ইসরায়েলি হামলায় নিহত কে এই ইরানি জেনারেল জাহেদি?

জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি হামলায় নিহত কে এই ইরানি জেনারেল জাহেদি?

অনলাইন ডেস্ক

সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ১১ জন হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী-আইআরজিসির অন্যতম শীর্ষ জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি। ২০২০ সালে ইরাকে মার্কিন হামলায় আইআরজিসির কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর এই প্রথম বিদেশি হামলায় ইরানের কোনো শীর্ষ জেনারেল নিহত হলেন।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ শাখা আল-কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ছিলেন জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি।

এই বাহিনী আইআরজিসির হয়ে বিদেশে গুপ্তচর তৎপরতা চালায় এবং একই সঙ্গে এটি একটি প্যারা মিলিশিয়া বাহিনীও। রেজা জাহেদি ছাড়াও ইসরায়েলি হামলায় সিরিয়ায় জেনারেল হাদি হাজি রাহিমিও নিহত হয়েছেন।

জেনারেল রেজা জাহেদি লেবানন ও সিরিয়ায় আল-কুদস ফোর্সের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। অনুমান করা হয়, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক রক্ষার মূল চাবিকাঠি ছিলেন এই জেনারেল।

আর এ কাজে তাঁকে সহায়তা করতেন জেনারেল হাদি হাজি রাহিমি।

জেনারেল জাহেদির মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের কুদস ফোর্সের গোয়েন্দা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ গোলকার বলেছেন, ‘জাহেদির মৃত্যু কাসেম সোলেইমানির হত্যার পর আইআরজিসির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি। আইআরজিসি এখনো এক ব্যক্তি ও তাঁর নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। ’

আইআরজিসির সেনাদের মধ্যে জেনারেল রেজা জাহেদি হাসান মাহদাভি নামে পরিচিত। তিনি ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের দুই বছর পর অর্থাৎ, ১৯৮১ সালে আইআরজিসিতে যোগ দেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় তিনি প্রথম সরাসরি সেনা নেতৃত্বে আসেন। সে সময় তিনি ছোট একটি ব্রিগেডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ইরাক-ইরান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর রেজা জাহেদিকে পদোন্নতি দিয়ে একটি সেনা প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান করা হয়। দীর্ঘ সময় পরে ২০০৫ সালে তিনি জেনারেল পদে পদোন্নতি পান এবং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাঁকে আইআরজিসির পদাতিক বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেন। ধারণা করা হয়, সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে সেনাদের কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেই কৌশল আবিষ্কার করে তাদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

পরে জেনারেল রেজা জাহেদি আইআরজিসির কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাঁর মাধ্যমে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। ইরানের তরফ থেকে হিজবুল্লাহকে ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেসব অস্ত্র সরবরাহ করা হতো, জেনারেল জাহেদি সেই বিষয়টির পুরো তত্ত্বাবধান করতেন।

ইরান কী বলছে?
পৃথক এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইরানের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রয়েছে। আর এই প্রতিক্রিয়ার ধরন ও হামলার শাস্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তেহরান।

জাতিসংঘে ইরানের মিশন বলেছে, এই হামলার ঘটনাটি জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার চত্বর রক্ষার মূলনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। অন্যদিকে, হামলার নিন্দা জানাতে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এই হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি বলে সতর্ক করে দিয়ে ইরানি মিশন বলেছে, হামলার চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে তেহরানের।

সিরিয়ায় কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলার ঘটনার পরপরই তেহরানের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েল যা বলছে
হামলার বিষয়ে জানতে চােইলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য করি না। তবে মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত চারজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে। তারা স্বীকার করেছে, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত।

news24bd.tv/aa