ইটভাটায় কাজ করে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ

বাবা-মায়ের সঙ্গে ফোরকান

ইটভাটায় কাজ করে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর

ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন হতদরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী মো. ফোরকান আলী (১৮)। তবে অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। ফোরকান এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় ১৪৯ তম স্থান অর্জন করেছেন।

এ ফলাফলে ফোরকান ও তার পরিবারসহ এলাকার লোকজন খুশি হলেও এখন ভর্তি, বই ক্রয় ও আনুষঙ্গিক খরচ যোগানোর সাধ্য নেই তাদের।

ফলে ভর্তি নিয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন ফোরকান ও তার পরিবার।

জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর খরিয়া এলাকার দরিদ্র মো. আলতাব আলী ও মোছা. আজেদা বেগম দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ফোরকান সবার ছোট। বসতভিটা ছাড়া কোনো জায়গা-জমি না থাকায় দিনমজুরি এবং কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকানির্বাহ করেন আলতাব আলী। আর বড়ভাই মো. ফরিদ আলী একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন।

ছোট থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থী ফোরকানের অর্থাভাবে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ হয়নি। তবে অদম্য প্রচেষ্টায় সব পরীক্ষাতেই ভালো ফলাফল করেছেন তিনি।

নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতে ক্ষেতে দিনমজুরের কাজও করেছেন ফোরকান। তবে হাল ছাড়েননি। স্থানীয় খরিয়াকাজীরচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ভালো ফলাফল করার পর শেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন তিনি। বাড়ি থেকে দূরে হওয়ায় কলেজে যাওয়াটা কষ্টকর হয়ে পড়ে তার জন্য। একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে টাকা জমিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য সাইকেল কেনেন ফোরকান। বাবার পক্ষে পড়াশোনার পুরো খরচ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় নিজেই চালান নিজের খরচ। ২০২৩ সালে এইচএসসিতে বাণিজ্য বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হন এবং শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন ফোরকান।

তার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। বৃত্তির টাকা এবং বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে তিনি ঢাকায় গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করেন। তিনি ২৩ ফেব্রুয়ারি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২৮ মার্চ প্রকাশিত ফলাফলে তিনি কলা অনুষদে মেধা তালিকায় ১৪৯তম হন।

কেবল তাই নয়, তিনি ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেই ইচ্ছা তার। কিন্তু ভর্তি, বই ক্রয় ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ তার ন্যূনতম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রয়োজন হলেও দরিদ্র বাবার পক্ষে তার যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

মো. ফোরকান আলী জানান, বাবার অভাবের সংসারে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে মাঝে-মধ্যে আমিও ক্ষেত-খামারে দিনমজুরের কাজ করেছি। মা-বাবার সহযোগিতা আর দোয়ায় কষ্টের সংসারেও এ পর্যন্ত এগিয়ে আসতে পেরেছি। আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার। এখন সেই সুযোগ পেলেও আর্থিক সংকটে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি। তবে পড়ার সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পররাষ্ট্র ক্যাডারে চাকরি করতে চাই।

ছেলের স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন ফোরকানের বাবা আলতাব আলী। তিনি বলেন, আমি খুব অসহায় মানুষ। কিছু জমি বর্গা চাষ করে কোনোমতে চলি। এই বসতভিটাটুকু ছাড়া আমার আর কিছুই নাই। আমার ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগানো খুবই কষ্টকর ছিল। এজন্য সে ইটভাটায় কাজ করেও নিজের খরচ চালিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে। এখন আমি যে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করব সেই অবস্থাটুকু আমার নাই। তাই আমি সবার সহযোগিতা চাই যাতে আমার ছেলেটার স্বপ্ন পূরণ হয়। একই কথা জানান ফোরকানের মা আজেদা বেগম ও ভাই ফরিদ আলী।

খরিয়াকাজীরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাসান বিন জামান বলেন, ফোরকানদের অভাবের সংসারে খাওয়া-পড়ার খরচ যোগাড় করাই কঠিন। তারপরও নিজের আগ্রহের কারণে ফোরকান ধাপে ধাপে এগিয়ে আজ দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এটা আমাদের স্কুলের জন্যও গর্বের। কিন্তু এখন সেখানে ভর্তি করার মতো আর্থিক অবস্থাও ফোরকানের পরিবারের নেই। তারা দিন আনে, দিন খায়। তাই ফোরকানের স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজন আর্থিক সহযোগিতা। নিজের আগ্রহের কারণে ধাপে ধাপে এগিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় খুশি এলাকাবাসীও। তারা চান সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতায় স্বপ্ন পূরণ হোক ফোরকানের।

এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল্লাহ আল খায়রুম জানান, শিক্ষার্থী ফোরকান ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কাগজপত্র নিয়ে আমার অফিসে এলে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে তাকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক