যুদ্ধ, মৃত্যু ও ধ্বংসের ছয় মাস

ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৬ মাসে নিহত ৩৩৬৩৪

যুদ্ধ, মৃত্যু ও ধ্বংসের ছয় মাস

অনলাইন ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ছয় মাস পূর্ণ হয়ে আজ সাত মাসে পড়লো। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের ঝুলিতে কোনো অর্জন যোগ হয়নি, কেবল ফিলিস্তিনিরা নিহত হয়েছেন, ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। আর ইসরায়েল তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সমর্থন হারাতে বসেছে।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের ৬০৪ জন সেনার প্রাণ গেছে।

গতকাল ৭ এপ্রিল ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার দিনেই দক্ষিণ গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।

দীর্ঘ ছয় মাসে উপত্যকাটিতে ক্রমাগত বেড়েছে মৃত্যুর মিছিল। ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ছয় মাসে গাজায় ৩৩ হাজার ১৭৫ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৩ হাজার ৮০০ জন শিশু।

সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। আর পশ্চিম তীরে ৪৫৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে ১১৭ জন শিশু রয়েছে।

ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, প্রাণহানি বেড়ে প্রায় ৩২৬২৩!

দুর্ভিক্ষের মুখে প্রায় ছয় লাখ ফিলিস্তিনি। ১৭ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্ত্যুচ্যুত। আবাসিক এলাকাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, রাস্তাঘাট ধ্বংসস্তূপে জমে আটকে গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস হয়েছে ও কৃষিজমিগুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে আছে।

স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজার ৫৬ শতাংশের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যেই দক্ষিণ গাজা থেকে একটি ব্রিগেড ছাড়া সমস্ত স্থল সেনা প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। যদিও সামরিক বাহিনী তাত্ক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি। সেনা প্রত্যাহারের ফলে দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে দীর্ঘ হুমকির প্রতিকার হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

কতজন হামাস নেতা নিহত
৭ অক্টোবরের আগে গাজায় হামাসের প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা ছিল বলে জানিয়েছিল আইডিএফ। এক সামপ্রতিক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা প্রায় ১৩ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে, যদিও তারা এই সংখ্যাটি কীভাবে গণনা করেছে তা জানায়নি। ইসরায়েলও হামাস নেতাদের নাম প্রকাশ করে বলেছে যে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

অক্টোবর থেকে এইভাবে মোট ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই যুদ্ধের প্রথম তিন মাসে নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই বছরের মার্চ পর্যন্ত গাজায় হামাসের কোনো সিনিয়র নেতা নিহত হওয়ার খবর জানায়নি।

চাপে ইসরায়েল
গাজায় একদিকে ক্রমাগত প্রাণহানি যেমন বাড়ছে, তেমনি অন্যদিকে তা ইঙ্গিত দিচ্ছে- হামাসের সঙ্গে কীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে তা নিয়ে দৃশ্যমান পরিকল্পনা নেই ইসরায়েলের। সিএনএনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হামাস নির্মূলে গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যেই উপত্যকাটিতে অনবরত হামলা ইসরায়েলকে একঘরে করে দিয়েছে। ফলে নেতানিয়াহু সরকার সবদিক থেকেই চাপের মুখে আছে।

অন্যদিকে, বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসরায়েল যা করেছে, তা গণহত্যা বলে গণ্য হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে। এই অবস্থায় ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোও এখন নেতানিয়াহু সরকারের সমালোচনা করছে। আবার ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ না করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ওপরও চাপ বাড়ছে।

 

Palestinians inspect the rubble of a house after it was struck by an Israeli airstrike in Khan Younis, southern Gaza Strip

গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস তাদের হত্যার কারণ জানতে চেয়েছেন। গত সপ্তাহেই তিনটি গাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। যেখানে বিদেশি সাত কর্মী নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ, একজন পোলিস, একজন অস্ট্রেলীয়, একজন মার্কিনি ও একজন ফিলিস্তিনি।

এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠে। এমনকি খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেছেন, মানবিক সংকট দূর করা ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা না নিলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ঘুরে যেতে পারে। ইসরায়েলকে সেই পরিণতি ভোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইসরায়েলকে সমর্থন শর্তহীন নয়। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আল-খামেনির শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি গতকাল  হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের কোনো দূতাবাস আর নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নেতা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার বাস্তবায়ন করতে প্রতিরোধ ফ্রন্ট সম্পূর্ণ প্রস্তুত। দখলদার ইসরায়েলকে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেট ভবনে হামলার জন্য অবশ্যই অনুতপ্ত করা হবে।

কেবল দেশের বাইরে নয়, অভ্যন্তরেও ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে নেতানিয়াহু। জিম্মিদের মুক্তি ও তার পদত্যাগের দাবিতে প্রতিদিনই দেশটিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের ভেতরে ঢুকে জানালা হলুদ রঙ লেপটে দেয়।

Palestinians mourn their relatives killed in the Israeli bombardment of the Gaza Strip, in a morgue in Khan Younis, Sunday, Oct. 29

শনিবার নেতানিয়াহুর বিরোধীরা বলছেন, গাজায় থাকা জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তি দাবি করে ১ লাখ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জিম্মি এলাদ কাজিরের মরদেহ উদ্ধার করার পর তেল আবিবসহ দেশটির অন্যান্য শহরে সমাবেশ হয়।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই নির্বাচন’ এবং ‘এলাদ, আমরা দুঃখিত’ বলে স্লোগান দেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ছয় মাস পরেও এই যুদ্ধে ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের মধ্যেই একটি গাড়ি ঢুকে যায়। যদিও এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
news24bd.tv/aa