এখনো দাঁড়িয়ে আছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের সেই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ির মসজিদ। ২৪০ বছরের পুরনো কারুকার্যময় এ মসজিদ জামালপুর ইউনিয়নের আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই চোখে পড়বে অপূর্ব সৌন্দর্য আর দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ। অপরূপ নকশা সম্বলিত মসজিদটি এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জেলার পাঁচটি উপজেলায় ছড়িয়ে থাকা অনেক পুরাকীর্তির মধ্যে ২৪০ বছরেরও অধিক পুরাতন জামালপুর জমিদার বাড়ির এই মসজিদটি অন্যতম। এর নির্মাণশৈলী ও অপূর্ব কারুকাজ মুগ্ধ করে যে কোনো মানুষকে। ১৭৮০ শতাব্দীতে মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জমিদার আব্দুল হালিম চৌধুরী।
জামালপুর চৌধুরী পরিবার সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম বাংলার তৎকালীন উত্তর দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট মহকুমার রায়গঞ্জ থানার বারোর পরগনা তাজপুর গ্রামে পীর বংশে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল হালিম।
মসজিদ অঙ্গনে প্রবেশমুখে বেশ বড় সুন্দর একটি তোরণ রয়েছে। মসজিদটির শিল্পকলা দৃষ্টিনন্দিত, মনোমুগ্ধকর ও প্রশংসাযোগ্য। মসজিদে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ পাথরের কাজ করা। এই মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মিনার। মসজিদের ছাদে ২৪টি মিনার আছে। একেকটি মিনার ৩৫ ফুট উঁচু এবং প্রতিটিতে নকশা করা রয়েছে। গম্বুজ ও মিনারের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য।
মসজিদটির চারটি অংশ হলো, মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত হয়ে পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের উপর ছাদবিশিষ্ট মূল দরজা। খোলা বারান্দার প্রাচীরে ও মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের অলংকার রয়েছে। মসজিদটির মূল দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি। প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থামবিশিষ্ট। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। মসজিদটির ভেতরে দরজায়, বারান্দায় এবং বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের সুদৃশ্য নকশা রয়েছে। এক সঙ্গে এই মসজিদে প্রায় ৩০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন।
জামালপুর জমিদার বাড়ির সদস্য জুলফিকার আলী চৌধুরী বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছর আগে মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিলেও এখন পর্যন্ত মসজিদটি সংরক্ষণে তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার যদি মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য সুদৃষ্টি দিত তাহলে এটি আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকবে বলেও মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, এই জামালপুর মসজিদ দীর্ঘদিন আগের। শুনেছি মসজিদের কিছু মিনার ভেঙ্গে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি ওই ইউনিয়নের একটি আকর্ষণ। যেটি দেখতে অনেকেই আসেন। আমরা মসজিদ কমিটির সকলের সাথে কথা বলে এটা সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
news24bd.tv/তৌহিদ