা সুলতানার চারটি গল্পগ্রন্থ ‘আপনামাঁসেঁ হরিণা বৈরি’ (২০০৪), ‘আঁধি’ (২০০৭), ‘পরালালনীল’ (২০০৯), ‘পাখসাট’ (২০১২) ও একটি কবিতাগ্রন্থ ‘জীবন যাপন দখিন হাওয়া’ প্রকাশিত হয় ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে।

সবশেষ  একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘সাদা বিড়ালেরা’। এর ৯ বছর পর বেরুলো ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়  উপন্যাস, নাম,  শূন্যমার্গে।
অকপটে জীবনের গল্প বলেন রাশিদা সুলতানা। কী লেখা যাবে আর কী লেখা যাবে না, এ-সংক্রান্ত অলিখিত বিধান, নিয়ম-শৃঙ্খলা তিনি অনায়াসে ভেঙে ফেলেন। তাঁর আছে একটা অনুপম নৈর্ব্যক্তিকতা, যা তাঁকে হিম্মত জোগায় নানা স্তরের মানুষের জীবনে অবাধ পদচারণায়।
‘শূন্যমার্গে’ গতানুগতিক উপন্যাসের জগতে চমক-জাগানিয়া। কাহিনি একবার শেষ হয়ে আবার পেয়েছে জীবন। প্রধান চরিত্র দুজন নারী, যাদের জীবন একটি পুরুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। নিষ্ঠুর, মর্মন্তুদ পৃথিবীর ক্যানভাসে রাশিদা এঁকেছেন সমসাময়িক কালের প্রেম ও দ্রোহের ইতিবৃত্ত।
বিশেষত নারী-চরিত্র-দুটির অঙ্কনে লেখকের মুন্সিয়ানা ঈর্ষণীয়। শিউলি এবং নাজিয়া, দুজনেই যদিও গল্পের অদ্ভুত নায়ক, রামিমের অনুরক্তা এবং তার উপেক্ষার নির্মম শিকার, তারা একেবারেই আলাদা চরিত্র, সচরাচরের বাইরের দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং একই সঙ্গে ভীষণ শক্তিশালী এবং অত্যন্ত ভঙ্গুর মানুষ।
উপন্যাসটি এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলা যায় লেখকের গদ্যের গুণে, কিন্তু দাবি করে পাঠকের গভীর অভিনিবেশ।

news24bd.tv/ডিডি