লাইলাতুল কদরে এই ৬টি দোয়া অবশ্যই পড়বেন

লাইলাতুল কদরে এই ৬টি দোয়া অবশ্যই পড়বেন

অনলাইন ডেস্ক

শবে কদর শব্দটি ফারসি। আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’। লাইলাতুল বা শব-এর অর্থ রাত। কদর-এর অনেক অর্থ, যেমন- পরিমাপ, পরিমাণ, নির্ধারণ, ভাগ্য নিরূপণ, সম্মান, গৌরব, মর্যাদা ও মহিমা।

সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’ বা ‘শবে কদর’ অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাপূর্ণ, মহিমান্বিত ও ভাগ্যনির্ধারণী রজনী।
এ রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলার কারণ হচ্ছে—এ রাতের পূর্বে আমল না করার কারণে যাদের কোনো সম্মান মর্যাদা, মূল্যায়ন ছিল না তারাও তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে এ রাতে সম্মানিত ও মহিমান্বিত হয়ে যান। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন) রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (সহিহ বুখারি: ৩৫) 

যারা এমন মহান রাত অবহেলায় কাটিয়ে দেয় তারা হতভাগা ছাড়া অন্যকিছু নয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এ মাসে (রমজানে) এমন একটি রাত আছে, যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম।

যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সত্যিই বঞ্চিত হলো। ’ (সুনানে নাসায়ি: ২১০৮)

এই রাতের ফজিলত লাভের জন্য প্রথমে অতীতের সব গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিক তওবা করা উচিত। কেননা শারীরিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি মনের পবিত্রতা অর্জন যেকোনো ইবাদত কবুলের অন্যতম মাধ্যম। আর মনের পবিত্রতা অর্জনের বড় উপায় হলো— আন্তরিকভাবে তাওবা-ইস্তেগফার করা। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন— ‘উত্তম হলো- যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না মানুষের ভেতরটা সুন্দর হয়। মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে। ’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-১৮৯)

তাই মহিমান্বিত এই রাতের ফজিলত লাভের জন্য প্রথমে অতীতের সব গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিক তওবা করা উচিত হবে। এছাড়াও এই রাতে আরও কিছু দোয়া করা যায়। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।

১) হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকার দোয়া
শবে কদর, শবে বরাতসহ যেকোনো মর্যাদাপূর্ণ রাতে এই দোয়াটি পাঠ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলার ক্ষমা পেতে হলে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। তাই যেকোনো মর্যাদাপূর্ণ রাতে নিচের দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত  হিংসা-বিদ্বেষ দূর করার দোয়াটি হলো- رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِىْ قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ উচ্চারণ: রব্বানাগফির লানা- ওয়া লিইখ্ওয়া-নিনাল্লাযীনা সাবাকূনা- বিল ঈমা-নি ওয়ালা- তাজ‘আল ফী কুলূবিনা- গিল্লাল লিল্লাযীনা আ-মানূ রব্বানা- ইন্নাকা রাঊফুর রহীম। অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে ও আমাদের পূর্ববর্তী ভাইয়েরা যারা ঈমান এনেছে তাদের ক্ষমা কর, ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি দয়ালু পরম করুণাময়’। (সুরা হাশর: ১০)

২) শিরক থেকে মুক্ত থাকার দোয়া
আল্লাহর কাছে যেকোনো দোয়া ও ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত শিরক থেকে বেঁচে থাকা। আর শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করতে হয়। রাসুল (স.) সেই উপায় শিখিয়ে দিয়েছেন। মা’কাল ইবনু ইয়াসার (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) আবু বকর (রা.)-কে বলেছেন, ‘হে আবু বকর! নিশ্চয় তোমাদের মাঝে শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়ে সূক্ষ্ম। সেই সত্তার শপথ— যার হাতে আমার প্রাণ, শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়ে সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যা বললে শিরকের অল্প ও বেশি সবই দূর হয়ে যাবে? আপনি বলুন— ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أشْرِكَ بِكَ وَاَنَا أَعْلَمُ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন-আশরিকা বিকা, ওয়া আনা আ’লামু; ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আ’লামু। ’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে ক্ষমা চাই। ’ (সহিহ আল আদাবুল মুফরাদ: ৫৫১)

৩) শবে কদরের বিশেষ দোয়া
কদরের রাতে যে দোয়ার সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে, সেটি হলো—ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। ’ আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব? তখন নবী (স.) এই দোয়াটি পড়তে বলেন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)।  
সুতরাং সারাদিন-রাত বেশি বেশি এই দোয়া করবেন। এই দোয়াটি হাঁটা-চলা-শোয়া অবস্থায়ও করা যায়। শেষ দশকে রাতদিন এই দোয়া বেশি বেশি পড়া উচিত।

৪) মা-বাবাসহ সকল মুসলমানের জন্য দোয়া
হিংসুক কখনও অন্যের জন্য দোয়া করতে পারে না। কিন্তু প্রকৃত মুমিনরা পৃথিবীর সব মুসলমানকে মনে-প্রাণে ভাই মনে করেন এবং সবার জন্য দোয়া করেন। পবিত্র কোরআনে জীবিত-মৃত সব মুসলমানের জন্য দোয়ার শিক্ষা রয়েছে। তেমনই একটি দোয়া হলো— ‘রব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালি-দাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব। ’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সব ঈমানদারকে আপনি সেই দিন ক্ষমা করে দিন, যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে। ’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

আরও পড়ুন: কদরের রাতে যে আমলগুলো ভুলেও ছাড়বেন না

জীবিত-মৃত পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য দোয়া করার আরও উপকার আছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, প্রত্যেক মুসলমানের বিপরীতে একটি করে সওয়াব মহান আল্লাহ তার আমলনামায় লিখে দেন। ’ (তাবরানি: ৩/২৩৪)

৫) আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের দোয়া
এই রাতে আল্লার অনুগ্রহ চেয়ে এই দোয়া পড়া যায়— رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلٰى وٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صٰلِحًا تَرْضٰىهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ الصّٰلِحِينَ উচ্চারণ: রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহাং তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন। অর্থ: ‘হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো’। (সুরা নামল: ১৯)

৬) ঋণ, দুশ্চিন্তা, ভয় ও দমন-পীড়ন থেকে মুক্তির দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। ’ (বুখারি: ২৮৯৩) 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শবে কদরের এই রাতে উল্লেখিত দোয়াগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

news24bd.tv/তৌহিদ