পুতিনের গোপন মিশন 

পুতিন নতুন সাজে, রয়টার্স ফাইল ছবি।

পুতিনের গোপন মিশন 

অনলাইন ডেস্ক

রাশিয়াতে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচন। রাশিয়ানদের পছন্দের শক্তিশালী আর দুর্দমনীয় চরিত্রের প্রতিকৃতি কাজে লাগিয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন পুতিন। পুতিনের এখন এমন এক অবস্থা যে আমেরিকাই শুধু নয় , গোটা ইউরোপ যুদ্ধ বাঁধার ভয়ে তটস্থ।  
পুতিনকে কখনো মনে হয় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সোভিযেত ইউনিয়নের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত যিনি রাশিয়াকে আবার এক করতে চান।

 
আবার কখনো মনে হয়, তিনি কৌশলী একনায়কই যিনি দরকারে সম্প্রতি তালেবানিদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক  গড়ে তোলেন। তুরস্কে এরদোগানের বন্ধু হয়ে যান।  
মনে হয় যেন তার একমাত্র বিরোধীতা আমেরিকা।
আদৌ পুতিন কি চান ? তার গোপন মিশনইবা কি ?
সবশেষ রাশিয়াতে সবচেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয়, তাঁর ৮৭ শতাংশ ভোটের বিপরীতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছে ৪ শতাংশের মতো ভোট।
 
দুই যুগের শাসন শেষে পুতিন এখন নিজেকে তুলনা করছেন অষ্টাদশ শতাব্দীতে পিটার দ্য গ্রেটের সঙ্গে।  
রাশিয়ায় মানুষের মুখে মুখে এখন একটা কথা শোনা যায়, ‘ পুতিনিজম’। যেন  পুতিনীয় শাসন-দর্শন রপ্তানি হচ্ছে নতুন এশিয়া আর আফ্রিকায়। অনেক দেশেই এরকম দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন অনেক দেশের সরকারপ্রধানরা।  

পুতিনিজমে একদিকে যেমন রাশিয়ার সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে শাসনতন্ত্রকে গড়ে তোলা হয়েছে বর্তমান যুগের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে। রাশিয়ার অর্থনীতি নির্ভরশীল রয়ে গেছে প্রথাগত তেল আর গ্যাস থেকে অর্জিত অর্থের ওপর, বড় কোম্পানিগুলোকে ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রণ করলেও মাঝারি আর ক্ষুদ্র শিল্পগুলো কার্যক্রম চালায় অনেকটা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পরিসর থেকে দূরে সরে।
পুতিন আর তাঁর সহযোগীরা মনে করেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাশিয়া তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে না, পাচ্ছে না পরাশক্তিসুলভ স্বীকৃতি। পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতিষ্ঠানগুলো এসে ভিড়েছে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে, ন্যাটোকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাশিয়ার সীমান্তে, ভৌগোলিকভাবে ঘিরে ফেলা হচ্ছে রাশিয়াকে। ফলে পুতিনের শাসনের অন্যতম ভিত্তি পাশ্চাত্যবিরোধিতা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা।
মস্কো ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানী, গ্যাবান আরচেভ মনে করেন, পুতিনবাদে যেমন লেনিনবাদ আর স্তালিনবাদের প্রভাব রয়েছে, তেমনি প্রভাব আছে থ্যাচারবাদ আর রিগ্যানবাদেরও।

পুতিনের আমলে সামরিক বাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে, তাঁর অধীনে তৈরি হয়েছে বিশেষায়িত বাহিনী ন্যাশনাল গার্ড অব রাশিয়ান ফেডারেশন।  
পুতিন বিশ্বাস করেন, রাশিয়ানদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। যদি ক্রেমলিন তাদের নিয়ন্ত্রণ না করে, তবে অন্যান্য শক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। আরব বসন্তের ঘটনাগুলোর পরে পুতিন আর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত কার্যক্রমকে বিশ্বাস করেন না, বিশ্বাস করেন না নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকা মানুষকে।

পুতিন বিশ্বাস করেন একচেটিয়া প্রশ্নহীন আনুগত্য।  সেন্ট পিটার্সবার্গের যেই অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন সেখানে  কিশোর সংস্থায় বা কেজিবিতে আনুগত্যও দেখেছেন তিনি।  
১৯৯৬ সালে মস্কোর মেয়র নির্বাচিত হয়ে যখন ভ্লাদিমির ইকোভলেভ মেয়র অফিসে কাজের প্রস্তাব দেন, পুতিন তখন বলেছিলেন, ‘বিশ্বাসঘাতক হিসেবে মৃত্যুর চেয়ে আনুগত্যের মৃত্যু সম্মানের। ’
পুতিন তাঁর আত্মজীবনী ‘ফার্স্ট পার্সন’–এ লিখেছেন, ‘আমার অনেক বন্ধু আছে, কিন্তু অল্প মানুষই আমার ঘনিষ্ঠ। তারা কখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। আমিও কখনো তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি এবং এটিই দিন শেষে গুরুত্বপূর্ণ। ’

পুতিন শাসনের শুরুতেই দেশের বিত্তবানদের মধ্যে ২১ জন বিলিয়নিয়ারকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরা বরিসের সময়ে বিপুল সম্পত্তি অর্জন করেন, সেই সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ না করার শর্তে পুতিন তাদের সম্মত করান তাঁর শাসনের পথের মধ্যে না দাঁড়াতে। পরবর্তী কয়েক বছরে যারা পুতিনের কথা শুনেছে, তারা রাষ্ট্রীয় কন্ট্রাক্ট পেয়েছে, পেয়েছে সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ। যারা পুতিনের নির্দেশ মান্য করেননি, তাদের হয় সাইবেরিয়া যেতে হয়েছে, অন্যথায় হয়েছে রহস্যজনক মৃত্যু।

পুতিন আগের অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিজের পছন্দের একটি নব্য-অভিজাত শ্রেণিও তৈরি করেছেন। এঁদের একজন হলেন ইগর সেচিন। সেচিন দীর্ঘদিন পুতিনের অধীনে কাজ করেছেন, আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ পেয়েছেন ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারের দায়িত্ব। তাঁর নেতৃত্বে অসংগতির সমালোচনা থাকলেও বর্তমানে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি রোসনেফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।  
পুতিনের এসব কিছুই করার একটাই উদ্দেশ্য বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে আর সেটি হলো, রাশিয়াকে সবদিক থেকে আবার একটা মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্যবাদী ক্ষমতার বিনাশ। আর সেজন্য তিনি বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তেজিত করতে সেই দেশের পছন্দের দেশগুলোর সঙ্গে বিরোধে জড়ানো।  

news24bd.tv/ডিডি