বুয়েটের ২০ ও ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি ও বাস্তবতা 

বুয়েটের ২০ ও ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি ও বাস্তবতা 

অনলাইন ডেস্ক

বুয়েটের ২০ ও ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে বেশকিছু দাবি করেছে।  বলা হচ্ছে, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি না, থাকলে কীভাবে থাকবে- তা নির্ধারণ করবে বুয়েটের কারেন্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই। তাদের সেসব দাবি কতটুকু যৌক্তিক ও বাস্তবতানির্ভর তা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে ক্যাম্পাসে।   

২০ ব্যাচের দাবি ও বাস্তবতা

বুয়েট ২০ ব্যাচের প্রথম দাবি হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি পুনর্বহাল করা না হচ্ছে, ততক্ষণ তারা কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে (টার্ম ফাইনাল এবং তার পরবর্তী) ফেরত যাবে না।

এখন কথা  হলো বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের।  আদালতে রাজনীতি নিষিদ্ধের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে পুনরায় আবেদন করে তার শুনানি হয়ে আদালত কী আদেশ দেন সে পর্যন্ত খুব লম্বা একটি সময়। এই পুরো সময় কী বুয়েটে ক্লাশ ও পরীক্ষা সব বন্ধ থাকবে? বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যারিয়ারের এত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে কার লাভ? কেন বুয়েটের ২০ ও ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে তাদের কারেন্ট স্টুডেন্ট অব বুয়েট গ্রুপে এ ধরনের পোস্ট দিল?

একইদিনে ২ জন শিক্ষকের কলাম ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ এবং ২০/২১ ব্যাচের বিবৃতি কী নির্দেশ করে? কেউ কি পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছে? বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে নাকি সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে? তবে কী এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? বুয়েটের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কে কার স্বার্থে কেন আদালতের বিষয়কে সামনে এনে বুয়েটের পরীক্ষা বর্জনের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাদের কাজ করা উচিত।

২০ ব্যাচের দ্বিতীয় দাবি হলো, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে এই বিজ্ঞপ্তিটি পুনর্বহাল হওয়ার পর প্রশাসন সেই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে; এমন পরিস্থিতিতেই একমাত্র একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার কথা বিবেচনা করবে তারা।  বুয়েট প্রশাসনের দায়িত্ব ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তারা প্রতিটি হলে সিসিটিভি কাজ করছে কি না, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ডরা ঠিকঠাক ডিউটি করছে কি না- সেটা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজন হলে বুয়েটে পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করতে পারে বুয়েট প্রশাসন।

তাদের তৃতীয় দাবি, একই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি পুনর্বহালের পর যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্সে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধপূর্বক উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বুয়েটের অর্ডিনেন্স সংশোধন আরেকটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং সে ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিও ইনভল্ভ হবে। সব দিক বিবেচনা করে, কোর্টের আদেশ বিবেচনা করে ছাত্ররাজনীতি বাদ দিয়ে অর্ডিনেন্স সংশোধন না হয়ে বরং ছাত্ররাজনীতির বিষয়টি অর্ডিনেন্সে ইনক্লুড হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, দেশের প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আইন করবে না সরকার।

২১ ব্যাচের দাবি ও যৌক্তিকতা 

২১ ব্যাচের প্রথম দাবি হলো, অর্ডিন্যান্স সংশোধনের মাধ্যমে বুয়েটের অভ্যন্তরে সকল প্রকার সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি এবং বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও বুয়েটের পরিচয় ব্যবহার করে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

কিন্তু প্রথমত বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতির বিষয়ে কোর্টের অর্ডার রয়েছে।  এখন রাজনীতি পুনরায় নিষিদ্ধ করতে হলে কোর্টে আইনি লড়াই করতে হবে।  সেটার জন্য পরীক্ষা দিতে না চাওয়ার অর্থ কী? বুয়েটের বাইরে বুয়েটের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ রাজনৈতিক পরিচয় দিতে পারবে না- এটা যেকোনো নাগরিকের অধিকারের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ। কে বুয়েটের বাইরে গিয়ে কোন রাজনীতি করবে, কোন পরিচয় দেবে সেটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। এর ওপর বুয়েট প্রশাসন কখনোই কোনো রকম এম্বার্গো দিতে পারে না।

তাদের দ্বিতীয় দাবি হলো, হাইকোর্ট প্রদত্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিতাদেশের রিটের বিরুদ্ধে বুয়েট কর্তৃপক্ষ হিসেবে ভিসি স্যার ও রেজিস্ট্রার মহোদয়কে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।  এই সমগ্র আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন বুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সকল পদক্ষেপের আপডেট ও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন এবং শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত আইনজীবী নিয়োগ সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শের পথ উন্মুক্ত রাখবেন। বুয়েট প্রশাসন অবশ্যই কোর্টের আদেশের ভিত্তিতে তাদের জবাব ও পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নেবেন। কোর্টে বিতর্ক পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীদের মনোনীত আইনজীবীকে বুয়েট প্রশাসন তাদের প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

কিন্তু এগুলোর সাথে পরীক্ষা বর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তারা দাবি করেছে, যেকোনো জঙ্গি সংগঠনের/নিষিদ্ধ সংগঠনের নামে মেইল/চিঠি বা অন্য কোনোভাবে ছাত্র ও শিক্ষকদের ফাঁসানোর চেষ্টা ঠেকাতে সচেষ্ট হতে হবে- প্রয়োজনে সাপোর্ট সেল খুলতে হবে। কিন্তু বুয়েটের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কীভাবে নিশ্চিত হলো যে হিজবুতের নামে যেসব মেইল এসেছে সেইগুলো কোনো স্টুডেন্ট বা শিক্ষককে ফাঁসানোর জন্য কেউ পাঠিয়েছে? তার মানে তারা কি জেনে-বুঝে কাউকে সেভ করার কাজে লিপ্ত? যে ছাত্র বা ছাত্রীর মুখ থেকে এই পয়েন্ট সবার আগে এসেছে, তাদের কাছেই এটার জবাব চাওয়া উচিত। কেন তারা এভাবে দাবি আকারে এই বিষয়টি তদন্তের দাবি না এনে তারা উল্টো ইনডেমনিটি চাওয়ার মতো একটি অবস্থা তৈরি করেছে? যেসব মেইল অ্যাড্রেস থেকে মেইল এসেছে, সেসব মেইলের উৎস খুঁজে বের করতে পারবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাদের কাজ চলার সময়ই কেন এই দাবি চলে আসল? তবে কি শর্ষের মধ্যেই ভূত? আন্দোলনে কারা বাতাস দিচ্ছে তা বের করতে হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

বুয়েটে গত সাড়ে ৪ বছরে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রশাসন থেকে যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, হঠাৎ করেই ২৮ মার্চ রাতের ঘটনায় কেন এত বড় দূরত্ব তৈরি হলো? কে পেছন থেকে সব কলকাঠি নাড়ছে? বুয়েটে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি না চাইলে বুয়েটে কোনো ছাত্র সংগঠনই তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না, এই সহজ বিষয়টিই কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করছেন।

আদালতের আদেশের বাইরে গিয়ে বুয়েট অবমাননার দায় নিতে পারে কি না, তাও খতিয়ে দেখা উচিত সাধারণ ছাত্রদের। কোনোভাবেই শিক্ষার্থীরা যেন সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনে জড়িয়ে না পড়ে, এতে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

বুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বক্তব্য

গত ২৮ মার্চ ২০২৪ থেকে উদ্ভুত ঘটনাবলিতে (রাত্রি দ্বিপ্রহরে একটি ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বুয়েট ক্যাম্পাসে অনাহুত আগমন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ দাবি, সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বুয়েট ছাত্রের বহিষ্কার দাবি, উপাচার্য মহোদয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে যথাযথ আচরণ না করা, টার্ম-ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন, ১ এপ্রিল হাইকোর্ট কর্তৃক বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধে জারিকৃত আদেশ স্থগিতকরণ, শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলন এবং একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (প্রবিশিস) উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সেইসঙ্গে কিছু পর্যবেক্ষণ সন্নিবেশ করছে।

প্রথমত, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রেজিস্ট্রার মহোদয়ের। সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানানো যাচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের ই-মেইল প্রেরণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, সাংগাঠনিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে দেওয়া জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করার যে রায় গত ১ এপ্রিল হাইকোর্টে নিয়েছে তার বিপরীতে আপিল করার বিষয়টিতে প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হবেন এবং এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

তৃতীয়ত, ২০১৯ পরবর্তী বিগত বছরগুলোতে বুয়েটে শিক্ষা-কার্যক্রম অবাধে চলেছে এবং সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ বজায় ছিল। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপদ রাখা, বিদ্যাচর্চা অক্ষুণ্ন রাখা ইত্যাদি আমাদের সকলের দায়িত্ব। শিক্ষক সমিতি এমন পরিবেশই প্রত্যাশা করে। এমতাবস্থায় বর্তমান অচলাবস্থা নিরসন এবং স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছে শিক্ষক সমিতি।

একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং নিষ্কলুষ ক্যাম্পাস আমাদের সকলের কাম্য। সকল অংশীজনের সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে অচিরেই সে অবস্থা ফিরে আসবে বলে শিক্ষক সমিতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের উস্কানি দিয়ে বুয়েটিয়ানদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘমেয়াদী করার নেপথ্যে কারা?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণের কপি পেতে অপেক্ষা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হাতে পেলেই পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই বুয়েটে আবারও পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন কিছু শিক্ষার্থী। আদালতের সিদ্ধান্তকে নিজেদের পক্ষে নিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে তারা। বিষয়টিকে নিশ্চিতভাবেই আদালত অবমাননা ও আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন হিসেবে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনের জন্য উৎসাহিত করছে কারা? তাদের উদ্দেশ্য কী?

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে বাধা না থাকার পর্যবেক্ষণ আদালত থেকে প্রদান করার পরও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কমিটি প্রদান করেনি কোনো ছাত্র সংগঠন। এ বিষয়ে একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা আইনি প্রক্রিয়ার পূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষমাণ। কিন্তু আইনি প্রকিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ বুয়েটের কিছু শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে নিজেদের ব্যাচের প্রতিনিধি হয়ে তারা জানিয়েছেন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা।

বুয়েটের ২০তম ব্যাচের পক্ষ থেকে বলা হয়, যতদিন পর্যন্ত প্রশাসনের সহায়তায় সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়া প্রয়োগে বুয়েট ক্যাম্পাসে সকল প্রকার লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি পুনর্বহাল হচ্ছে না, বুয়েট ২০ ব্যাচ কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছে না। এটি ২-৩ মাস থেকে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। এই দীর্ঘ সময় ধরেই কি তাহলে বুয়েটে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে?

এদিকে, ২১তম ব্যাচ তাদের দাবিতে জানান, যেকোনো জঙ্গি সংগঠনের/ নিষিদ্ধ সংগঠনের নামে মেইল/ চিঠি বা অন্য কোনোভাবে ছাত্র ও শিক্ষকদের ফাঁসানোর চেষ্টা ঠেকাতে সচেষ্ট হতে হবে - প্রয়োজনে সাপোর্ট সেল খুলতে হবে। অর্থাৎস্পষ্টভাবে বুয়েটে হিজবুত তাহরীর ও শিবিরের কার্যক্রমকে সরাসরি অস্বীকার করছেন তারা। এমনকি একজন শিবির নেতা নিজেই বুয়েটে শিবিরের কার্যক্রম চলছে জানাবার পরও বিষয়টি আমলে নিতে চাচ্ছেন না এই কতিপয় শিক্ষার্থী। প্রশ্ন উঠেছে তবে কি মৌলবাদী এই গোষ্ঠী যেন অবাধে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারে, তার স্বপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে বুয়েটের ২১তম ব্যাচ?

