বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী রনক আহসানকে হত্যার হুমকির অভিযোগ

বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী রনক আহসানকে হত্যার হুমকির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী রনক আহসানকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিজের নিরাপত্তার চেয়ে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জিডিতে রনক আহসান উল্লেখ করেন, আমি বুয়েটের একজন অ্যালামনাই এবং বুয়েটের সাম্প্রতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে মৌলবাদী ও সাম্প্রতিক শক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করায় এরকম হুমকি দেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। এহেন প্রাণনাশের হুমকিতে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং আমার পরিবার চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, বুয়েটে শিবির, হিজবুত ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ক্রমাগত আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একজন ফোন করে বলল ‘৭ দিনের মধ্যে কুপিয়ে তোর কল্লা কেটে নেবো’। এ কেমন বুয়েটিয়ান? এ কেমন আন্দোলনকারী? মতের ভিন্নতার জন্য মাথা কেটে নিতে চায়!

রনক আহসান বুয়েটে প্রগতিশীল রাজনীতির কর্মী ছিলেন। ক্যাম্পাসে অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদের বিরোধী ছাত্রজোটের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।

সাম্প্রতিককালে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান প্রকাশ করছিলেন তিনি।

গত ৩ এপ্রিল একইভাবে হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন বুয়েটে অসাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদ বিরোধী এবং ছাত্র রাজনীতির পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা। সেদিন তারা বলেন, আমাদের জীবন নিয়ে থ্রেট দেওয়া হচ্ছে। আমরা আজ উপাচার্য স্যারের কাছে সবকিছুর প্রমাণ নিয়ে লিখিত আবেদন করেছি। আমরা ছাড়াও আরও যারা এটার ভুক্তভোগী তাদের নিরাপত্তার খাতিতে তাদের নামও আমরা লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি যেন এটি বন্ধ করা হয়।

২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে আরিফ রায়হান দীপের হত্যার আগে বিভিন্নভাবে তার নামে ও প্রগতিশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুৎসা রটানো হয়। আর এরপরই তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একইরকম ঘটনা ঘটেছিল বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও তৎকালীন ছাত্রলীগের তন্ময় আহমেদের সঙ্গেও। ২০১৩ সালে তিনিও শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তন্ময় আহমেদ জানান, হামলার আগে তার বিরুদ্ধেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন গুজব ও উসকানিমূলক লেখালেখি শুরু হয়েছিল।

সাম্প্রতিককালে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বিরোধী তৎপরতা শুরু হলে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে বুয়েটে গোপনে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করা ছাত্র শিবির, হিযবুতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা অবস্থান নেয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। তবে বিচারবিভাগের আদেশের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা সরব হলে মৌলবাদী গোষ্ঠীর নিশানায় উঠে আসে তারা।

এর মধ্যে আরিফ রায়হান দ্বীপকে হত্যা নিয়ে সব পক্ষের শিক্ষার্থীরা যখন সরব এবং এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সব শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলনে একতাবদ্ধ হয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তখনই মৌলবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে।

দ্বীপ হত্যাকাণ্ড বা তন্ময় আহমেদকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে নৃশংস হামলা হয়, তার আগে যেভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও উস্কানিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে। ঠিক একইভাবে বর্তমানে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে থাকাদের নিয়ে ঘৃণামূলক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বুয়েটের ‘আড়িপেতে শোনা’ ও শিবিরের ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রুপে। প্রকাশ করা হচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত পরিচয়। এসব পেজে এভাবে পরিচয় প্রকাশের কারণে জীবননাশের শঙ্কায় আছেন ওই সব শিক্ষার্থী ও সাবেক বুয়েটিয়ানরা।

বুয়েটের ‘আড়িপেতে শোনা’ গ্রুপে দেখা যায়, আন্দোলনে সাড়া না দিয়ে এক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ায় তার নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার হত্যার হুমকি পেলেন বুয়েটে প্রগতিশীল রাজনীতির কর্মী রনক আহসান।

এই রকম আরও টপিক