সার্টিফিকেট ‘সিস্টেম করতে গিয়ে’ ধরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট

ডিবির অভিযান

সার্টিফিকেট ‘সিস্টেম করতে গিয়ে’ ধরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ, মিরপুর এবং আগারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করে। ডিবি লালবাগের ডিসি মশিউর রহমান গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় এ কথা জানান।  

ডিবি কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকালে তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরিকৃত শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা, গুরুত্বপূর্ণ দলিল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়। এ সব কম্পিউটার প্রিন্টার ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি অরিজিনাল সার্টিফিকেট মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে হ্যান্ডওভার করা হয়।

 একইসঙ্গে সরকারি ওয়েবসাইটে সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রয়কৃত সার্টিফিকেটগুলো সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।  ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নাম্বার, রেজিস্ট্রেশন নাম্বারগুলোকে সার্স করলে তা সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।
 
তিনি জানান, একেএম শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেন ২০০৯ সালে।
বর্তমানে তার পদ সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নাম্বার, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেওয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সব ধরনের ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব তার কাঁধে। সহকর্মী কম্পিউটার অপারেটর বা এক্সপার্টদের সঙ্গে নিয়ে এই দায়িত্বটা তিনি পালন করেন।  

ডিবি কর্মকর্তা আরও জানান, কিন্তু শামসুজ্জামান তার অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের চেয়ে দুর্নীতিমূলক কাজ করার জন্যই বেশি আগ্রহী ছিল। সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবছর কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষায় জন্য রেজিস্ট্রেশন করছে, কতজন ফর্ম ফিলআপ করে রোল নাম্বার পেয়েছে, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, কতজন কৃতকার্য হয়েছে, কতজন অকৃতকার্য হয়েছে— সব তথ্যই তার কাছে থাকতো। এ বিশাল তথ্য ভাণ্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অথরিটি, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহ প্রতিমাস এবং বছরে শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা লাখ লাখ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছে।

এতে  আরও বলা হয়, শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের বিভিন্ন বিভাগের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য করে আসছে। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও দিতো মে তারা যে অরজিনাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে তা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।  

তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালেও মার্কশিট-সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়, কিন্তু হাইকোর্টের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বাহল হয়ে সে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঁচ হাজারের অধিক সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে। নিয়মিত মামলা রজ্জু হওয়া প্রক্রিয়াধীন।
 news24bd.tv/আইএএম