কোরআনের যে সুরায় মহানবী (সা.)-এর বিদায়ের ইঙ্গিত রয়েছে

কোরআনের যে সুরায় মহানবী (সা.)-এর বিদায়ের ইঙ্গিত রয়েছে

 শরিফ আহমাদ

‘নাসর’ পবিত্র কোরআনের ১১০ নম্বর সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা কাওসারের মতো এর আয়াত সংখ্যা তিনটি। সুরার প্রথম আয়াত থেকে এর নাম দেওয়া হয়েছে।

এ সুরা আল্লাহর মদদ, বিজয় ও ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সুসংবাদবাহী। বিজয়োল্লাসে আনন্দে আত্মহারা না হয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা, তাসবিহ ও মাগফিরাত কামনার মাধ্যমে বিজয় উদযাপনের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।

সুরা নাসরের সারসংক্ষেপ

এই সুরার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আরবের বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। পৌত্তলিকতা নির্বাসিত হওয়ার সুসংবাদ এবং নবী করিম (সা.) বিদায় ঘনিয়ে আসার পূর্বাভাস দিয়েছেন।

আল্লাহর মদদে যখন চূড়ান্ত বিজয় (মক্কা বিজয়) হলো তখন মানুষ দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এলো। ইসলামের বিজয় ডংকা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলমান অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন ও অশান্তির আগুন দূর হলো। সাম্য শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার নব দিগন্ত উন্মোচিত হলো।

কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের পর করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুল, আপনি আল্লাহর প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করুন এবং বিনীত মস্তকে তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকুন। ’ আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে রাসুল (সা.) উক্ত নির্দেশ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।

মহানবী (সা.)-এর বিদায়ের ইঙ্গিত

আল্লাহর জমিনে দ্বিন প্রতিষ্ঠার জন্যই রাসুল (সা.)-কে পাঠানো হয়েছিল। চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে সেটার যথার্থ বাস্তবায়ন হয়। তাই সুরা নাসর নাজিল করে তাঁকে প্রস্থানের সময় জানিয়ে দেওয়া হয়।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উমর (রা.) বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রবীণ সাহাবিদের সঙ্গে আমাকেও শামিল করতেন। এ কারণে কারো কারো মনে প্রশ্ন দেখা দিল। একজন বললেন, আপনি তাকে আমাদের সঙ্গে কেন শামিল করছেন? আমাদের তো তার মতো সন্তান আছে। উমর (রা.) বলেন, এর কারণ তো আপনারাও জানেন। সুতরাং একদিন তিনি তাকে ডাকলেন এবং তাদের সঙ্গে বসলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি বুঝতে পারলাম আজকে তিনি আমাকে ডেকেছেন এ জন্য যে তিনি আমার প্রজ্ঞা তাদের দেখাবেন।

তিনি তাদের বলেন, আল্লাহর বাণী—‘ইজা জা-য়া নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু’-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আপনারা কী বলেন? তখন তাঁদের কেউ বলেন, আমরা সাহায্য প্রাপ্ত হলে এবং আমরা বিজয় লাভ করলে এ আয়াতে আমাদের আল্লাহর প্রশংসা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কিছু না বলে চুপ করে থাকলেন। এরপর তিনি আমাকে বলেন, হে ইবনে আব্বাস ! তুমিও কি তাই বলো? আমি বললাম, না। তিনি বলেন, তাহলে তুমি কী বলতে চাও? জবাবে আমি বললাম, এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের সংবাদ জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আল্লাহর সাহায্যে বিজয় এলে এটাই হবে তোমার মৃত্যুর আলামত। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি তো তাওবা কবুলকারী। এ কথা শুনে উমর (রা.) বলেন, তুমি যা বলেছ, এ আয়াতের ব্যাখ্যা আমিও তা-ই জানি। (বুখারি, হাদিস : ৪৬১০)

সুরা নাসরের ফজিলত ও আমল

এ সুরা নাজিল হওয়ার পর রুকু-সিজদার প্রচলিত তাসবিহগুলোর বাইরে রাসুল (সা.) আরো একটি তাসবিহ পড়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, এ সুরা নাজিল হওয়ার পর রাসুল (সা.) ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি’ দোয়াটি রুকু-সিজদার মধ্যে বেশি বেশি পাঠ করতেন। (বুখারি : ৪৬০৮)

সুরা নাসর একবার পড়ার ফজিলত বা সওয়াব হলো কোরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯৫)