ফুলেল সংবর্ধনায় সিক্ত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা ইয়ারজান

ফুলেল সংবর্ধনায় সিক্ত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা ইয়ারজান

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

গত ১০ মার্চ নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাফ মহিলা অনূর্ধ্ব ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলা। পঞ্চগড়ের মেয়ে ইয়ারজান খেলছিল গোলকিপার হয়ে। সেদিন ট্রাইব্রেকারে বল ঠেকিয়ে ৩-১ গোলে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে পুরো দেশ।

শনিবার সকালে দীর্ঘদিন পর পঞ্চগড় ফিরেছেন সেই ইয়ারজান। টুকু ফুটবল একাডেমি থেকে শিক্ষা নেয়া দরিদ্র কৃষকের মেয়ে ইয়ারজানকে ফুলেল সংবর্ধনা দিল টুকু ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড়রা। ইয়ারজানের সাফল্যে আনন্দে আপ্লুত তারা।

শহরের রশনাবাগে টুকু ফুটবল একাডেমি কার্যালয়ের ছাদে তাঁকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়।

পরে একটি পিকআপ যোগে ইয়ারজানকে নিয়ে গোটা শহর ঘুরে বেড়ানো হয়। এসময় হাত তুলে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইয়ারজান।

এসময় বাবা আব্দুর রাজ্জাক, দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষক আবু তারেক টুকুও ছিলেন সাথে। ইয়ারজানকে নিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে হাড়িভাষা ইউনিয়নের খকরাবান্দি গ্রামে তার নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় তাকে।

ফুলেল সংবর্ধনায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইয়ারজান বলেন, ১০ মার্চ কাঠমুন্ডুর সেই মাঠে বাবা আর আমার প্রশিক্ষক টুকু স্যার কে খুব মনে পড়ছিলো। বলগুলো যখন ঠেকাচ্ছিলাম তখন দেশের কথা, বাবার কথা, টুকু ফুটবল একাডেমির কথা মনে পড়ছিলো। বাবা আর কোচ থাকলে আরও খুশি হতাম। সেদিন আমি খুব কান্না করেছি। কতো লোকে কতো কি বলেছে। টিটকারী করেছে। খারাপ বলেছে। কিন্তু আমার বাবা আর কোচ আমাকে সাহস দিয়েছে।

চোখ মুছতে মুছতে কোচ টুকু বলেন, এ আনন্দ আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। কারও কোন সহযোগিতা পাইনি। বরং মানুষ হেয় করেছে। যে সাফল্য ইয়ারজান এনেছে তা পঞ্চগড়ের মেয়েদের অনেক কাজে লাগবে।

ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অনেক সময় টাকা থাকতো না। রিকশা ভাড়াও দিতে পারতাম না। তখন টুকু ভাই দিতো। মানুষ আমার মেয়েটাকে ছেলে ছেলে বলে টিটকারী করতো। বলতো এই মেয়ের বিয়ে হবে না। আমি কৃতজ্ঞ। আমি আমার মেয়ের জন্য সকলের দোয়া চাই।

ইয়ারজানের দরিদ্র পরিবার। থাকার ঘরও ছিলো না। বাবা মা মানুষের জমি চাষ করে সংসার চালান। তার সাফল্যের পর পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে অনেকে। জেলা প্রশাসন দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ির কাজ শুরু করেছে। র‍্যাব ১৩ তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা ও চাল ডাল এবং ইফতার সামগ্রী উপহার দিয়েছে।

আরও উপরে উঠতে চায় ইয়ারজান। পঞ্চগড়ের খেলোয়ারদের জন্যও করতে চান অনেক কিছু। এজন্য সকলের সহযোগিতা চান তিনি। এদিকে, বিকেলে নেপাল সাফ অনূর্ধ্ব ১৬ মহিলা দলের আরও ৩ নারী ফুটবলার আলপী, তৃষ্ণা এবং মিতুকে ফুলেল সংবর্ধনা দিয়েছে বোদা ফুটবল একাডেমি।

শনিবার বিকেলে বোদা পাথরাজ কলেজ মাঠে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির এসময় উপস্থিত ছিলেন। বোদা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বিপুল এবং স্থানীয়রা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

news24bd.tv/FA