রমজান মাস যেভাবে মুমিনের জীবনে পরিবর্তন আনে

রমজান মাস যেভাবে মুমিনের জীবনে পরিবর্তন আনে

 মাওলানা আবদুল্লাহ আব্বাস নদভি

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

উল্লিখিত আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী কোরআন সাধারণভাবে মানবজাতির জন্য পথনির্দেশক, তবে অন্য আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা আল্লাহভীরু তারা কোরআন দ্বারা বেশি উপকৃত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আলিফ-লাম-মিম, এটা এমন কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, আল্লাহভীরুদের জন্য পথনির্দেশক।

’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১-২)

সুতরাং রমজান সুপথ লাভের মাস। তা অর্জন করতে হয় ইবাদত, বন্দেগি ও সাধনার মাধ্যমে। রমজানে মুমিন দিনে পানাহার পরিহার করে এবং রাতে ইবাদত, দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করে। মুমিন পৃথিবীর সব ছেড়ে আল্লাহমুখী ও একনিষ্ঠ হয়।

ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিকতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য পরিহার করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা এক ও অভিন্ন রং ধারণ করে। তা হলো আল্লাহর রং, তাঁর আনুগত্য ও ভালোবাসার রং। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমরা গ্রহণ করলাম আল্লাহর রং, রংয়ে আল্লাহ অপেক্ষা কে বেশি সুন্দর? এবং আমরা তাঁরই ইবাদতকারী। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩৮)
সে রং তার মধ্যে তৈরি হয় আত্মার পরিশুদ্ধি ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতা লাভের মাধ্যমে।

সারা দিনের অনাহার ব্যক্তির ভেতর অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারে, তাদের প্রতি সহমর্মিতা তৈরি হয় এবং মানুষের প্রতি দান করার আগ্রহ তৈরি হয়। অহংকার ও দাম্ভিকতা কমে যায়, বিনয় ও নম্রতা তৈরি হয়। এভাবে রমজানের রোজা মানুষের ভেতর সততা, নিষ্ঠা, ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ তৈরি করে। আর মানুষের এই ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। ফলে তারা জীবন-জীবিকায় প্রাচুর্য লাভ করে।
আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম এবং তাদের পাদদেশে নদী প্রবাহিত করেছিলাম। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬)

কিন্তু বর্তমানে রমজান মাহাত্ম্য ও গাম্ভীর্য হারিয়েছে বহুলাংশে। আগে রমজানে ধনীরা অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুধাবন করতে পারত আর এখন তারা খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে। আগে মানুষ সারা দিন অভুক্ত থাকার পর যখন পানি পান করত, শুকনা ঠোঁট ও গলা দিয়ে পানির ধারা প্রবাহিত হতো, তখন তারা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করত। আর এখন রমজানে খাবারের আয়োজন এত বেশি থাকে যে দেখে মনে হয় রমজান ভোগ-বিলাসিতার মাস। এগুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

রমজানে খাদ্যদানের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। মুসলিমরা পরস্পরকে আনন্দের সঙ্গে ইফতারের দাওয়াত দেয়। ইফতারের দস্তরখানে একজন রোজাদারও যদি পাওয়া যায়, তাতে সে খুশি হয়। শুধু রমজানে যে পরিমাণ তিলাওয়াত হয় অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ এ পরিমাণ পঠিত হয় না। রোজা আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শনও বটে। ইসলাম আগমনের পর থেকে মুসলিম সমাজে রোজা পালিত হচ্ছে, অথচ তার আগের অনুভূতি ঠিক আগের মতোই আছে। প্রতিবছর রমজান মুমিনের ভেতর উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করে। ঈমান ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার তাগিদে মুমিনদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। রমজানের এই চিরন্তন আবেদনের কথাই যেন মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর রীতি-নীতিতে তুমি কোনো পরিবর্তন দেখবে না। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ৪৩)

তামিরে হায়াত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর