ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও ফজিলত

ঈদের নামাজের পর দুই শিশুর কোলাকুলি

ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও ফজিলত

অনলাইন ডেস্ক

আগামী বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে। ইসলামে ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাবে, যেদিন সব আত্মা-অন্তর (কেয়ামতের দিন) মারা যাবে, সেদিন তার অন্তর মরবে না। অর্থাৎ কেয়ামত দিবসের কঠিন বিপজ্জনক অবস্থা ও মহা আতঙ্কের মধ্যে যখন সবাই ভীতসন্ত্রস্ত ও মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে তখন এই ঈদের রাতে ইবাদতকারী বরং হাসিখুশির মধ্যে কাটাবে।

’ (তাবারানি)

ঈদের রাতের ফজিলত বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুল (সা.) বলেন, রমজান মাসের শেষ রজনিতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার জন্য ক্ষমা ও দানের ফয়সালা করেন। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করেন, ওই রাতটিই কি শবে কদর? রাসুল (সা.) বলেন, না। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে কর্মচারী যখন কাজ বুঝিয়ে দেয় তখন তার পাওনাও পরিশোধ করে দেওয়া হয় (মুসনাদে আহমদ)।

গণমাধ্যমে মাওলানা মিজানুর রহমানের লেখায় বলা হয়েছে,  রাসুল (সা.) বোঝাতে চেয়েছেন, রোজাদারের আমল এদিন শেষ হয়।

আর তখন আল্লাহ তায়ালার ঘোষণামাফিক যার যা প্রতিদান তা দেওয়া হয়। তাই ঈদের রাতে তওবা, ইস্তিগফার ও ইবাদতে মশগুল থাকা চাই। এ প্রসঙ্গে ‘আল মাওসূয়াতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়া’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মুস্তাহাব হচ্ছে, উভয় ঈদের রাতে আল্লাহর ইবাদত, জিকির, তেলাওয়াত ও তাসবিহ-তাহলিলে মশগুল থাকা। ’

ঈদের দিনের আনন্দ বিষয়ে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, একদা মিনায় অবস্থানের দিনে হজরত আবু বকর (রা) তার কাছে হাজির হলেন। তখন আয়েশার কাছে দুটি বালিকা বসে দফ বাজিয়ে গান করছিল। অপর বর্ণনামতে, বালিকাদ্বয় সেই গান গাচ্ছিল যা আনসারগণ বুয়াস যুদ্ধে প্রেরণা ও উত্তেজনার জন্য গেয়েছিল। তখন নবী (সা.) নিজ কাপড়ে মুখ ঢেকে শুয়েছিলেন। হজরত আবু বকর (রা.) বালিকাদ্বয়কে ধমক দিলেন। তখন রাসুল (সা.) নিজ মুখম-ল হতে কাপড় সরালেন এবং বললেন, হে আবু বকর! এদের ছেড়ে দাও! (অর্থাৎ করতে দাও)। কারণ এটা ঈদের দিন। অপর এক বর্ণনায় এমনটি রয়েছে, ‘হে আবু বকর! প্রত্যেক জাতির জন্য আনন্দ-উৎসব, এটা আমাদের আনন্দ উৎসবের দিন। ’ (মেশকাত : ১৩৪৮)

নবীজি (সা.)-এর ঈদের নামাজ

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার দিনে ঈদগাহে যেতেন, তারপর প্রথম কাজ হিসেবে তিনি নামাজ পড়াতেন। তারপর নামাজ শেষে মুসল্লিদের মুখোমুখি দাঁড়াতেন এবং লোকজন নিজ নিজ স্থানে সারিবদ্ধভাবে বসা থাকতেন। তখন নবীজি (সা.) তাদের ওয়াজ-উপদেশ দিতেন, নসিহত-অছিয়ত করতেন এবং প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করতেন। কোথাও যদি সৈন্য প্রেরণের ইচ্ছা করতেন, তাদের বাছাই করতেন অথবা যদি কাউকে বিশেষ কোনো নির্দেশ দেওয়ার হতো তা দিতেন। এভাবেই ঈদের সালাত ও খুতবা শেষে বাড়ি ফিরে যেতেন (মেশকাত : ১৩৪২)। মহান আল্লাহ উক্ত সব আমল-ইবাদতে আমাদের অংশগ্রহণের এবং সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো মেনে চলার তওফিক দিন।

পাঁচ দিন রোজা রাখা নিষেধ

রোজা ইসলামের অন্যতম বিধান। রোজা পালনকারীদের জন্য অনেক সওয়াব ও পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে কুরআন ও হাদিসে। আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস তথা রমজানে রোজা রাখা ফরজ। বাকি এগারো মাস সুন্নত, মুস্তাহাব ও নফল রোজা রাখার নিয়ম রয়েছে। তবে বছরে পাঁচটি দিন এমন রয়েছে, যে দিনগুলোয় রোজা রাখা হারাম বা নিষিদ্ধ। দিনগুলো হলো-১. ঈদুল ফিতরের (১ শাওয়াল) দিন ২. ঈদুল আজহার (১০ জিলহজ) দিন ৩. ঈদুল আজহার পরের তিন দিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখের দিন। এই পাঁচ দিন সব ধরনের রোজা রাখা হারাম বা নিষিদ্ধ। অবশ্য তামাত্তু বা কিরানকারী হাজিগণ যদি কোনো কারণে কুরবানি দিতে অপারগ হন তা হলে এর পরিবর্তে মক্কায় জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে রোজা রাখবেন।
news24bd.tv/আইএএম