আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইউরোপ

সংগৃহীত ছবি

আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইউরোপ

অনলাইন ডেস্ক

ইউরোপে কড়া নাড়ছে আরেকটি যুদ্ধ। এমনই মনে করছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা। এর বিরোধিতা করছে মহাদেশটির সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ। এই যুদ্ধে 'যোগ দিতে' বার্লিনকে রাজি করাতে পশ্চিমের মিত্র দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা জার্মানির রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে বৈঠকে বসছেন বলে জানা গেছে।

শুক্রবার ফরাসি গণমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের সংবাদে বলা হয়, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রায় ১১ মাস পর রামস্টেইনে বৈঠকে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বৈঠকে।

এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেন হেরে গেলে ইউরোপের কোনও দেশই আর নিরাপদ থাকবে না- এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।

তিনি বলেন, “আমি কাউকে ভয় দেখাতে চাই না, কিন্তু যুদ্ধ এখন আর অতীতের কোনও ধারণা নয়। যুদ্ধ এখন বাস্তব, আর তা শুরু হয়েছে দুই বছর আগে”, ইউরোপীয় গণমাধ্যমকে বলেন টাস্ক।

তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি যে এটি খুব ভয়ানক শোনাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণদের কাছে ৷ কিন্তু আমাদের এই বাস্তবতার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে যে একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে- যুদ্ধ পূর্ববর্তী যুগ। আমি বাড়িয়ে বলছি না, প্রতিদিন বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে। ’’ ইউক্রেইনে রাশিয়া নতুন করে কয়েকদফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এই সতর্কবার্তা দিলেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, ‘‘একটি শক্তিশালী জোট হিসেবে ইইউকে মানসিকভাবে নিজেদের সীমান্ত এবং নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে৷’’

চলতি মাসের শুরুর দিকেও যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপের নেতাদের সতর্ক করেছিলেন তিনি। এছাড়া আগামী দুই বছর ইউক্রেনে কী হয়, তার ওপর ইউরোপের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বলেও জানান। এমনকী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছে বলে মত পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর।

এর আগে ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক সহায়তার আবেদন জানিয়ে ডোনাল্ড টাস্ক সতর্ক করে বলেছিলেন, "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে আমরা সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে বাস করছি। "

যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গেল সপ্তাহে বলেছেন, ন্যাটো দেশগুলির প্রতি মস্কোর কোন আগ্রাসী অভিপ্রায় নেই। তিনি বলেছিলেন, ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশকে আক্রমণের পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা যদি ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে, তাহলে সেগুলো দেখা মাত্রই গুলি করে ভূপাতিত করবে রাশিয়ার বাহিনী।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের মাধ্যমে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন রাশিয়ার প্রতাপশালী নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই পরমাণু যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের সতর্ক করে হুংকার ছাড়তে দেখা গেছে তাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পৃথিবী মাত্র এক ধাপ দূরে। ’

মনে থাকার কথা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁকো গত মাসে ইউক্রেনে ফরাসি পদাতিক বাহিনী মোতায়েন করার কথা বলেছিলেন। যদিও অধিকাংশ পশ্চিমা মিত্র দ্বিমত পোষণ করেছে ম্যাঁকোর সঙ্গে। ন্যাটো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইতালি ইতিমধ্যে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ম্যাঁক্রোর আহ্বান। এমনকি কেউ কেউ এমনও বলেছেন, রাশিয়াকে খেপিয়ে তুলছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট!

ম্যাঁক্রোর আরেক মন্তব্যও উত্তাপ ছড়িয়েছে বেশ খানিকটা। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ভয় পেলে চলবে না। কারণ, আমরা কোনো বড় শক্তির মুখোমুখি নই। কোনো আহামরি শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছি না আমরা। বরং রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী একটি মধ্যম শক্তির দেশ। ’

পুতিনের হাত ধরে পারমাণবিক সংঘাতের সূত্রপাত হোক বা না হোক, ইউরোপের জন্য অপেক্ষা করছে আরেক বিপদ! ইউরোপীয় নেতাদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে ‘ডোনাল্ট ট্রাম্পের ফিরে আসার সংবাদ’। মনে করা হচ্ছে, চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় লাভের মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজে ফিরতে পারেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপীয় নেতাদের ধারণা, সত্যি সত্যিই যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, তাহলে ইউরোপের কপালে দুঃখই আছে! নেতাদের এ ধরনের চিন্তার পেছনে অবশ্য কারণও রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ন্যাটো নিয়ে বার বার বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। এই সংগঠনকে ‘অপ্রচলিত, অকার্যকর’ ইত্যাদি বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। এমনকি ট্রাম্প এখনো চরম ন্যাটো-বিদ্বেষী। নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণাতে ন্যাটো সম্পর্কে বিষোদগার করা বন্ধ করেননি। সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, ‘ন্যাটো তহবিলে নিয়মিত অর্থ প্রদান না করা সদস্য রাষ্ট্রদের বরং রাশিয়ার আক্রমণ করাই ভালো!’

সূত্র: ডিডব্লিও, বিবিসি, সিএনএন

news24bd.tv/DHL