তিলোত্তমা ঢাকা সাজছে নতুন রূপে

রাতের হাতিরঝিল

রাজধানীর উন্নয়ন

তিলোত্তমা ঢাকা সাজছে নতুন রূপে

মো. ইস্রাফিল আলম

স্বাধীনতার সময় সীমিত পরিসরের ঢাকা এখন তার সীমা-পরিসীমা ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে যৌবনে পদর্পণ করেছে। অনেকখানি বদলে গেছে ঢাকা। ২০ বছর আগে ঢাকা দেখেছেন এমন কেউ এখন এলে চিনতে পারবেন না এ শহর। যানজট, শবদূষণ, খোড়াখুড়ি আর ধুলাবালিতে ভরপুর রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এখন সবুজের সমারহ, নির্মল বাতাস; আর ওয়াটার ট্যাক্সিতে গন্তব্যে ছুটে চলেন শহরবাসী।

একদিনে এই পরিবর্তন ঘটেনি। সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এ শহরের চেহারা ক্রমশ বদলেছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন

চারশ বছর আগের বুডিগঙ্গার তীরের এক ক্ষুদ্র ঢাকা অবকাঠামোগত পরিবর্তনে আজ বিশাল আকার ধারণ করেছে। গত ১৫-২০ বছরে ঢাকার পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মতো।

ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ, দৃষ্টিনন্দন করতে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাইরেও অনেকগুলো প্রকল্প সম্পন্ন করেছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে— হাতিরঝিল প্রকল্প, ফ্লাইওভার, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল, বিভিন্ন পার্কের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগানো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইড হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, রাসেল গ্যাস্ট্রো লিভার হাসাপাতাল, নতুন ধরনের বাস নামানো—যেমন: ঢাকা চাকা, গ্রিন বাংলা ইত্যাদি, পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন, পূর্বাচল লিংক রোডস্থ খাল খনন, সাংবাদিকদের জন্য ফ্ল্যাট, বস্তিবাসীদের ফ্লাট, আগারগাঁওয়ে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ প্রভৃতি।  

হাতিরঝিল

হাতিরঝিলের নামকরণের একটা মজার গল্প আছে। তখন হাতির ঝিলের নাম ছিল ‘বগা বিল’। হাজার হাজার বকে বিল সাদা হয়ে থাকতো। সে সময় ধানমন্ডিতে ছিল হাতিশালা। সেখানে অনেক হাতি দেখাশোনার লোকজনও (মাহুত) থাকতো। একদিন কিছু হাতি হাতিশালা থেকে দলছুট হয়ে পূর্বদিকে আসতে শুরু করলো এবং ‘বগা বিলে’ চলে এলো। হাতিগুলো বকগুলোকে তাড়িয়ে দিল। বগা বিলের পানির হাতিদের আকর্ষণ করলো। মাহুতরা হাতিগুলোকে ‘বগা বিলে’ খুঁজে পেলেন। তখন বগা বিলের পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ। তাই মাহুতরা হাতিগুলোকে ওখানেই গোসল করানোর সিদ্ধান্ত নেন। নিয়মিত সেখানে হাতিদের স্নান করানোর কারণেই পরে এর নাম হয় যায় ‘হাতির বিল’।  

তবে হাতিরঝিলের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ভিন্ন রূপে ফিরিয়ে এনেছে সরকার। এখন ঢাকার সৌন্দর্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত এই হাতিরঝিল। ২০০৭ সালের অক্টোবরে ১ হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকার এই প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ৩০২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ঢাকার রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, তেজগাঁও, মগবাজার, কারওয়ান বাজার এ অংশগুলোকে এক সুতোয় গেঁথেছে হাতিরঝিল। ঢাকার হৃদপিণ্ড হিসেবে পরিচিত এটি।  

যা আছে

হাতিরঝিল প্রকল্পে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেস সড়ক, স্থানীয় জনগণের যোগাযোগ সহজ করার জন্য ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্ভিস রোড, ৪৭৭ দশমিক ২৫ মিটার দীর্ঘ চারটি সেতু, পথচারী ও ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত এবং ৯ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ হ্রদের পাশে হাঁটার পথ, ২৬০ মিটার দীর্ঘ তিনটি ভায়াডাক্ট এবং প্রকল্প এলাকা যানজটমুক্ত রাখতে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারপাস, ইন্টারসেকশন ও রাউন্ডঅ্যাবাউট নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পে ১০ দশমিক ৪৫ কোটি ঘনফুট বর্জ্য অপসারণ, ১০ দশমিক ৪০ কিমি মেইন ডাইভারশন স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন করে প্রকল্প এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করা হয়েছে।  

বিনোদন কেন্দ্র: হাতিরঝিলের সৌন্দর্য প্রাণ কাড়ে রাজধানীবাসীর। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর অন্য রকম এক রূপে সজ্জিত হয় এই ঝিল। বেলা গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। লেকের পাড় ঘেষে বসার বেদিগুলোতে ভিড় করতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের। নয়নাভিরাম হাতিরঝিলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায় এখানকার ব্রিজগুলো থেকে। প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত অবধি এসব ব্রিজে সময় কাটাতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের।

রামপুরার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা নিশা মাঝে মাঝেই ক্লাস শেষে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে আসেন হাতিরঝিলে। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ভার্সিটি শেষে মাঝে মাঝেই বন্ধুদের নিয়ে এখানে আসি। চা এর সঙ্গে হালকা নাশতা করি। পাশাপাশি আড্ডা দেই কিছুক্ষণ। ভালো লাগে। আশেপাশে আর সময় কাটানোর মতো ভালো জায়গা নেই। তাই হাতিরঝিলেই আসি। ’

হাতিরঝিল বেড়াতে আসা পঞ্চাশোর্ধ ব্যবসায়ী কাওসার হোসেন বলেন, ‘নদী আর গাছপালা আমার খুবই ভালো লাগে। ঢাকার মধ্যে তো আর পাব না। যেগুলো আছে তাও সব দূষিত। তাই মাঝে মাঝে এখানে আসি। লেকের পাড়ে কোনো একটি গাছের নিচে বসে থাকি। এখানকার বাতাস বেশ সতেজ যা মন ভালো করে দেয়। ’

যানজটমুক্ত পথ: রামপুরা থেকে কাওরানবাজার পর্যন্ত চক্রকার পথ রয়েছে হাতিরঝিলে। কোনো যানজট নেই। এ রাস্তায় প্রবেশকারী যানবাহনগুলোগুলো খুব সহজে গন্তব্যে পৌঁছাছে পারে।     

চক্রাকার বাস: হাতিরঝিলের ভেতর দিয়ে সর্বসাধারণের যাতায়াতের জন্য রয়েছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে এ বাস ব্যবহার করে খুব সহজে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া যায়। যাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নেই তারা হাতিরঝিলের মধ্যে সহজে চলাচল করতে পারে চক্রাকার বাসে। দুইটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের পাশাপাশি এখানে আছে আরও ১০টি বাস। পুরো হাতিরঝিল এলাকা অনেকটা ‘ট্যুরিস্ট বাসে’র মতে করে ঘুরে দেখা যায়। আর এর জন্য খরচ হয় জনপ্রতি মাত্র ৩০ টাকা।

ওয়াটার ট্যাক্সি: বিনোদনের পাশাপাশি যাতায়াতে বেশ পরিবর্তন এনে দিয়েছে হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি। খুব কম সময় মানুষ বাড্ডা বা  রামপুরা থেকে কাওরান বাজার যেতে পারেন অনায়াসে। অফিস শেষে স্ত্রীকে নিয়ে হাতিরঝিলে নৌকা ভ্রমণ করতে আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে নির্মল বিনোদনের জায়গা খুব একটা নেই। দুই একটি জায়গা যা আছে সেখানেও যানজট, অব্যবস্থাপনা ও খরচ অনেক বেশি। তাই এখানে আমরা ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরতে আসলাম। জ্যাম নেই।  

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। আট লেনের রাস্তার দুই পাশে লেক আর ডিভাইডারের মাঝে গাছের সারি এক অন্যরকম সাজে সাজিয়েছে রাস্তাটিকে। ঝকঝকে রাস্তায় চলাচল আর সৌন্দর্য মন কাড়বে যে কাউকে। সাড়ে ১২ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের এই এক্সপ্রেসওয়ে পূর্বাচলকে ঢাকার পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করেছে। পূর্বাচলে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় রাজধানী থেকে খুব সহজে যাওয়া যায় এই রাস্তা ধরেই।     

যোগাযোগের নতুন দ্বার: পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েটি নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। পশ্চিমে প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বে ঢাকা বাইপাসকে সংযুক্ত করেছে। এতে কমেছে যাতায়াতের সময় ও দূরত্ব।  

সড়ক যেন পর্যটনকেন্দ্র: পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে দেশের সবচেয়ে চওড়া ও দ্রুতগতির সড়ক। এই সড়ক দিয়ে দিন-রাত শাঁ শাঁ করে ছুটে চলে যানবাহন। সড়কের দুই পাশের পাড় বাঁধানো খালে টলমল করে স্বচ্ছ জল। সড়কের মাঝখানের মিডিয়ানে লাগানো হয়েছে দেশি-বিদেশি গাছ। বসেছে বাহারি রঙের ল্যাম্পপোস্ট। এছাড়া দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া পাড় বাঁধানো দৃষ্টিনন্দন খালে নামানো হবে ওয়াটার বাস। পাড়েই লাল ইটের ওয়াকওয়ে। খালপাড় শোভিত থাকবে নানা রঙের দেশি-বিদেশি গাছে। এটিকে তাই রাজধানীর অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবেও বিবেচনা করছে সংশ্লিষ্টরা।  ‘কুড়িল পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্প’র পরিচালক এম এম এহসান জামীল সে সময় বলেন, এই রাস্তাটি ধরে ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের দিকে কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে। নরসিংদী থেকে এসে মানুষ অফিস করবে। ’ 

রাস্তা ঘিরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন: কুড়িল থেকে এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিআরটিসির বাসে ভোগান্তি ছাড়াই পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলায় যান নগরবাসী। মেলায় যেতে মাত্র ২০-২৫ মিনিট লাগে। কোথাও যানজটে পড়তে হয় না। সড়কটির দুই পাশেই গড়ে উঠছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, পার্ক, কনভেনশন সেন্টার, ফুডকোর্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পূর্বাচলে উঠতে শুরু করেছে বহুতল ভবন। পূর্বাচলের বিভিন্ন সেক্টরে গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্ট, বিনোদন পার্ক, সুইমিং পুল, ক্লাবসহ নানা স্থাপনা। ময়েজউদ্দিন চত্বরেই ডজনের বেশি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। সন্ধ্যা নামতেই লাল-নীল বাতিতে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা করছে। রাত-দিন রাজধানীবাসী ভিড় জমাচ্ছেন এসব এলাকায়।  

জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্ক: নগরবাসীর অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্ক। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এই সড়কের কারণে জলসিঁড়িতেই সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তিনটি ভালো স্কুল হয়েছে। আগে এসব এলাকার মানুষ তার সন্তানদের এমন স্কুলে পড়ানোর কথা চিন্তাও করতে পারেনি। খিলক্ষেতের ডুমনি এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন মোল্লা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এক সময় নৌকায় করে শহরে যেতে হতো। পরে রাস্তা হলেও তা ছিল ভাঙাচোরা। বর্ষায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা থাকত। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়া যেত না। ৩০০ ফুট সড়কটি এই এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ। ’ 

জমির মূল্য বৃদ্ধি: একদিকে এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যদিকে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের কারণে ডুমনিতেও জমির দাম বহুগুণ বেড়ে গেছে। জমি বিক্রি করে অনেকেই এখন বড় বড় বিল্ডিং তুলছেন। পাতিরা এলাকায় ৩০০ ফুট সড়কের কাছাকাছি ২০১৪ সালে সাড়ে ৭ কাঠা জমি কেনেন ওবায়দুল ইসলাম হিমেল। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তখন প্রতি কাঠা জমি ৭ লাখ টাকায় কিনেছিলাম। রাস্তাটার কারণে এখন প্রতি কাঠা ৫০-৬০ লাখ টাকা দাম উঠে গেছে। ’ 

