শ্রীলঙ্কার পাহাড়সম রানে দিনশেষে বাংলাদেশের হতাশা বাড়লো

শ্রীলঙ্কার পাহাড়সম রানে দিনশেষে বাংলাদেশের হতাশা বাড়লো

অনলাইন ডেস্ক

দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষটিতে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে রানের পাহাড় তৈরি করেছে। ৫৩১ রানে থামে লঙ্কানরা। এই ম্যাচে বাংলাদেশের একের পর এক ক্যাচ মিসে শ্রীলঙ্কা সাজিয়েছে তাদের রানের পাহাড়।

রোববার (৩১ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের সকালে আকাশ ছিল বেশ মেঘলা।

পুরো প্রথম সেশনেই ছিল মেঘের আনাগোনা। যদিও শেষ অবধি বৃষ্টি আসেনি। কিন্তু ম্যাচের ধরন থেকে গেছে একইরকম। দিনের প্রথম ঘণ্টায় লঙ্কানদের কোনো উইকেট তুলে নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

প্রথম সাত ওভার পেসারদের দিয়ে করানোর পর সপ্তম ওভারে গিয়ে স্পিনার আনেন অধিনায়ক শান্ত। একপ্রান্তে স্পিন, আরেকদিকে পেসার; কিছুক্ষণ এমন চেষ্টার পর দুই দিক থেকেই স্পিনার নিয়ে আসেন তিনি। এ দফায় সফল হন।  উইকেট এনে দেন সাকিব আল হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথে ঝুলিয়ে দেন তিনি। সামনের পায়ে এসে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন চান্দিমাল। তার ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের গ্লাভসে। ভেঙে যায় চান্দিমালের সঙ্গে ধনঞ্জয়ার ৮৯ রানের জুটি।

এরপর উইকেটে আসেন কামিন্দু মেন্ডিস। তিনি ও ধনঞ্জয়া প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন, গড়েছিলেন বড় জুটি। লাঞ্চ বিরতি অবধি ৭৬ বলে ৩৬ রানের জুটি হয়ে যায় তাদের। ১০৮ বলে ৭০ রান করে ধনঞ্জয়া ও ৪১ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন কামিন্দু। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই উইকেটের দেখা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন খালেদ আহমেদ। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ১১১ বলে ৭০ রানে আউট হয়ে যান ধনঞ্জয়া।

নিজের পরের ওভারেও উইকেট পেতে পারতেন খালেদ। কিন্তু এ দফায় ওই ক্যাচ মিসের কারণেই ভুগতে হয় বাংলাদেশকে। এবারের সুযোগ হাতছাড়া জন্ম দিয়েছে বেশ আলোচনারও। ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন প্রভাথ জয়সুরিয়া। সেটি শুরুতে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে। তার হাত থেকে ছুটে দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো শাহাদাৎ হোসেন দীপুর হাত থেকেও ছুটে যায়। পরে তৃতীয় স্লিপে দাঁড়ানো জাকির ঝাঁপ দিলেও অল্পের জন্য বল হাতে পাননি।

এরপর উইকেট পাওয়ার জন্য লম্বা অপেক্ষাই ছিল বাংলাদেশের। মাঝে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যাচ নেন লিটন। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান কামিন্দু। এর মধ্যে প্রবাথ জয়সুরিয়ার ক্যাচ ছাড়েন লিটন। বাংলাদেশকে এই সেশনে দ্বিতীয় উইকেটটি এনে দেন সাকিব। তার বলে এলবিডব্লিউ হন দুই দফায় জীবন পাওয়া প্রবাথ জয়সুরিয়া। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ৭৫ বল খেলে ২৮ রান করেন প্রবাথ।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের রিভিউ নিয়ে রসিকতা করলো কলকাতা পুলিশ  

তিন উইকেট নিয়ে শেষ সেশন খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। এর প্রথমটি তারা হারায় রান আউটে। দুই চার মেরে ভালো সঙ্গের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কামিন্দু মেন্ডিসের সঙ্গে জুটি বড় করতে পারেননি বিশ্ব ফার্নান্দো। স্কয়ার লেগ থেকে করা শান্তর সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন। ২৬ বলে ১১ রান করেন বিশ্ব। ব্যক্তিগত ৪৬তম ওভারে এসে উইকেটের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হয় মেহেদী হাসান মিরাজের। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান লাহিরু কুমারা। ১২ বলে ৬ রান করেন তিনি।  

তখনো একপ্রান্ত আগলে ছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। হেবরি কলিনস ও সুনীল গাভাস্কারের পর কেবল তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে টানা চার ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকেও। তাইজুলের শেষে বলে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হয়ে যান আসিথা ফার্নান্দো।  

ওই ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ৯২-তে পৌঁছে গিয়েছিলেন কামিন্দু। তাকে শেষ অবধি ওই রানেই অপরাজিত থাকতে হয়েছে। ছয় ক্যাচ ফেলার পর অলআউট করার স্বস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ৩৬ ওভার বল করে ১০৬ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি তাইজুল। ৩৭ ওভারে ১১০ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন সাকিব। অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ দুই ও খালেদ আহমেদ পেয়েছেন এক উইকেট।  

শেষ বিকেলে নেমে আক্রমণাত্মক শুরু করে বাংলাদেশ। শুরুতে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল দুই ওপেনার জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়কে। এই দুজনে ভর করে দিনশেষ করতে পারলে ভালো অবস্থায় থাকবে, ছিল এমন আশাও। দিনের শেষদিকে কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ পরের দিনের খেলা শুরু করবে এমনটিও ছিলো প্রত্যাশা।   

কিন্তু সেই আশাও পূর্ণ হলোনা। দিনের খেলা দুই ওভার বাকি থাকতে লাহিরু কুমারার বলে বোল্ড হয়ে যান জয়। কুমারার ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৪২ বলে ২১ রান করেন বাংলাদেশের ওপেনার। যদিও তার সঙ্গী জাকির আছেন অপরাজিত। ৩৯ বল খেলে ২৮ রান করেছেন তিনি। শেষের দিকের ব্যাটসম্যান তাইজুলকে নামানো হয় উইকেট বাঁচানোর জন্য। ৯ বলে শূন্য রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করবেন তিনি।

news24bd.tv/SC