'আদালতের সিদ্ধান্ত ও আইন প্রক্রিয়া না মেনে পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনের ঘোষণা কেন' এ বিষয়ে জানতে বুয়েটের ২০তম ব্যাচ থেকে এ কার্যক্রমের পক্ষে থাকা একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেই রাজি হয়নি তারা। ফোন করা হয় ২০তম ব্যাচের মিশেল ইসলাম শেলি, মাহমুদ আকন, তানভীরুল ইসলাম, ইলিয়াস কায়কোবাদ ভূঁইয়া, আব্দুর রহমান, গাজিব আঞ্জুম তালুকদার, জামশেদুল ইসলাম রাহাত আতাহার শিহাব এবং আল ফারাবিকে।

ম্যাটেরিয়াল ও ম্যাটালারজিক্যাল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিশেল ইসলাম শেলি বলেন, বুয়েটের আন্দোলন নিয়ে যা আপডেট আছে সবই সাংবাদিক সমিতির পেজ থেকে জানানো হয়। এর বাইরে আর কোনো আপডেট নেই। আপনাদের যা জানার ওখান থেকে জেনে নিন।

উল্লেখ্য, এই সাংবাদিক সমিতিতে টাঙ্গুয়ার হাওরে আটক হওয়া ৩৪ জন্য শিবির নেতাকর্মীদের মধ্য হতে ৫ জন রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা জোরদার করার কোনো দাবি এই দুই ব্যাচের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল না। এমনকি এদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও কোনো কথা বলা হয়নি। উল্টো বলা হয়েছে, তাদের বিচার কার্যক্রম আদালত যেই সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা অনুসারে গ্রহণ করা হবে। বিষয়টিকে স্পষ্টরূপে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনকারীদের পক্ষে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের দ্বিচারিতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য আদালত ও প্রশাসনকে চাপে ফেলতে পরীক্ষা বর্জনের কথা বলা হলেও মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে কোনো চাপ দেয়াতে আগ্রহী নন এই শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে, বুয়েটের বিভিন্ন গ্রুপে সাবেক কিছু শিক্ষার্থী উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনমত গঠনের চেষ্টা করছেন। সেখানে পরীক্ষার হল থেকে এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ, প্রকাশিত সংবাদ বা তার ক্লাসের সহপাঠীদের বক্তব্যও উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয় সেই অভিযোগকারী। উল্টো জানা যায়, এনামুল নামের সেই অভিযোগকারী নিজে শিবিরের সক্রিয় রাজনীতি করতেন, কিন্তু তার সেই বক্তব্যটি বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা হচ্ছে বিশেষ কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে। বিশেষত বুয়েটের আড়িপাতা গ্রুপে এমন একাধিক পোস্ট পাওয়া গেছে যেখানে মৌলবাদীদের হামলায় নিহত আরিফ রায়হান দীপকে নিয়েও মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে তার চরিত্রহরণের চেষ্টা করা হয়। এ বিষয়টিকে ছাত্র শিবিরের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মন্তব্য করেছেন সাবেক অনেক বুয়েটিয়ান।

এদিকে, বুয়েটের ২০ ও ২১তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী যখন পরীক্ষা বর্জনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানায়, একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়টির দুইজন শিক্ষকের কলাম ও সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। যেখানে সকল বক্তব্য ছিল বেশ কাছাকাছি। একটি কলামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আশিকুর রহমান ছাত্ররাজনীতি থাকার সময়কে বুয়েটের অন্ধকার অধ্যায়' বলে অভিহিত করেন। তার লেখায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনকে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। আদালতের বিরুদ্ধে গিয়ে একজন শিক্ষক কীভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা-ক্লাস বর্জন করতে উৎসাহিত করতে পারেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কার্যক্রমকে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এই শিক্ষকের ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের।

অধ্যাপক আশিকুর রহমানকে কলামের বিষয়ে জানতে ফোন দেয়া হলে তিনি কোনো প্রশ্ন শুনতে রাজি নন বলে জানান। তিনি বলেন, যা আছে কলামে আছে। আমি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত নই। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কতদিন ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে তারা চলবে, সে বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে অবগত নয় বলেও মনে করেন তারা।  

এ বিষয়ে আরও চিন্তা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন তারা।