রাজধানীকে চারদিক দিয়ে সংযুক্ত করবে: ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) অনুযায়ী, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ৮০ ফুট, ১৩০ ফুট ও ২০০ ফুট চওড়া তিনটি রাস্তা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মধ্য দিয়ে মাদানি এভিনিউ হয়ে ডেমরার দিকে যাবে। এর উল্টো দিকে রাস্তা তিনটি যাবে টঙ্গী পর্যন্ত। অর্থাৎ ৩০০ ফুট সড়কটি রাজধানীকে চতুর্দিক থেকে সংযুক্ত করবে। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মেট্রোরেল যাবে। এ জন্য মাঝ বরাবর ৪ মিটার জায়গা রাখা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় খননের মাধ্যমে তিনটি খালের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করায় নিকুঞ্জ, জোয়ারসাহারা, বিমানবন্দর, কালাচাঁদপুর, কাওলা, খিলক্ষেতসহ আশপাশের এলাকা আর জলাবদ্ধ হবে না।

শাহজালাল বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল

বদলে গেছে হযরত (রা.) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিত্র। শুধু রানওয়ের প্রসারতাই নয়, নতুন টার্মিনাল (থার্ড টার্মিনাল) নির্মাণ এই বিমানবন্দরের অবায়ব পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এই বিমানবন্দরকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় যেন উন্নত বিশ্বের কোনো বিমানবন্দর এটি। টার্মিনালটি বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে বিমানবন্দরটি সৌন্দর্য।          

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দিন ‘স্বপ্নকে বাস্তবের সাথে সংযুক্ত করা’র স্লোগানে নির্মিত মনোরম এই টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন তিনি।  

সুবিধা

পার্কিং: বেবিচকজানায়, বিশ্বমানের এই টার্মিনালে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি হচ্ছে। টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হচ্ছে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে।

বোর্ডিং ব্রিজ: নতুন টার্মিনালে মোট বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ২৬টি, যেখানে আগের দুটি টার্মিনালে মোট ব্রিজ ছিল ৮টি।  

চেক ইন কাউন্টার: আগের দুটি টার্মিনালে মোট চেক ইন কাউন্টার ছিল ৬২টি আর ইমিগ্রেশন কাউন্টার ছিল ১০৭টি। তৃতীয় টার্মিনালে আরও যুক্ত হয়েছে চেক ইন কাউন্টার ১১৫টি আর ইমিগ্রেশন কাউন্টার ১২৮টি।

যাত যাত্রী সেবা পাবেন: দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনালে এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী সেবা পাচ্ছেন। সেই হিসাবে বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

যানজট ছাড়াই প্রবেশ করা যাবে টার্মিনালে: ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হলে যানজটের ভয়ে হাতে লম্বা সময় নিয়ে রওনা দিতে হয়। বেবিচক বলছে, তৃতীয় টার্মিনালে যেতে সেই ভোগান্তি পোহাতে হবে না। যানজট এড়ানোর জন্য নানা অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। উড়ালসড়কের সব কটি পথই তৃতীয় টার্মিনালে ঠেকবে।

যাত্রীসেবায় বাড়তি সুবিধা: তৃতীয় টার্মিনালে সময় কাটানোর জন্য মুভি লাউঞ্জ, ফুডকোর্ট, এয়ারলাইনস লাউঞ্জ, ডে-রুম ও ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ থাকবে। যাত্রীদের নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, বাচ্চাদের খেলার জায়গা রয়েছে।  

স্বয়ংক্রিয় ই-গেট: নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমণ পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় ই-গেট থাকবে। যেসব যাত্রী অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আসবেন, তাঁদের জন্য পাঁচটি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ১৭৭টি চেকইন কাউন্টার, ৬৪টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং ৬৪টি আগমনী ইমিগ্রেশন ডেস্ক।  

যাত্রী তল্লাশিতে নতুন পদ্ধতি: যাত্রীদের তল্লাশির ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে নতুন টার্মিনালে। বডি স্ক্যানার যন্ত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তল্লাশি চালানো হবে।

স্বাধীনতার সময় সীমিত পরিসরের ঢাকা এখন তার সীমা-পরিসীমা ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে যৌবনে পদর্পণ করেছে। অনেকখানি বদলে গেছে ঢাকা। ২০ বছর আগে ঢাকা দেখেছেন এমন কেউ এখন এলে চিনতে পারবেন না এ শহর। যানজট, শবদূষণ, খোড়াখুড়ি আর ধুলাবালিতে ভরপুর রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে এখন সবুজের সমারহ, নির্মল বাতাস; আর ওয়াটার ট্যাক্সিতে গন্তব্যে ছুটে চলেন শহরবাসী। একদিনে এই পরিবর্তন ঘটেনি। সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এ শহরের চেহারা ক্রমশ বদলেছে।

পার্কের উন্নয়ন 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান: রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সুপরিসর নগর উদ্যান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এটি পূর্বে রমনা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ এখানেই দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বার পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই উদ্যানেই আত্মসমর্পণ করেছিল। ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার এই উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।

১৯৭৫ সালের পর এলাকাটিকে সবুজে ঘেরা পার্কে পরিণত করা হয়। পার্কের একপাশে শিশুদের জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র তথা পার্ক গড়ে তোলা হয়। এখানে শিশুদের জন্য নানা ধরনের আকর্ষণীয় খেলাধুলা, খাবার রেস্তোরাঁ এবং ছোটখাটো স্মারক জিনিসপত্র ক্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালে এখানে ‘শিখা চিরন্তন’ স্থাপন করা হয় এবং একইসঙ্গে যেখানে পাকিস্তানি সেনাগণ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিল সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ। এছাড়া নানা প্রজাতির গাছ লাগানোসহ এই উদ্যোনের সৌন্দর্য বর্ধনে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।  

রমনা পার্ক: রমনা পার্ককে বলা হয় রাজধানীর ফুসফুস। ৬৮ দশমিক ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই পার্কে ২১১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বিনোদন ও সকালে হাঁটাহাটির জন্য রাজধানীর বাসীর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পট। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ ভোরে রমনা পার্কের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে এই পার্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পার্কের সৌন্দর্য রক্ষা ও উদ্ভিদগুলো রক্ষণাবেক্ষণে সার্বক্ষণিক লোক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এই পার্কের মধ্যে ৮ দশমিক ৭৬ একর ভূমির একটি লেক রয়েছে। লেকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও মানুষের হাঁটার সুবিধার জন্য লেকের ওপর কাঠ দিয়ে দীর্ঘ সেতু তৈরি করে দিয়েছে সরকার।  

বাহাদুর শাহ পার্ক: পুরান ঢাকার সদরঘাটের কাছে লক্ষ্মীবাজারে বাহাদুর শাহ পার্ক অবস্থিত। এ স্থান বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। ১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণের পর এই ময়দানেই এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা পাঠ করেন ঢাকা বিভাগের কমিশনার। সেই থেকে এই স্থানের নাম হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’। ১৯৫৭ সালের আগে পর্যন্ত পার্কটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর এক প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকেরা ফাঁসি দেয় অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে। তারপর জনগণকে ভয় দেখাতে সিপাহিদের লাশ এনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে। ১৯৫৭ সালে (মতান্তরে ১৯৬১) সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক। নতুন নতুন গাছা লাগানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে পার্কটির সৌন্দর্যে নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার। কম খরচে নৌকা ভ্রমণও হয়ে গেল। ’

অতি প্রয়োজনীয় ৩ হাসপাতাল

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশে কিছু মানুষ বাড়তি সুবিধার জন্য চলে যান বিদেশে। কিন্তু দেশেই যাতে উন্নতমানের সুবিধা রেখে চিকিৎসা দেওয়া যায় এ চিন্তা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আধুনিক সুবিধা: বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশি চিকিৎসকরাও এখানে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯টি ফ্লোর এবং তিনটি বেজমেন্ট ফ্লোর আছে। মোট বেড ৭৫০টিম, যার মধ্যে থাকবে ১০০টি আইসিইউ বেড এবং ১০০টি ইমার্জেন্সি বেড।

অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য এ হাসপাতালকে প্রধানত পাঁচটি স্পেশালাইজড সেন্টারে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র, হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগ সেবাকেন্দ্র, হেপাটোবিলিয়ারি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপনকেন্দ্র, কিডনি রোগকেন্দ্র এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

এছাড়া প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার দোকান ও ব্যাংকিং সুবিধাও আছে হাসপাতালে। চিকিৎসকদের জন্য পৃথক ক্যাফেটেরিয়া ছাড়াও রয়েছে তিনটি ক্যাফেটেরিয়া-যেটা রোগী এবং তার আত্মীয়রা ব্যবহার করতে পারেন। লন্ড্রি হাউস এবং প্রায় ২৫০টি গাড়ি রাখার পার্কিং সুবিধা রয়েছে। রোগী ভর্তি, রোগীর তথ্য সংরক্ষণ, চিকিৎসা এবং সার্বিকভাবে হাসপাতালের নিরাপত্তায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ডাক্তারদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। মোট ৬১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হয়। যারা স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট

২০১৪ সালে তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে জ্বালাও পোড়াও এর মতো অরাজকতা বাড়তে থাকে। যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়। ঠিক এর পরের বছর ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আয়োজিত প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মানের একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে একনেকের সভায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকার চাঁনখারপুলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং একই বছরের ২৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই থেকে  আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান।  

১.৭৬ একর জমির ওপর নির্মিত ১২ তলাবিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউটে রয়েছে ৫০০ শয্যা, ২২ শয্যা বিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), রোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ২২ শয্যাবিশিষ্ট হাই ডেফিসিয়েন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং একটি অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে জন্মগত ঠোঁটকাটা, তালুকাটাসহ বিভিন্ন রোগীদের প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে। দেশের যেকোনো স্থানে আগুনে ক্রিটিক্যাল দগ্ধদের আনা হয় এই প্রতিষ্ঠানে। চিকিৎসা সেবায় শেখ হাসিনার এক অনন্য স্থাপনা এই বার্ন ইনস্টিটিউট।   

শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত।  পরিপাকতন্ত্র, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসজনিত গ্যাস্ট্রো ইন্টেসটাইনাল রোগের চিকিৎসা করা হয় এই হাসপাতাল।  ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর জন্য প্রায় ২১৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। ১০তলা ভবনের নিচতলা ও আন্ডারগ্রাউন্ডে ৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রয়েছে ৩২টি কেবিন ও দুটি ভিভিআইপি কেবিন। এ ছাড়া রয়েছে ৪টি অপারেশন থিয়েটার, ৮ বেডের আইসিইউ, ১২ বেডের এইচডিইউ, ১২টি ওয়ার্ড, ৩০টি কেবিন, মৃতদেহ সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও বেজমেন্ট পার্কিং। চতলা ভবনগুলোযতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হোস্টেল, ডক্টরস ডরমেটরি, নার্সেস হোস্টেল ও ইমার্জেন্সি স্টাফ কোয়ার্টার করা রয়েছে।

বদলে গেছে আগারগাঁও

গত এক দশকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চিত্র বদলে গেছে। এই এলাকায় সরকারের প্রশাসনিক অনেকগুলো দপ্তর নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনের কার্যালয় করা হয়েছে। এখানে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, আর্কাইভ, বেতার, ইউজিসি, লোকাল গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পাসপোর্ট অফিস, পিএসসি, পরিবেশ অধিদপ্তর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, আইসিটি টাওয়ার,  আইডিবি ভবনসহ অনেকগুলো অফিস। বদলে গেছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট ও পরিবেশ। এগুলোর বেশিরভাগের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে গত ১০ বছরে।

শেষ কথা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু চেষ্টা করেছেন; ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছরে অনেকটাই থমকে ছিল দেশের অর্থনীতি অগ্রগতি। এর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর চেষ্টা করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সর্বশেষ টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থেকে রাজধানীসহ পুরো দেশকে অবকাঠামোগতভাবে বহুদূর এগিয়ে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে, রাজধানীর এ উন্নয়ন সে লক্ষ্য পূরণের পথে অনেকটা সহায়ক হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক