মাদারীপুরে প্রতিবন্ধীদের ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ

মাদারীপুরে প্রতিবন্ধীদের ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর:

মাদারীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. উজ্জ্বল মুন্সী বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় অসহায় শতাধিক প্রতিবন্ধীর ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ৫ হাজার ৩৭০ জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে শতাধিক প্রতিবন্ধীর অভিভাবকের বিকাশ নম্বরে বছরে এক বার বা দুই বার ২ হাজার ৫৫০ টাকা করে ঢুকলেও বাকি সিংহভাগ টাকা ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে তিনি নিজেই উত্তোলন করে নিয়েছেন।  

অথচ, এর কিছুই জানে না বহু প্রতিবন্ধীর অভিভাবক।

সময়মতো ভাতা না পেয়ে ভুক্তভোগী অভিভাবকরা তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে দিনের পর দিন সময় কাটাচ্ছেন অফিসের বারান্দায়। সেখানেও তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। অথচ সঠিক কোন সমাধান পাচ্ছেন না।  

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ইমন শেখের মা মোসা. শেফালী কয়েক মাস ভাতা না পেয়ে ২ মাস আগে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের নিকট আবেদন করেন।

২মাস পর মঙ্গলবার (২এপ্রিল) বিষয়টি সাংবাদিকরা অবগত হয়।  

ওইদিন শেফালী বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিকাশ নম্বরে টাকা ঢুকে নাই।  

উপজেলা অফিসে গিয়ে জানতে পারি অন্য একটি বিকাশ নম্বরে টাকা চলে গেছে। ’ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করার পর বিষয়টি সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. উজ্জ্বল মুন্সী জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে শেফালীকে অফিসে ডেকে নিয়ে নগদ ৩ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দেন। বুধবার দুপুরে মোসা. শেফালীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সবকিছু সমাধান হয়ে গেছে। ’ অফিসারের চাপে পড়ে তিনি এখন বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে প্রতিবন্ধী ইমন শেখের বিকাশ নম্বর ০১৯৪৭৭৪১৮১৭। ইমন শেখ তার নিজস্ব বিকাশ নম্বরে টাকা পেয়েছে কয়েক কিস্তি। ইমন শেখ অভিযোগ দেওয়ার পরে দেখা গেছে ইমনের টাকা ০১৪০৩৫৯৬৯৮৯ নম্বরে। একই বিকাশ নম্বরের টাকা এখন ঢোকে পূর্ব খৈয়ারভাঙ্গা হালিমা বেগমের নামে। অথচ হালিমা বেগম ও ইমন কেউ জানে না এই নম্বর কার। হালিমা বেগমের দুইটি বিকাশ নম্বরের সাথে ওই নম্বরের কোন মিল নেই বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে সদর উপজেলার ঘটকচর গ্রামের আলোচনা বেগম বলেন, ‘সাত মাস হলো আমার বয়স্ক ভাতা পাইনা এবং আমার ছেলে সাহাবুদ্দিনের প্রতিবন্ধী ভাতারও পাই না। আমি অফিসে গেছি তারা কইছে, নতুন মোবাইল আর সিম কিনেন। আমি কষ্ট করে নতুন মোবাইল সিম কিনে অফিসে গেছি। তারা কইছে তোদের টাকা চলে গেছে। কিন্তু আমরা ৭মাস ধইরা কোন টাকা পাই না। ’ এখন কথা হলো এই অসহায় দুইজনের টাকা কোথায় গেলো?

এদের মতো আরমিন, ঝর্ণা আক্তার, মোসা. সুফিয়া, মহসিন শরিফসহ শতাধিক প্রতিবন্ধীর ভাতা কোন নম্বরে কার নামে ঢোকে জানে না তাদের কেউ। সদর উপজেলা অফিসে গিয়ে অফিসার মো. উজ্জল মুন্সিকে না পেয়ে ওই অফিসের একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে সমাজ সেবার সার্ভারে সার্চ করে দেখা গেছে, ২/১ কিস্তি প্রতিবন্ধীর বিকাশ নম্বরে ঢুকলেও পরবর্তী কিস্তিগুলো অন্য নম্বরে ঢুকেছে, যা ভাতাভোগীরা জানেন না।

এ ব্যপারে মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আশাদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। ’

জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আল মামুন বলেন, ‘সুবিধা ভোগী কারো কাছ থেকে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’ এদিকে অভিযুক্ত উজ্জল মুন্সির বক্তব্যের জন্য একাধিক বার অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে একাধিকবার তার মোবাইলে কল করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

news24bd.tv/কেআই