এখনো থমথমে থানচি, আতঙ্কে স্থানীয়রা

থানচি, বান্দরবান।

এখনো থমথমে থানচি, আতঙ্কে স্থানীয়রা

অনলাইন ডেস্ক

পরপর দুটি ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, অপহরণ ও গোলাগুলির ঘটনার পর বান্দরবানের থানচি উপজেলার সর্বত্র থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে থানচি বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন অনেক নারী ও শিশু। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বান্দরবানের রুমার বেতছড়া মুরং বাজারে পুলিশের সাথে এখনো কেএনএফের গোলাগুলি চলছে।

স্থানীয়রা জানান, সরকার-সেনাবাহিনীর চেষ্টায় বান্দরবানে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। তিন পাহাড়ি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শান্তিতে ছিলেন বান্দরবানবাসী। সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে জেলার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে থমকে আছে সব উন্নয়ন কাজ।

পরপর দুটি গোলাগুলির ঘটনায় থানচি বাজারের ব্যবসায়ীদের কেনাবেচা কমে গেছে।

বাজারের তরমুজ বিক্রেতা মোহাম্মদ সাকিব বলেন, গোলাগুলির ঘটনার আগে তিনি ৪০ থেকে ৫০টি তরমুজ বিক্রি করতেন। কিন্তু আজ মাত্র দুটি বিক্রি করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন বাজারে লোকজন নেই।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুসা জানালেন একই কথা। তিনি বলেন আগে দৈনিক ১০ হাজার টাকার শুঁটকি বিক্রি করতেন। এখন দুই হাজার টাকারও বিক্রি করতে পারছেন না।

থানচি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতের ব্যাংকে হামলার ঘটনায় পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেছে এলাকার মানুষ। খুব প্রয়োজন ছাড়া দোকানে আসছেন না কেউ, আবার ব্যবসায়ীরা খুলছেন না প্রতিষ্ঠান।

এসব ব্যবসায়ীদের মতই আতঙ্কে দিনরাত পার করছেন থানচি বাজারের প্রায় দেড়শ পরিবার। বৃহস্পতিবার গোলাগুলির সময় তারা সবাই পাশের জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

থানচি উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান অং প্র মোরং বলেন, ‘পুরো এলাকায় আতঙ্ক ভর করেছে। আগে কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদরে আসার সাহস করেনি। এবার পরপর দুইদিন হামলা চালিয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দাবি করছি। ’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুকি-চিনের অত্যাচারের কারণে রুমা ও থানচি এলাকার শত শত স্থানীয় বাসিন্দা আগে থেকেই ঘর ছাড়া। নতুন করে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে আবারও ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে অনেক পরিবার।

বান্দরবানের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জুনায়েদ জাহেদী বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিন থানায় তদারকের জন্য একজন করে এএসপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

থানচি এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও পুলিশের সতর্ক পাহারা দেখা গেছে। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।

বান্দরবানের দুই উপজেলায় গত মঙ্গলবার রাতে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। পরে গভীর রাতে আলীকদম উপজেলায় পুলিশ ও সেনাদের একটি যৌথ তল্লাশিচৌকিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তবে গতকাল কারা গুলি চালিয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। যদিও এর আগে মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ এবং পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে বলা হয়েছিল।

news24bd.tv/DHL